পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ○>。 কোন কোন বনে কিন্তু নতুন ফুটেচে তাও দেখতে পেলুম। কাল রাত্রে হেমেন রায়ের বাড়ি দিলীপ রায়ের গান শোনার নিমন্ত্রণ ছিল, তাই আমরা অনেকে গিয়েছিলুম। গণপতিবাবু ও নীরদবাবুরাও ছিলেন। হেমেনদা অমুযোগ করলেন, মঙ্গলবারে পেনিটির বাগানবাড়িতে আমরা তাকে কেন নিয়ে গেলুম না! দিলীপ আসতে বড় দেরি করল। এল যখন প্রায় রাত ন’টা । বড় সুন্দর লাগল আব্বাস তায়েবজীর মেয়ের সেই হিন্দীগানের অনুবাদটা—দিলীপের মুখে সেদিন যেটা থিয়েটার রোডে শুনেছিলুম। কাল ওর মেজাজ আরও ভাল ছিল, কি চমৎকারই গাইলে ! কলকাতায় কিন্তু সব সময়ই থাকা আমার বড় খারাপ লাগচে । চারিদিকে দেওয়াল তুলে এখানে মনে প্রসারত ও আনন্দ বন্ধ করে দেয় । সব সময়েই কোন না কোন ঘরের মধ্যে আছি, হয় স্কুল, নয় ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরী, নয় মেস, নয় কোন বন্ধুর বাডি, নয়তো সিনেমা । এত ঘরের মধ্যে থাকতে পারিনে, দম বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয় এতে। সামনে গ্রীষ্মের ছুটি আসচে—এই যা একটা আনন্দের। কাল কাগজের বোঝা মুনীতিবাবুর বাড়ি গিয়ে নামিয়ে চলে গেলুম দক্ষিণাবাবুর বাড়ি। হেঁটেই গেলুম। মনে ভারী ক্ষুৰ্ত্তি—কাগজগুলো দেখতে সত্যিই এই দেড় মাস কি কষ্টই না গেছে—আর এই রদ রে। ফিরবার সময়ে আলিপুর হয়ে বাসায় ফিরি। এইমাত্র পানিতর থেকে ফিরে এলুম। প্রসাদের বৌ-ভাত গেল কাল। আজ সকালে আমি কিরণবাবুদের সঙ্গে রওনা হয়েছিলুম। কিছুদূর নৌকে আসতে না আসতেই এল খুব মেঘ, সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ ঝড়। আমরা নেমে ইটিগুর স্কুলঘরে আশ্রয় নিলুম। কিরণবাবুর মেয়েদের ধরে নামালুম একে একে । তারপর বৃষ্টি থামলে ওখান থেকে বার বয়ে এসে নৌকোয় বসিরহাট পৌঁছেই ট্রেনখন পাওয়া গেল। পানিতরের খালের ঘাট থেকে নৌকো চড়ে অনেকদিন আসিনি। ক'দিন বেশ আনন্দে কাটিয়েছি। বুধবার দিন গিয়েছিলুম সকালের ট্রেনে। নৌকো এসেছিল ঘাটে। বাড়ি পৌছে দেখি আন্নাদিদি ইত্যাদি এসেচে। সেই সন্ধ্যাবেল পিসীমা ও সুশীল পিসেমশায় এলেন, আমি তখন নদীর ধারে বসে আছি, সঙ্গে পানিতরের কয়েকটি ছেলে। প্রথম প্রথম যখন পানিতর আসতুম, তখন এসব ছেলে জন্মায়নি। রাত্রে দুই ঘয়ের মধ্যবর্তী চাতালে বসে পিসীমা, হেনা দিদি ওদের সঙ্গে গল্প ও আড্ডা। প্রসাদ বসে বসে গ্রামোফোন বাজাতে লাগল । অনেক রাত্রে ছাদের ওপর শুই—কারণ কোথাও শোবার জায়গা নেই। কি বিশ্ৰী বৃষ্টি আরম্ভ হয়েচে কাল থেকে ! কাল স্বপ্রভার ওখানে গিয়ে শুনি সে তখন নেই। হাতে কোন কাজ ছিল না। এসে কাউন্সিল হাউসের সিড়িতে বসে রইলুম। কিন্তু ভাল লাগে ন—অনমনস্ক মন। তখনই স্থির করলুম শিলং থেকে কাল সকালেই চলে যাব । অথচ কালই তো,মোটে এসেচি—আর তার ওপর এই বিশ্ৰী আকাশ। গরম নেই তাই কি ? এর চেয়ে গরম ঢের ভালো ছিল যদি রন্ধর উঠত। যখনকার যা, তাই লাগে ভালো। স্বপ্রভাকে চিঠি দেব বলে পোস্টাপিসে গিয়ে কতক্ষণ বসে রইলুম। পোস্টমাস্টার আসেই না। একটা