পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○>ミ বিভূতি-রচনাবলী শেয়াল-কুকুর, কিন্তু নিজেরা যে কিসের যত জীবন যাপন করে তা কি ভেবে দেখেচে ? মাঝে পড়ে খুকুট। ওদের মধ্যে পড়ে মারা গেল, একঘেয়েমী ও সঙ্কীর্ণ জীবনের তিক্ততায়। কি ভয়ানক শীত লাগল ট্রেনে বক্তিয়ারপুর আসতে আসতে। অমন শীত অনেক দিন দেখিনি। রাত বারোটায় এক্সপ্রেস বক্তিয়ারপুর পৌছল। একটা কুলি নিয়ে কালীদের বাড়ি গেলুম। অনেক রাত পৰ্য্যন্ত ইরাদিদি ও কালীর সঙ্গে গল্প করলুম। পাটনা থেকে এসেই জানলুম সুপ্রভ এসেচে কলকাতায় । সেই রাত্রেই তার সঙ্গে দেখা কর্তে গেলুম। গত শনিবার বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেড়াতে গিয়েছিলুম ওর সঙ্গে। সেদিন কয়েকটি গান করলে—আমি জানতাম না ও এত সুন্দর গান গায় । কি মিষ্টি লাগল ওর গান ক’টি সেদিন ! বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে ফিরেই গেলাম বনগায় ৬-৫০এর ট্রেনে। স্টেশনে সুবোধ ও যতীনদার সঙ্গে দেখা । রাত ন’টাতে বনগায় পৌঁছেই দেখি জগদীশদা'র মেয়ে হাসির বিয়ে—সেদিনই। প্রফুল্ল, হরিবাবু প্রভৃতি বরযাত্রীদের খাওয়ানোর কাজে মহাব্যস্ত । আমায় বল্লেন—এত রত্রে কোথা থেকে ? খেতে বসে যাও । যোগেনবাবুদের বাড়ি খাবার জায়গা হয়েছিল। খেয়ে যখন বাইরে এলুম তখন চাদ উঠেচে, অল্প অল্প জ্যোৎস্না, কৃষ্ণপক্ষের ভাঙা চাদ । পরদিন দুপুরের পরে বারাকপুরে গেলুম। যাবার সময় আজকাল চালকীর মুসলমান পাডার মধ্যে দিয়ে যেতে বড় চমৎকার লাগে । খুকুদের রান্নাঘরে ওরা খেতে বসেচে। বল্লুম—খুড়ীমা, অতিথি আছে । ওরা অবাক হয়ে গেল। তারপর খুব খানিকটা গল্পগুজব করে বিকেলে ফিরি। ফেরবার পথে গাজিতলা ছাড়িয়ে সেই খেজুর গাছের হেলানো গুড়িটায় বসে অৰ্দ্ধচন্দ্রাকৃতি নদীর দিকে, ওপারের মুক্ত তৃণাস্তৃত চরভূমির দিকে চেয়ে রইলুম। সন্ধ্যায় বনগী ফিরে চারুবাবুর ওখানে চায়ের নিমন্ত্রণ ছিল, চা খাওয়া সেরে সাড়ে-আটটার ট্রেনে কলকাতা রওনা হছ । আজ বিকেলে গোলদীঘিতে কতক্ষণ বসে ছিলুম। গৌরীর কথা মনে হল অনেকদিন পরে। এই সময়েই সে মীর গিয়েছিল। সেষ্ট শ্ৰীগোপাল মল্লিক লেন, সুন্দর ঠাকুরের দোকানে ধাবে লুচি খাওয়া—সেই সব শোকাচ্ছন্ন গভীর দুঃখ ও দুর্দশার দিনগুলো এতকাল পরে দুঃস্বপ্নের মত মনে হয় । এরাও তো চলে যাবে। সুপ্রভা পরশু বলচে গঙ্গার ধারে বসে বোটানিক্যাল গার্ডেনে— আপনি শীগগির কিন্তু একবার শিলং যাবেন । আমি বেশীদিন বঁচিব না, সত্য আমার আয়ু কম, জ্যোতিষী বলেচে । কবে মরে যাব, আপনি টেরও পাবেন না । খুকুও তো বিয়ে হলে চলে যাবে বারাকপুর ছেড়ে । তথন আবার যে নির্জন, সে নির্জন । আজ বিকেলে রেডিও আপিস থেকে ফিরবার পথে লালদীঘিতে একটু বসেছিলুম। সন্ধ্য হয়ে আসচে। যশোর জেলার দূর এক গ্রামে—তাতে সেই মেয়েটি এখন তাদের বাড়ির সামনের বকুলতলাটিতে আপনমনে হয়তো বসে আছে। সুপ্রভ হয়তো পুরীতে সমুদ্রের ধারে বসে কি ভাবচে । কি জানি কেন বসলেই ওদের দুজনের কথা মনে হয় । তাই মনে হল এই সময় একবার জাঙ্গিপাড়া যাব। কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে সেই একঘেয়ে দুর্দিনে জাঙ্গিপাড়া গিয়েছিলুম। গৌরী তখন মারা গিয়েচে, আমার প্রথম যৌবনের সঙ্গিনী। তার কথাই তখন আমার সমস্ত মনপ্রাণ ভরে রেখেচে, সেই সময় গিয়েছিলুম জাদিপাড়া স্কুলে চাকুরি করতে