পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ আজ এই ডায়েরটা প্রথম আরম্ভ করলুম, জানিনে কতুদিনে শেষ হবে, কিন্তু এই জন্তে আরম্ভ করলুম যে সব দিক থেকে আজকার দিনটি আমার জীবনে একটি স্মরণীয় দিন । দুঃখের বিষয় এই যে এরকম দিন বেশী আসে না জীবনে। আমি এই ভায়েরটা লিখব এমন ভাবে যে আমার মনের সকল গোপনীয় কথাই এতে থাকবে, কিছু চেপে রাখব না। কাজেই কথাগুলো সব লিখতে হবেই। অনেককাল আগে, আজ প্রায় আঠারো বছর আগে এই দিনটিতে পূজোর ছুটি উপলক্ষে গৌরীর সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি গিয়েছিলুম, তখন নতুন বিয়ে হয়েচে, তার আগে কতকাল দেখা হয়নি। গিয়েছিলুম অবিশুি আগের দিন, কিন্তু দেখা হয়নি, বেশী রাত হয়ে গিয়েছিল বলে। আজই রাত্রে প্রথম দেখা হয়। সেই পূজোর সময়েই তার বাপের বাড়ি থেকে নিতে এল তাকে, আমরা পাঠিয়ে দিলুম, কিন্তু মাসখানেক পরে বাপের বাড়িতে সে মারা গেল । সেই জন্তেই আজকার দিনটি* আমার এত মনে আছে, থাকবেও চিরকাল । আর একটা ব্যাপার, যে জন্যে আজকার দিনটি স্মরণীয়, সে হচ্ছে আজ বহুকাল পয়ে আমাদের দেশে বন্যার জলে নৌকো করে বেড়িয়ে এসেচি। আমার জ্ঞানে এমন বস্ত কখনও দেখিনি। কুঠির মাঠে সাতার-জল, সেখানকার বন-ঝোপের মাথাগুলো মাত্র জেগে অাছে, যেখানে আর-বছর ব্যায়াম করতুম বিকেলে, যেখানে বসে কেলেকোড়ার ফুলের স্ববাস উপভোগ করতুম, সে-সব জায়গা দিয়ে বড় বড় নৌকো চলেছে। আমি এমন কখনও দেখিনি, চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতুম না হয়তো ! ওবেলা আজ আমি, ন-দি, রামপদ, পিসীমা, জগে৷ সবাই মিলে গাবতলার কাছে নৌকোতে উঠে কুঠির মাঠ দিয়ে, বেলেডাঙা নতিডাঙা হয়ে আবার বাঁশতলার ঘাটে ফিরে এলুম। ওরা চলে গেল ঘাটে নেমে বাড়িতে। আমি চালকীর জোলের মধ্যে ঢুকে জোলের ঘাটে নৌকো থেকে নামলুম। গাবতলা ! যেখান থেকে নৌকোয় উঠবার কল্পনা স্বপ্নেও কখনো করতে পারা যেত না ! তারপর বৈকালে খুকুর সঙ্গে দেখা করতে গেলুম আজ চার মাস পরে। সে কি আননা যাবার সময়ে ! কত গল্প এই চার মাসে জমা হয়ে রয়েচে, ওকে সেসব গল্প করতে হবে। প্রথমে খুড়ীমা এলেন, তারপরেই খুকু এল। তাকে বই কাপড় দিলুম, মুপুরিগুলো পেয়ে খুব খুশি । শ্রাবণ মাস থেকে সুপুরিগুলো ওর জন্যে রেখে দিয়েচি বাক্সের মধ্যে, দিল্লীর বেশ ভাল মশলা মাখানো সুগন্ধি স্বপুরি-কুচোনো । অনেক গল্প-গুজব হোল সন্ধ্যা পর্য্যন্ত । ওরা বারাকপুর যাবে পূজোর পরেই। আমাদের বাসায় ঢুকবার জো নেই। ভেলা করে গিয়ে খোকা বাসার চাবি খুলে মশারি বার করে নিয়ে এল। কারণ পূজোতে বাইরে বেড়াতে গেলেই মশারি লাগবে। তারাভরা অন্ধকার আকাশের নীচে দিয়ে রাত্রের non-stop ট্রেনটা ছুটে এল। আমি বসে বসে আজ সারাদিনের কথাটা ভাবছিলুম। সকালে সেই কাকু মোড়লের তামাক খাওয়ানো-ডেকে, দারিঘাটার পুলের নীচে বস্তার জলের স্রোত, হরিপদদার স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদপ্রাপ্তি গ্রামে ঢুকেই, জল, বেড়াতে যাওয়া, চালকী, খুকুর সঙ্গে দেখা—এই সব। এখন রাত ১২টা। বসে ডায়েরীট লিখচি । শিলং বেড়াতে যাব বলে গোছগাছ করতে বড় ব্যস্ত আছি। ক’মাস ধরে কি ছুটোছুটিটাই করে বেড়াচ্চি কলকাতায় । এখানে মিটিং ওখানে engagement, এখানে পার্টি, হয়তো আসলে দেখচি যে টাকাকড়ি নিতান্ত মনা আসচে

  • ২৫শে আশ্বিন