পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ՀԵՏ সতীশের মা বল্লেন-দেখ দেখি বাবা খগেন, এত বলছি—যা, বিক্রি করে দে—েতা আমার কথা যদি ও শুনেচে । সতীশ বল্ল—বলছ কি মা, ভয় পেয়ে পনরো-শ টাকার খাটটা বিক্রি করব ? খাওয়া-দাওয়৷ সেরে রাত্রি জাগবার সাজসরঞ্জাম নিয়ে আমরা দুই বন্ধুতে খাটের ঘয়ে গিয়ে বসলাম । আমার হাতে দীনেন রায়ের ডিটেকটিভ উপন্যাস, আর সতীশের হাতে "হেলথ, অ্যাণ্ড হাইজিন" । রাত্রি ক্রমে ক্রমে বাড়তে লাগল। ঠিক হোল, আগে সতীশ ঘুমুবে আর আমি জাগব। তারপর সতীশ জাগবে, আর আমি ঘুমুৰ । বইখানা খুলে আমি বসে রইলাম। পড়তে পারলাম না একটি অক্ষরও, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম ; চারদিকে কান খাড়া করে বসে রইলাম ভয়ে ভয়ে। এতটুকু শব্দে থেকে থেকে চমকে উঠছিলাম। ঐ বুঝি অপদেবতা আমার গলাটি দিলে টিপে ! কাদের বাড়ির ঘড়িতে সুর করে দুটো বেজে গেল। হঠাৎ মনে হোল, কে যেন বাইরের বারান্দায় চলে বেড়াচ্ছে! তার পদশব বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠল । আমার সারা শরীর ডোল দিয়ে উঠল, লোমগুলো খাড়া হয়ে উঠল । 怨 হঠাৎ সশব্দে খোলা জানলাটা বন্ধ হয়ে গেল। মুহূৰ্ত্তে বোধ হোল, আমি যেন শূন্তে উঠে গেছি, আমার জ্ঞান যেন লোপ পেয়ে গেছে । আমি মৃত না জীবিত, তাও ঘোর সন্দেহের বিষয় হয়ে উঠল। আমি সভয়ে ডেকে উঠলাম—সতীশ । সতীশ ! সতীশ ধড়মড় করে উঠে বসল—ব্যাপার কি খগেন ? ব্যাপার কি ? ভয়ে ও বিস্ময়ে আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুলো না। সতীশ আমার দু কাধে হাত দিয়ে নাড়া দিয়ে ডাকল—খগেন ! খগেন । আমি আঙুল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বল্লাম—ও ! যা ভয় পেয়েছিলাম ! –তা তো বুঝতেই পারছি। যাক, আর তোমায় জাগতে হবে না। তুমি ঘুমোও, আমি জেগে বসে আছি । —ন, আমারও ঘুমিয়ে কাজ নেই। আর তা ছাড়া ঘুমও আমার হবে না আদৌ। —ভাতু কোথাকার! তারপর ভীতু আমি ও সতীশ দেওয়ালে ঠেসান দিয়ে বসে রইলাম। আমরা দু’জনেই নিঃশব্দে জেগে রইলাম। কেউই একটিও কথা কইলাম না। আমি খোলা জানলা দিয়ে বাইরের টুকরো আকাশের পানে একদৃষ্টে তাকিরে রইলাম। অসংখ্য তারকা মিটমিটু করে জলছিল। বোধ হোল, তারা যেন আমাদের বিপদে ফিক-ফিক হাসছে! আমরা চুপটি করে বসে আছি, এমন সময়ে হঠাৎ ইলেকটিকের আলো দপ, কয়ে নিবে গেল। আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম— কে ? বোধ হোল কে যেন মেন সুইচ, বন্ধ করে দিয়েছে ! হঠাৎ এক উৎকট হাসিতে সারা ঘর ভরে উঠল। অমন হাসি আমি জীবনে কাউকে হাসতে দেখিনি। হাসি যেন আর শেষ হতে চায় না ! সে কি বিকট শব্দ !--হাঁ-হাঁ-হাঁ-হি-হি-হি-হোহো-হো-হে-হে হে • • বোধ হোল, কে যেন ঠিক দরজার কাছে হেসে খুন হচ্ছে! আমি শিউরে উঠলাম। সতীশ চট করে টর্চটা দরজার ওপর ফেলল। তাতে হিতে বিপরীত হোল। বোধ হোল কে যেন দরজার ঠিক বিপরীত দিকে জানলাটার ধারে বসে আৰ্ত্তকণ্ঠে বিনিয়ে-বিনিয়ে কেঁদে মরছে ! देि. ब्र. 8-x *