পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ኟዓ8 বিভূতি-রচনাবলী s —ওই একটা কথার কথা ধরে । —ভারি মজার কথা বলেন আপনি কিন্তু । হাসি পায় এমন ! —সে যাক, তাহোলে তালের বড় হচ্ছে কবে ? —সেই যেদিন যাবেন, তার আগের দিন। তবে শুকুন একটা কথা বলি। আপনার জন্যে ছোট একট। তাল এনে রেখেচি । সেইটেই গোলা করে অল্প চাটি বড় আপনাকে ভেজে দেবো এখন সন্দেবেলা । আমি ব্যস্ত হয়ে বল্লাম—ন না দীপু। লক্ষ্মী, আমার কথা শোনো। আমার জন্তে আলাদা করে তোমায় কিছু করতে হবে না। কেন করতে যাবে তা ? আমি ওতে রাগ করবো। না, করবে না । দীপু না দাড়িয়ে চলে গেল । ও কখন আসে, কখন যায়, বোঝা যায় না। না, এর সঙ্গে পারা যাবে না। আমার কোনো দরকার নেই তালের বড়ায় । ও কি শুনবে কোনো কথা ? যেমন বাবা, তেমনি মেয়ে । অতিথিদের ওপর ভারি রাগ হোল আমার । এসেচ নিজেদের খাজনা আদায় করতে, বিষয়-আশয় দেখতে, তা পরের ঘাড়ে কেন রে বাপু ? মানুষের একটা চক্ষুলজ্জ থাকা উচিত। বাবা আর মেয়েকে সরল আর ভালোমানুষ পেয়ে—হোত অন্য জায়গা, এতদিন সেখানে বসে আজ পায়েস, কাল রুইমাছ খেতে কেমন দেখতাম । অতিথিদের একজনের নাম জনাৰ্দ্দন সরকার, ধূৰ্ত্ত দৃষ্টি চোখে, কুট বিষয়ী আর মামলাবাজ, দেখলেই বোঝা যায়। আমায় বিকেলের দিকে ডেকে বল্লে—ও ডাক্তারবাবু, বলি কি হচ্চে ? নীরস স্বরে বল্লাম—কিছুই না। বসে আছি । —এখানে রুগীপত্তর কেমন ? —মনদ না । —কতদিন আছেন এখানে ? ভালো বিপদ! আমার গল্প করবার ইচ্ছে নেই ওর সঙ্গে ! আছি না আছি, সে খোজে কি দরকার তোমার ? তোমার গলা জড়িয়ে ধরে সে সব বর্ণনা করবার ইচ্ছেও আমার নেই। বল্লাম—কেন বলুন তো ? —না, সেবার এসে আপনাকে দেখিনি কিনা তাই । —আপনারা ফি-বছর আসেন বুঝি এখানে ? —ত আমরা আসচি আজ দশ-এগারো বছর। নরসিংহপুরে আমার তালুক আছে। এই সময় খাজনা আদায় করতে আসি । আমরা ক’জনই আসি। সকলেরই বিষয় আছে পাশাপাশি মৌজায়। এসে দত্তমশায়ের বাড়ি উঠি। উনি স্বজাতি আর বড় ভালো লোক। আর কোথায় যাই বলুন । —তা তো বটেই। কোথায় আর যাবেন । আজকাল কেউ কাউকে জায়গা দেয় না। সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েচে । আমি ঘরের দাওয়ায় বসে ভাবচি এইবার রান্নার আয়োজন করা যাক। এমন সময় দীপু হাসিমুখে দাওয়ায় উঠে একটা পাথরের বাটি আমার সামনে রেখে বল্লে—এই নিন। আলো জালেনলি ? বল্লাম—ন, এই ভাত রান্না করবো ভাবচি এখুনি। এবার জালাবো। এতে কি ?