পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ \రిe a চন্দননগরে একটা সভায় আমায় সভাপতিত্ব করতে হবে বলে গিয়েছিল, কিন্তু শিশিরকুমার ইনস্টিটিউটের আজ বার্ষিক উৎসব। পশুপতিবাবু বিশেষ করে বলে গিয়েছিলেন। দুপুরে কিন্তু বাধা হয়ে চলে যেতে হল চন্দননগরেই। সুরেন মৈত্র, সুরেন গোস্বামী, বিজয়লাল চাটুযে, আমি সকলে বেলা তিনটের সময় গিয়ে নৃত্যগোপালের পুস্তকাগারে উপস্থিত হলাম। ওরা লাইব্রেরীতে বসে কথাবাৰ্ত্ত বলছিল—আমি পেছন দিকের নির্জন ছাদের আলসের ধারে দাড়িয়ে শীতের অপরাহ্লের হলদে রোদ-মাখানে রাধালতাফুলের ঝোপ ও বঁাশগাছের দিকে চেয়ে রইলুম। কেবলই মনে হচ্ছে স্বপ্রভা আর খুকু আজ এই অপরাহ্লে কি করচে। এক একবার আমাদের গায়ের বকুলতলাটি কল্পনা করবার চেষ্টা করলুম, খুকু এখন পড়ন্ত বেলায় ছায়ায় তাদের শিউলিতলায় দাডিয়ে আছে, কিংবা পাচীর সঙ্গে গল্প করতে এসেছে এ-বাড়ি । স্বপ্রভার আজ ছুটি, হয়তো পাঠন মাউণ্ট স্কুলের পাশের রাস্তা দিয়ে বেড়াতে বেরিয়েচে । ওর রুমালখন সঙ্গে করেই নিয়ে গিয়েছিলুম। বডড ময়লা হয়ে গেছে। ওদের দুজনের কথা ভাবছি, এমন সময় সুরেনবাবু ডাক দিলেন লাইব্রেরীতে ব্রাউনিং শোনাবার জন্তে । সুপ্রভা gAfA SfTfzieLIF “Rudel to the Prince of Tripoli'A ERAiT FLAfSe "বিচিত্রা’য় । সুরেনবাবু তার অন্তভাবে অনুবাদ করেচেন—আমার দুটিই ভাল লাগল—তবে সুপ্রভার অনুবাদ খুব literal না হলেও মিষ্টি বেশী । স্বপ্রভা যে ছন্দটাকে অবলম্বন করেচে, তার ধ্বনি ও লয়ের অবকাশ সুরেনবাবুর অবলম্বিত ছন্দের চেয়ে বেশী। ব্রাউনিং পড়া শেষ হয়ে গেলে আমাদের ফটো নেওয়া গেল । মনে পড়ল গোপীর সঙ্গে কুড়ি বছর আগে একবার এসেছিলুম চন্দননগরে তারপর আর কখনও আসিনি। বিয়ে করব বলে মেয়ে দেখতে এসেছিলুম, তখন আমি কলেজে পড়ি, ১৮ বছর বয়স। অবিহি সে মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে হয়নি । মনে আছে, মেয়েটি ছিল খুব ছোট, বারো বছর বয়স, অত ছোট মেয়ে আমি পছন্দ করিনি। মেয়েটি বেশ ফসর্ণ, একহারা চেহারা, তাও আজও মনে আছে। এখন গিন্নীবাল্পী হয়ে নিশ্চয়ই কোথাও ঘরসংসার করচে—যদি বেঁচে থাকে। চন্দননগরে সভার কাজ শেষ হবার আগেই সুরেনবাবুকে সভাপতির আসনে বসিয়ে আমি আর বিজয়লাল চলে এলুম। হাওড়া থেকে বাসে দেশবন্ধু পার্কে এলাম। সেখানে শিশিরকুমার ইনস্টিটিউটের থিয়েটার হচ্চে পার্ক স্কুলের প্রাঙ্গণে । নীরদবাবু, বৌঠাকরুণ, পশুপতিবাবু সবাই আছেন। জাস্টিস দ্বারিক মিত্রের সঙ্গে পরিচয় হল। সেদিন রাজপুরে গিয়েছিলুম সন্ধ্যার কিছু আগে। ঢাকুরিয়া, কসবা প্রভৃতি স্থানে রেললাইনের ধারে ছোট ছোট গৃহস্থ-বাড়ি। সন্ধ্যার চাপা আলো পড়ে কেমন একটা শ্ৰী হয়েচে, যেন কত পুঞ্জীভূত শাস্তি ও রহস্য, গৃহস্থালির কত স্নেহ ভালবাসা এখানে আশ্রয় নিয়ে আছে, নারীর মুথের মঙ্গলশঙ্খের ধ্বনিতে, তার হাতের সন্ধ্যাপ্রদীপের আলোয় সে শান্তি ও মাধুর্যের নিত্য আরতি চলচে । যেখানেই একটা মেয়ে এদো-পড়া পুকুরের ঘাটে বসে এই সন্ধ্যাবেলা বাসন মাজচে, সেখানেই তাকে ঘিরে যেন চারিপাশে গভীর রহস্য । মেয়েরা না থাকলে জগৎট কি মরুভূমিই হত তাই ভাবি । রাজপুরে পৌছে গল্প করলুম তেঁতুলদের বাড়ি বসে অনেকক্ষণ। ফুলি এল, তেঁতুলের মা বলছিলেন তাকে বড়দিনের ছুটিতে হরিদ্বার নিয়ে যেতে। সেদিন কত রাত পৰ্য্যন্ত ভ্রমণ সম্বন্ধে পরামর্শ হল—কোথা দিয়ে যাওয়া যাবে, কোথায় নাম যাবে, কি কি সঙ্গে নেওয়া হবে—এই