পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৬ বিভূতি-রচনাবলী আর চেনা যায় না । আমায় দেখে দীপুর রোগশীর্ণ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বিছানার পাশে ওর হাত দুটি ধরে বল্লাম—কি হয়েচে দীপু ! দেখি হাত ? ও বল্লে—কিছু হয়নি। —তবে এমন চেহারা হয়েচে কি করে ? দাড়াও দেখি। দত্তমশায় বোধ হয় অতিথির জন্যে চা ও খাবারের যোগাড় করতে বাইরে গেলেন । আমি ওর হাত দেখলাম । জর রয়েচে নাড়িতে । পুরনো ম্যালেরিয়া জর, ভালো চিকিৎসা হয়নি। সংসারের খাটুনি এক দিনের জন্তে কমাই যায়নি। অতিথি তো লেগেই আছে। অনুমানে বুঝলাম সব । শরীর ওর একেবারে ভেঙে গিয়েচে ? দীপু আমার দিকে তাকিয়ে বললে—কি রকম দেখলেন ? —ভালো। সেরে যাবে। গোটাকতক ইনজেকশন নিয়মিত দিলেই হবে। শক্ত অমুখ কিছু না । —একটা কথা বলবো ? —কি ? —আপনি এসে আমাদের বাড়ি আবার থাকুন না কেন ? —আচ্ছ, আচ্ছ, সে হবে। দাড়াও একটা ইনজেকৃশন দিতে হবে এখুনি । —দেবেন এখন। আপনি আসবেন বলুন ! সত্যি, বলুন ! দীপুকে বাচাতে পারিনি। শেষ পর্য্যন্ত রাণাঘাট মিশন হাসপাতালে আমি ও দত্তমশায় নিয়ে গেলাম ওকে। শেষ দিন আমার হাত ধরে বলেছিল—আমি সেরে উঠলে আমাদের বাড়ি এসে থাকবেন, সত্যি ? অনেক রুগী হবে এবার— চূৰ্ণী নদীর ধারে ওর সৎকার করার পরে আমরা দুজনে ফিরে এলাম দেশে। দত্তমশায় আমার হাত ধরে র্কাদতে লাগলেন । বললেন—একলা থাকতে পারবো না ডাক্তারবাবু। আমার বাড়ি এসে আপনাকে থাকতে হবে । আমার আর কেউ নেই । দীপুকে কথা দিয়েছিলাম হাসপাতালে। দত্তমশায়ের বাড়ি এসে আবার ডাক্তারখানা খুলেচি। দীপুর মুখের কথা সত্যি হয়েচে বটে, আজকাল রুগীর ভিড় খুব। বশেলের বিড়ম্বন৷ ‘বশেল” অর্থাৎ বড়শি ও ছিপ দিয়ে মাছ মারতে যে পটু। এক কথায় ওস্তাদ মৎস্তশিকারী। লাঠি যে চালাতে পটু সে হোল লেঠেল, ছিপ-বড়শি বাইতে যে পটু সে হোল বর্শেল । এই সামান্ত ভূমিকার দরকার ছিল এই জন্তে যে অনেকেরই বিশেল” কথাটির অর্থ জানা নেই হয়তো—প্রসঙ্গক্রমে একথাও বলা প্রয়োজন যে, যেমন লাঠি হাতে নিয়ে সবাই বেড়ায়, কিন্তু সবাই লেঠেল নয়, তেমনি ছিপ দিয়ে মাছ সবাই ধরে, কিন্তু তারা বর্শেল নয়। o আমাদের গায়ের রামহরি হোড় নামজাদ বর্শেল, আশপাশের দশখানা গায়ের মধ্যে র্তার নাম বর্শেল হিসাবে প্রসিদ্ধ । “তার’ ব্যবহার করলাম এজন্তে যে, রামহরি বনেদী ব্রাহ্মণ-ঘরের সন্তান আমাদের গায়ের-লম্বা-চওড়া দশাসই চেহারা, বড় বড় গোফ, চোখ বড় বড় ও রাঙা । আমরা ছেলেপুলের দল তাকে যথেষ্ট ভয় করে চলি, বড় রাশভারী লোক। আগে অবস্থা খুব ভাল ছিল, এখন বিষয়-সম্পত্তির সামান্তই অবশিষ্ট আছে ; তারই আয়ে অতি কষ্টে সংসার চলে ।