পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকণ J)ృ(t প্রথম ফুল ফুটে রাঙা হয়ে আছে। সন্ধ্যায় রাঙা আকাশের তলায় চারিধারে গাছের মাথাগুলো নানা বিচিত্র-ভঙ্গি ও ছত্রবিন্যাসের সৌন্দর্য্যে ভারী চমৎকার দেখাচে । হঠাৎ পাটনায় মিহিরবাবুর বাড়ির চা-পার্টির কথা মনে হল, সেই যে আমি পর্দার ফাকের দিকে রাঙা রোদ লাগানো গাছের দিকে চেয়ে দেশের কথা ভাবছিলুম সেদিন । সে তো এই কুঠার মাঠের কথাই । খুকুর কথাও । তারপরে বাড়ি ফিরে আসতেই খুকু ছুটে এল—সে ভালো কাপড় পরে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিল চড়কতলায় । খুড়ীমা বাড়ি নেই—কলে গা ধুতে গিয়েচেণ—টিউবওয়েলে । রাত্রে ইন্দুর বাড়ি বসে ওর মুখে নানারকম গল্প শুনি ও যশোর জেলায় এক পাড়াগায়ে ডাক্তারী করতে গিয়েছিল । গ্রামের নাম কোল বেলপুকুর । সেখানে কেমনভাবে তাকে একটা গৃহস্থবাড়িতে আদর-অভ্যর্থনা করেছিল, আর এক গ্রামে এক গৃহস্থবাড়ি কেমন অনাদর করেছিল এ সব গল্প করে গেল । ওর গল্পে অনেক অজানা পাড়াগায়ের ছবি আমার চোখের সামনে ফুটে উঠল। এমন গল্প বলার ক্ষমতা সকলের থাকে না । পরদিন কালে এল—ওদের বাডিতে দুপুরে নিমন্ত্রণ । খুকু বসে মাছ কুটচে রান্নাঘরের সামনে উঠোনে, বেলা দশট, আমি রান্নাঘরের দোরে দাড়িয়ে ওর দাদা আর মায়ের সঙ্গে অনেক গল্প করলুম। নদীতে কালো আর আমি সাতার দিয়ে আমাদের পাড়ার ঘাট থেকে চলে গেলুম রায়-পাড়ার ঘাটে। বৈকালে খুকু অনেকক্ষণ দাড়িয়ে গল্প করলে প্রায় সন্ধ্যার কিছু আগে পৰ্য্যন্ত । তারপর আমি একটু কুঠার মাঠে পথে বেড়িয়ে এসে স্টেশনে রওনা হলুম জিনিসপত্র নিয়ে । আসবার পথে বুড়ীকে দেখতে গেলাম। বুড়ীর হাত ভেঙে গিয়েচে, ময়লা কঁথা পেতে শুয়ে আছে। আমায় দেখে কি খুশিই হল! বুড়ী সত্যিই আমায় খুব ভালবাসে। এক-সময় ওর অবস্থা ভাল ছিল, ওর স্বামী ছিল জমীর দেওয়ালি। মুসলমানপাড়ার মধ্যে জমীরের অবস্থা বেশ সচ্ছল ছিল । ছেলেবেলায় জমীর দেওয়ালিকে আমি দেখেচি। বুড়ী তারই বউ। এখন আর কেউ নেই ওর, অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়েচে । ভিক্ষে করে চালাতে হয় প্রায় এমন অবস্থা । বুড়ীকে কিছু দিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বার হলুম, কারণ ট্রেনের বেশী দেরি নেই। আশথতলায় তখনও জ্যোৎস্না ফোটেনি, শেষ বিকেলের ছায়া । হরিবোলার দোকানে এসে ইন্দু ও ফণিকাকাকে পাওয়া গেল। ওরা বসে গল্প করচে । আমার মনে কি অদ্ভূত আনন্দ ! সত্যি এমন সব আনন্দের দিন জীবনে ক’বার আসে ? এই জ্যোৎস্না, এই শুক্রতার, আধখানা চাদ, সেক্রাদের বাড়ির কাছে নেবু ফুলের গন্ধ পাওয়া গেল—এরই মধ্যে কত কি ভাবনা । এ আনন্দ অনেকদিন ভোগ করলুম বটে। তাজ চার বছর এই প্রথম বসন্তের দিনে এখানে ফুল ফোটা দেখি। আজ চার বছন নানা সন্ধ্যায় নানা ছুটির দিনে নানা বিকেলে খুকু আমায় আনন্দ দিয়েচে—কত ভাবে, কত কথায় । ওই ভাবতে ভাবতে জ্যোৎস্নার মধ্যে স্টেশনে এলুম। গোপালনগর স্কুলে ছাত্রের থিয়েটার করচে আজ। আমাদের গা থেকে মেয়ের দেথতে আসবে। ট্রেনে যখন বনগী আসচি তখনও আমার অদ্ভুত আনন্দ। গাছের সারির ওপর দিয়ে পারঘাটার জলের ওপারে আমাদের গায়ের দিকে চেয়ে ভাবচি, সবাই এখন কি করচে ? খুকু এখন কি করচে ? হয়তে রান্নাঘরে বসে আছে এতক্ষণ, কারণ আজ কাকার তিথি উপলক্ষে ব্রাহ্মণ-ভোজন হয়েছিল বাড়িতে ওবেলা, এবেল বাসি পায়েস, ভাত-তরকারী নিশ্চয়ই আছে, তাই সে বসে আছে। ইন্দু এতক্ষণ বারান্দায় ছেড়া মাছুর পেতে এক বসে আছে। ওরা বেশ আছে । . t ভাবতে ভাবতে বনগার ট্রেন এসে দাড়াল। প্ল্যাটফৰ্ম্মে আমার কাকার ছেলে লালমোহন লুচি-সন্দেশ বিক্ৰী করচে। ও এখানে আছে অনেকদিন, লেখাপড়া শেখেনি, গরীবের ছেলে,