পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨જે૭ বিভূতি-রচনাবলী না, কিন্তু অনুভূতির বৈচিত্র্য ও গভীরতা ওখানে কৈ ? উত্তেজনা থাকে বটে কিন্তু সত্যিকার আনন্দ নেই। এই যে শরতের অপূৰ্ব্ব রূপ এবার—এমন রূপ দেখতেই পেলুম না, গাছপালার নবীন সরসতা উপভোগ করতেই পেলুম না, কলকাতায় এই হৈ-চৈ গণ্ডগোলপূর্ণ জীবনের জন্তে । তাই কাল সারাদিন এখানে ওখানে শত কাজ ও ব্যস্ততার পরে ফিরে এসে রাত্রে শুয়ে ভাবছিলুম এ হৈ-চৈএর সার্থকতা কি ? অামার মনের একটা ব্যাপার আছে বরাবর লক্ষ্য করে দেখে এসেচি—সেটা মাটি ও গাছপালার সাহচর্য্যে বড় ভাল থাকে । সেখানে মন অন্ত এক রকমই থাকে, শহরে শত কৰ্ম্মব্যস্ততার মধ্যে তা হয় না। আনন্দ পাইনে, আমোদ পাই । শাস্ত অনুভূতি নেই, উত্তেজনার প্রাচুর্য্য আছে। অনেকে বলে—এই তো জীবন! পুতুপুতু মিন্‌মিনে জীবন আবার জীবন নাকি ? এই রকমই তো চাই ! অভিজ্ঞতার দিক থেকে এ শহরের জীবনে অনেক কিছু পাবার ও নেবার আছে বটে স্বীকার করি, কিন্তু মনন ও ধ্যানের অবকাশ নেই। প্রকৃতির সঙ্গে যোগ না রাখলে হয়তো অপরের চলতে পারে, কিন্তু আমার তো একেবারেই চলে না । কি করচি এসব করে ? কার কি উপকার করচি ? কারোরই না। আমার আগে কত লোকে এরকম হৈ-চৈ করে বেড়িয়ে গিয়েছে, কত মিটিংএর সভাপতিত্ব করেচে, কত সাহিত্যসম্মেলনের পাগু হয়েচে, কত ব্যাঙ্কে কত চেক্ কেটেচে—কোথায় তারা আজ ? কে চেনে আজ তাদের ! গভীর অনুভূতির আনন্দ জীবনে সার্থকতা আনে—অন্ততঃ আমার । অপরের কথা জানিনে, কিন্তু আমি ওর চেয়ে বেশী আনন্দ কিছুতেই পাইনে। এত কোলাহলের মধ্যে থেকে বড় কোলাহল-প্রিয় হয়ে উঠেচি বটে, কিন্তু এ আমি সত্যিই ভালবাসিনে। আমার মন ভেতরে ভেতরে হাপিয়ে উঠচে একটুখানি নীল আকাশের জন্তে, শরতের বনভূমির, মটর লতার ফুল ও বনসিমের ঝোপের জন্তে, কাৰ্ত্তিকের প্রথমে গাছপালার, বনতারা ফুলের সে অপূৰ্ব্ব সুগন্ধের জন্তে । কাল যখন আসাম মেলে বেরুতে যাব, তখন কলকাতায় এল ভয়ানক বৃষ্টি । একটা বুড়ে রিকশাওয়ালাকে বললুম আমায় মির্জাপুর স্ট্রটে নিয়ে চল। সে কাল ও বোবা । তাকে ধমক দিতে দিতে মেস পর্য্যন্ত নিয়ে এলুম, তারপর মালপত্র নিয়ে স্টেশনে আসতে আসতে তার রিকশার চাকা গেল ভেঙে। তাকে দিলুম মাত্র দু আনা । সে প্রতিবাদ না করে নীরবে চলে গেল। তার প্রতি এই নিষ্ঠুর ব্যবহার করে যে কতটা অন্তায় করলুম, তা বুঝলুম পরে। যত ভাল দৃশ্ব দেখি ততই সকলের আগে আমার মনে পড়ে রিকৃশাওয়ালার সেই করুণ মুখটা। আসাম মেলে আসবার সময় দেখলুম আড়ংঘাটা ছাড়িয়ে রেলের দুধারে বহুদূর পর্যন্ত বস্তার জলে ডুবে আছে। ঠিক আমাদের দেশের মত বন্যা এসেচে এখানেও, সৰ্ব্বত্রই এবার বন্ত, এ পথে ১৯২২ সালের পরে আর কখনও আসিনি, এবং হাডিঞ্জ ব্রিজ পার হইনি ১৯২১ সালের পরে। তিস্তা ব্রিজ পার হইনি ১৯০৬ সালের পরে আর কখনও । সেই এসেছিলুম বাবার সঙ্গে রংপুরে, তখন আমি আট-ন বছরের বালক। কত জল তার পরে গঙ্গা দিয়ে বয়ে চলে গিয়েচে । (ইংরজি ইডিয়মটি বড় লাগসই, ব্যাহার করবার প্রলোভন সংবরণ করতে পারলুম না। ) লালমনিরহাটে এলুম রাত তখন ১১টা। এখানে খুকুর খুড়তুতো ভাই থাকে, কিন্তু এত রাত্রে কে তার খোজ করে ? বেজায় ভিড় ট্রেনে, তবুও শোবার একটু জায়গা পাওয়া গেল । গোপোকগঞ্জ স্টেশন, বাংলার সীমানা পার হয়ে আসামে পৌছুলাম। ভোর হোল রঙ্গিয়