পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপহলুদ ২৯১ তারপর শুনলাম—রাত্রি চারটে নাগাদ আমরা নাকি দুজনে সদর দরজায় এসে মাটিতে পড়ে গিয়ে গেীগে করতে থাকি। সতীশের মা বাইরে এসে এই অবস্থা দেখে চীৎকার করে কাতে আরম্ভ করে দেন। পাকা তিন ঘণ্টা তদারক করার পর আমাদের জ্ঞান হয়। ডাক্তার এসে বলে গেছিল—ভয়ের কোন কারণ নেই। একটা সাড়ন শক্‌' (sudden shock ) আর কি ! জ্ঞান হলে একটু ব্রোমাইড দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। সতীশের জ্ঞান হতে, সেও সেই আমারই মত অবিকল উদ্ভট স্বরে কথা বলে গেল। আমি বিস্ময়ে সকলের পানে তাকিয়ে রইলাম । সতীশের মা বল্লেন—আগে ঐ সৰ্ব্বনেশে খাট বিদায় কর বাবা! খাট-বিক্রির একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হোল । পরের দিন বিকালে অসংখ্য লোকে বাড়ি ছেয়ে গেল। খাটটা বিক্রি হোল—শেষ পর্য্যন্ত দু'হাজার টাকায়। এক ইহুদী সেটা কিনে নিয়ে গেল । যাক, মাঝ থেকে কিছু লাভ হোল। বিক্রি না হলে শেষ পর্য্যন্ত হয়তে ওটা বিলিয়ে দিতে হোত । এখনও মাঝে মাঝে সেই রহস্যজনক থাটের কথা ভাবি । এক-একবার মনে হয়—সেটা এখন কার কাছে আছে, খোজ করি। সেই অতৃপ্ত আত্মা—যাকে তার দুর্দান্ত স্ত্রী কোন ক্রমেই ব্যাধির ভয়ে খাটের ওপর জীবিত অবস্থায় শুতে দেয়নি, সে কি আজি তৃপ্ত হয়েছে ? না, এখনও সে ঐ খাটের পিছনে প্রতি রাত্রে ঘুরে ঘুরে মরে—কাউকে ওর ওপর শুতে দেবে না বলে ?