পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকণ \එං අඃ আমি ফাৎনার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে বসে থাকব না সন্ধার শোভা দেখব ? চোখ ঠিকরে যার ফাৎনার দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে । চোথে এত ব্যথা হয় যে মনে হয় যেন খুব বই পড়েচি । সন্ধ্যার সময়টা ră lovely stiri, কিন্তু বসে পাচীদের সঙ্গে গল্প করি । আজ সর্বপ্রথম ভাল লাগল কুঠীর মাঠ । বন্যার দরুন এবার কুঠীর মাঠের সে সৌন্দৰ্য্য ছিল না, ছোট এড়াঞ্চির গাছগুলো সব হেজে পচে গিয়েচে, সে শুমলতা আর কোনদিকে চোখে পড়ে না । আজ দুপুরে খুকু এসে অনেকক্ষণ গল্প করলে, তারপর আমার মনে পড়ল যে এবার এসে আইনদির সঙ্গে দেখা করা হয়নি। নব্বই বছর হয়েচে ওর বয়েস, কবে মরে যাবে, যাই একবার দেখা করে আসি । মনে ছিল আনন্দ, কি জানি কেন জানিনে, সেই আনন্দভরা মন নিয়ে গেলুম পড়ন্ত বেলার হলদে রোদমাগানে গাছপালার নীচে দিয়ে কাচিকটা পুলের দিকে । বনের দিক থেকে এক এক জায়গায় কি মুন্দর ফুলের স্ববাস ভেসে আসচে, অথচ কি ফুলের যে অত স্বভ্রাণ তা দেখা যায় না। খুজে খুজে দেখ পগের ধারে এক জায়গায় ঝোপে নাটার্কাটার ফুল ফুটেচে, তার গন্ধ ঠিক আতরের মত। কিন্তু যে গন্ধটা আগে পেয়েছিলুম, তা নাটা ফুলের গন্ধ নয়। সে গন্ধ অন্ত ধরনের। শুধু ফুলের গন্ধ বলে নয়, বনভূমির পাশ দিয়ে যাবার সময় লতাপাত, ফুলফলের গন্ধ জড়িয়ে মিশিয়ে যে অপূৰ্ব্ব সুবাসের স্বষ্টি করে গাছপালারাই তার স্রষ্ট, নীলাকাশের তলায় কোটি যোজন দূরের স্বর্য্যের রৌদ্রের সঙ্গে পৃথিবীর মাটির রস, বায়ু মণ্ডলের অদৃশু বাষ্প, এদের সংযোগে ওরা যে রসায়ন প্রস্তুত করে, তাই আমাদের প্রাণীজগতের উপজীব্য। ভূতধাত্রী তরুলতা নিৰ্ম্মমভাবে ছেদন করবার সময় একথা সব সময় আমাদের মনে ওঠে না। তাই আজ সকলে যখন দেখলুম তেঁতুলতলার মাঠের ধারে খানিক করে জমির জঙ্গল কেটে দিয়েচে—তথন এত কষ্ট হোল! ওখানে নাকি ওরা বেগুন করবে। আহা, কি চমৎকার সাইবাবলা ও বেঁয়োবাকা গাছগুলো কেটেচে, আজ ত্রিশ বছর ধরে ওই বনভূমি কত বনের পাখীর আহাৰ্য্য যুগিয়েচে, আশ্রয় দিয়েচে । সৌন্দর্য্যে, ছায়ায়, ফুলের সুবাসে আমাদের তৃপ্তি দিয়েচে, তাদের ওভাবে উচ্ছেদ সাধন করে যে কোন প্রাণে তাও বুঝিনে। একটা গাছ কেউ কাট্‌লে আমি তা সহ করতে পারিনে। কাগজের কলের জন্তে আমাদের দেশ থেকে গাড়ি গাড়ি বঁাশ চালান যাচ্চে, বাশবন দেশের একটা শোভ, এবার সর্বত্র দেখচি বঁাশবন ধ্বংসের পথে চলেচে। দাম তো ভারী, পাচ টাকা করে একশো—আমার ঝাড়ের বঁাশ আমি বেচিনি । দুপুরে যখন রৌদ্রে মাঠের মধ্যে গামছা পেতে চুপ করে শুয়ে থাকি, দূর গ্রাম-সীমাস্তে বাঁশের বনে নতুন বাশের দল সোনার সড়কির মত উচু হয়ে থাকে, নীল আকাশের তলায় শিমূলের ডাল বাতাসে দোলায়, রঙিন-ডানা প্রজাপতিরা বনের ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়, একটা গাঙচিল ইছামতীর পারের বড় কদম গাছটা থেকে ডাকে—মনে আসে অপার বোমের উদার ইঙ্গিত, বনপুষ্পের বাণী, বনবিহঙ্গের কলতান —যে স্বষ্টিকে যে জগৎকে জানিনে, বুঝিনে, ভ,ল করে চিনিওনে তার রহস্তে দেহমন সবল হয়ে ওঠে। তারপর গেলুম আইনদির বাড়ির পাশের পথটা দিয়ে মরাগাঙের বড় বড় বট গাছের ছায়ায় ছায়ায় মুন্দরপুরের দিকে। আবার সেই বনঝোপের গন্ধ, সেই ছায়, সেই পাখীর ডাক । এবারকার বস্তায় অনেক গাছপালা নষ্ট হয়ে গিয়েচে, তবুও এ পথের সৌন্দৰ্য্য তেমনি অক্ষুণ্ণ আছে। মনে হোল সেই ডাওকি নদীর দোদুল্যমান সেতু ও সেই gorgeটার কথা। ঠিক দুপুর বেলা। অপূৰ্ব্ব পূজোর ছুটি ফুরিয়ে গেল। নোঁকে বেয়ে চলেচি বনগায়ে, বি. র. ৪—২৪ g