পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S)oや বিভূতি-রচনাবলী মেঘলোক-শূন্ত নীলাকাশের কোলে সাদা সাদা বকের দল উড়চে । মনে কেমন একটা বিষাদ গ্রাম ছেড়ে যেতে, ইছামতী নদী ছেড়ে যেতে, খুকুকে ছেড়ে যেতে। তার ওপর দেখে এলুম খুকুর জর হয়েচে, আজ সকাল থেকে সে শুয়েই আছে। কিচমিচ পাখী ডাকচে চালতেপোতার বঁাকে ঝোপে ঝোপে। মন উদাস হয়ে রয়েচে আমার, কিছু ভাল লাগচে না । কেন এমন হয় ? যাদের ভালবাসি, কাছে রাখতে চাই, তাদের কেন কাছে পাইনে ? কোথার স্বপ্রভ পড়ে রইল শিলং-এ, দেখবার ইচ্ছে হলেই কি তাকে দেখবার উপায় আছে ? কোথায় পড়ে রইল খুকু ! এই যে ওর অসুখ দেখে এলুম, কিছুই করবার নেই আমার-করতে গেলেই যত নিন্দ, যত কানাকানি হবে এই সব পাড়াগায়ে । খুব বেড়িয়েচি এবার ছুটিতে। সেই ডাওকি নদীর gorge, চেরার পথে সেই প্রাইমুলা ও Compositaeয় বন মনে পড়চে । চালতেপোতার বাকে এই গাছপালার সৌন্দর্য্যে, খুকুকে ছেড়ে আসবার বিষাদে মনট পূর্ণ হয়ে আছে। এ সময় শিলং, নংটু থেকে ডাওকি পৰ্য্যস্ত সেই বিরাট ট্রপিক্যাল অরণ্যানী যেন স্বপ্ন বলে মনে হয় । এইমাত্র বারাকপুর থেকে মোটরে ফিরে এলুম। আজ বেলা বারোটার সময় পশুপতিবাবু, বৌঠাকরুণ, নীরদবাবু ও তার স্ত্রী, বগলীবাবু ও আমি গিয়েছিলুম মোটরে বারাকপুরে বেড়াতে। পথে টায়ার খারাপ হয়ে যাওয়ার দরুন এক জায়গায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। তারপর যখন বনগা এলাম, তখনই বেল গিয়েচে । জিনিসপত্র কিনে নিতে কিছু দেরি হয়ে গেল । ওখান থেকে বেলা পড়ে গেলে বারাকপুর গেলাম। পুটিদিদিদের বাড়ির সামনে মোটর গিয়ে দাড়াল । খুকু নিজের বাড়ি কি করছিল, আমি গিয়ে তাকে বল্লুম। সে কাপড় পরে তখনি এল । পশুপতিবাবু খুড়োদের রোয়াকে বসিয়ে তার ফটাে নিলেন । আমিও সেখানে পেছন দিকে দাড়াই। তারপর বগলীবাবু গান করলেন—‘চাঁদ ডুবে যায় ভোর গগনে। আমি পশুপতিবাবুকে নিয়ে কুঠার মাঠে বেড়িয়ে এলাম। এসে দেখি শিবুর মা নীরদবাবুর স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েচে । একটু পরে তিনি এসে খুকুদের বাড়ি বেড়াতে গেলেন । আমিও দেখতে গেলুম। খুকু ডাকলে, আমুন না ? আমি ওদের ঘরে গেলুম । তক্তপোশের ওপর উনি আর খুকু বসে আছেন। তারপর খুকু দোরের কাছে এসে বসল। বগলীবাবু গান করলেন-আমিও সেই দোরের বাইরেই বসে। গান খুব ভাল হোল । তারপর সবাই থেতে বসে গেল। ওদিকে খুকু, বেলা ও পশুপতিবাবুর স্ত্রী খেতে বসলেন। খুড়ীমা পরিবেশন করলেন। খাওয়াদাওয়ার পরে খুকু এক এ ঘরের অন্ধকারের মধ্যে দাড়িয়ে অনেকক্ষণ আমার সঙ্গে আলাপ করলে বগলাবাবুর গানের বিষয়ে । সুপ্রভার পত্র দেখতে চাইলে, তা ওকে তো না দেখিয়ে পার পাবার জো নেই। বলে, আবার কবে আসবেন ? বল্লুম, সেই বড়দিনের সময় । বলে, এসে বড় খারাপ লাগছিল এ ক'দিন, আজ ভাগ্যিস আপনারা এলেন ! রাত নটার গাড়ি গেলে আমরা রওনা হলুম। খুকু রোয়াকে দাড়িয়ে ছিল। বল্লে—গুড়, বাই। পশুপতিবাবু বকুলতলায় দাড় করিয়ে ওর একটা ফটাে তুলেছিলেন, আর একটা কোন ঝোপের কাছে দাড় করিয়ে । পথে জাহ্নবীর বাসায় খোকাকে নামিয়ে দিয়ে আমরা ওপারে গেলুম তেল কিনতে । বারাসতের কাছাকাছি এলে গাড়ির টায়ার আবার গেল। ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা করবার পরে একথান লরি পেয়ে তাতে করে কলকাতা পৌছুলাম । এ বেড়ানো মনে থাকবে বহুদিন ।