পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર&br বিভূতি-রচনাবলী আমন্ত্রণও জানালেন। খাওয়ার ব্যবস্থাও দুপুরে বেশ ভালোই হোল—মাছের মুড়ে, দই, দুধ, সন্দেশ ইত্যাদি। কবিরাজ খুব খুশী”। জমিদারবাবু বেশ প্রফুল্ল । সেই রাত্রে একটা আশ্চৰ্য্য ঘটনা ঘটলো। এমন ধরনের ব্যাপার কাশী কবিরাজ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি । রোগীর অবস্থা ভালো থাকার দরুন সেদিন আর বেশি খাটুনি ছিলো না। সকাল সকাল খেয়েদেয়ে শয্যা আশ্রয় করলে কিন্তু ঘুম আসতে দেরি হোতে লাগলো। কোথাকার ঘড়িতে একটা বেজে গেলো ঢং করে । ঠিক সেই সময়ে দেখলে কাশী কবিরাজ, সেই ঘোমটাপর বৌটি দেউড়ি দিয়ে ঢুকে অন্দরের দিকে চলেছে। বলতে কি কাশী কবিরাজের বড় বিস্ময়বোধ হোল। কি সাহস মেয়েটার ! এত রাতে মাঠের মধ্যে দিয়ে চলে আসতে ভয়ও কি করে না ? মিনিট পনেরো কেটে গেলো, কি বিশ মিনিট । তারপর কাশী কবিরাজকে আশ্চৰ্য্য স্তম্ভিত করে দিয়ে সেই বৌটি ওর ঘরে এসে ঢুকলো । আমি বল্লাম—আপনার ঘরে ? —হঁ্যা, একেবারে আমার সামনে । —ঘরে আলো ছিলো ? —বাড়ীতে রোগী থাকার দরুন আমার ঘরে সারারাতই একটা হারিকেন জলে । ঘরে ঢুকে মেয়েটি মুখের ঘোমটা অনেকখানি তুলে কবিরাজের দিকে চাইলো। বেশ সুন্দরী মহিলা । দেখলে সন্ত্রমের উদ্রেক হয়, এমনি চেহারা। কাশী কবিরাজকে বল্লে—তুমি এখানে থেকে না, চলে যাও এখানে থেকে । বিস্মিত ও স্তম্ভিত কাশী কবিরাজ মেয়েটির মুখের দিকে চেয়ে বল্লে—আপনি কে মা ? —আমি যেই হই, তুমি এখান থেকে যাবে কি না ? —ম, আমি চিকিৎসক । রুগী দেখতে এসেচি । আমার কাজ না সেরে আমি কি করে যাবো ? —তুমি এ রুগী বাচাতে পারবে না। কাল সকালে তুমি চলে যাও এখান থেকে— —কি করে আপনি জানলেন রুগী বাচবে না । —আমি ওর মা। ওর সৎমা ওকে খুব কষ্ট দিচ্চে, সে কষ্ট আমি দেখতে পারচিনে—আমি ওকে নিয়ে যেতে এসেচি–নিয়ে যাবোই। তুমি তাকে কিছুতেই রাখতে পারবে না— কাশীনাথ কবিরাজ তখনো ব্যাপারটা ঠিক যেন বুঝে উঠতে পারেনি। সে আমতা-আমতা করে বল্লে— আপনি কোথায় থাকেন ? —আমি মারা যাওয়ার পরে আজ চার বছর হোল ওর বাবা আবার বিয়ে করেচে । আমার সেই সতীন ওকে বড় যন্ত্রণ দিচ্চে । আমি সেখানে শাস্তিতে থাকতে পারি না— খোকা আপন মনে কঁদে । আমি শুনতে পাই—ওকে আমি নিয়ে যাবোই। তুমি কেন অপযশ কুড়োবে ? ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাও— কাশীনাথের সমস্ত শরীর হিম হয়ে গিয়েছে যেন । কি ব্যাপারটা সামনে ঘটেচে, তার যেন কোনো ধারণাই নেই, তবুও সে হাতজোড় করে বল্লে—ম, একটা কথা। আমি জমিদারবাৰু আপনার স্বামীকে সব বলি। তিনি র্তার ছেলেটিকে বড় ভালবাসেন । ছেলেটিকে আপনি নিয়ে গেলে তার কি অবস্থা হবে, সেটা তো আপনার বিবেচনা করা উচিত। বৌটি বললেন–র্তার এ পক্ষের ছেলেমেয়ে হবে। র্তাদের নিয়ে থাকবেন তিনি— — কথা বলবেন না, মা । আপনি তার কথা চিন্তা না করলে কে চিন্তা করবে ? সব