পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ >* বাসায় আসে। সে একবেলা আমাদের এখানে ছিল, যাবার সময় বাবা টাকা দিতে গিয়েছিলেন, সে নেয়নি। সন্ন্যাসী আমার দেখেই কেমন একটু বিস্মিত হ’ল, কাছে ডেকে তার পাশে বসালে, আমার মুখের পানে বার বার তীক্ষ দৃষ্টিতে চাইতে লাগল—আমি কেমন একটু অস্বস্তি বোধ করলাম, তখন সেখানে আর কেউ ছিল না । তারপর সে আমার হাত দেখলে, কপাল দেখলে, ঘাড়ে কি দাগ দেখলে। দেখা শেষ করে সে চুপ ক’রে রইল, কিন্তু চলে যাবার সময় বাবাকে নেপালী ভাষায় বললে—তোমার এই ছেলে মুলক্ষণযুক্ত, এ জন্মেছুে কোথায় ? বাবা বললেন—এই চা-বাগানেই । সন্ন্যাসী আর কিছু না ব'লেই চলে যাচ্ছিলেন, বাবা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন—ওর হাত কেমন দেখলেন ? সন্ন্যাসী কিছু জবাব দিল না, ফিরলও না, চলে গেল । - আমি কিছু বুঝতে পেরেছিলাম। আমি মাঝে মাঝে নির্জনে যে নানা অদ্ভুত জিনিস দেখি সন্ন্যাসী সেই সম্বন্ধেই বলেছিলেন। সে যে আর কেউই বুঝবে না, আমি তা জানতাম। সেই জন্তেই তো আজকাল কাউকে ও-সব কথা বলিওনে । পচাং চা-বাগানের কেরানীবাবু ছিলেন বাঙালী। তার স্ত্রীকে আমরা মাপীমা বলে ডাকতাম । তিনি র্তার বাপের বাড়ি গিয়েছিলেন রংপুরে, সোনাদা স্টেশন থেকে ফিরবার পথে মাসীমা আমাদের বাসায় মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এলেন । মা না খাইয়ে তাদের ছাড়লেন না, খেতেদেতে বেলা ছুপুর গড়িয়ে গেল। আমাদের বাসা থেকে পচাং বাগান তিন মাইল দূরে, ঘন জঙ্গলের মধ্যবর্তী সরু পথ বেয়ে যেতে হয়, মাঝে মাঝে চড়াই উৎরাই । আমি সীতা ও দাদা তাদের সঙ্গে এগিয়ে দিতে গেলাম—পচাং পৌছতে বেলা তিনটে বাজল । আমরা তখনই সবাই চলে আসছিলাম, কিন্তু মাসীমা ছাড়লেন না, তিনি ময়দা মেখে পরোটা ভেজে, চা তৈরি করে আমাদের খাওয়ালেন ; রাত্রে থাকবার জন্তেও অনেক অমুরোধ করলেন, কিন্তু আমাদের ভয় হ’ল বাবাকে না বলে আসা হয়েছে—বাড়ি না ফিরলে বাবা আমাদেরও বকবেন, মাও বকুনি খাবেন । বনজঙ্গলের পথ হ'লেও আরো অনেকবার আমরা মাসীমার এখানে এসেচি । আমি একাই কতবার এসেচি গিয়েচি। আমরা যখন রওনা হই তখন বেলা খুব কম আছে। অন্ধকার এরই মধ্যে নেমে আসছে—আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, ঝড়বৃষ্টির খুব সম্ভাবনা । পচাং বাগান থেকে আধ মাইল যেতেই ঘন জঙ্গল— বড় বড় ওক্ আর পাইন—আবার উৎরাইয়ের পথে নামলেই জঙ্গল অন্য ধরনের, আরো নিবিড় গাছের ডালে পুরু কম্বলের মত শেওলা ঝুলছে, ঠিক যেন অন্ধকারে অসংখ্য ভূত-প্রেত ডালে নিঃশব্দে দোল খাচ্ছে। সীতা খুশির মুরে বললে— দাদা, যদি আমাদের সামনে ভালুক পড়ে ?...হি হি— - সীতার ওপর আমাদের ভারি রাগ হ’ল, সবাই জানে এ পথে ভালুকের ভয় কিন্তু সে কথা ওর মনে করিয়ে দেওয়ার দরকার কি ছিল ? বাহাদুরি দেখাবার বুঝি সময় অসময় নেই ? অন্ধকার ক্রমেই খুব ঘন হয়ে এল, আর খানিকট গিয়ে সরু পায়ে-চলার পথটা বনের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গেল—সঙ্গে সঙ্গে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হল—তেমনি কনকনে ঠাণ্ড হাওয়া । শীতে হাত-পা জমে যাওয়ার উপক্রম হ’ল । গাছের ডালে শেওলা বৃষ্টিতে ভিজে এক ধরনের গন্ধ বার হয় এ আমরা সকলেই জানতাম, কিন্তু সীতা বার বার জোর ক'রে বলতে লাগল ও ভালুকের গায়ের গন্ধ —দাদা আমাদের আগে আগে যাচ্ছিল, মাঝখানে সীত, পেছনে আমি —হঠাৎ দাদা থমকে দাড়িয়ে গেল। সামনে একটা ঝর্ণ—তার ওপরটার কাঠের গুড়ির পুল ছিল-পুলটা ভেঙে গিয়েছে। সেটার তোড় যেমন বেশী, চওড়াও তেমনি। পার হতে جسس ft. a.s