পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ৩২৫ ওর উঠোনের দক্ষিণ ধারে একটা বাবলার গাছ, তার জিরজিরে সরু পাতাভর ডালগুলোর দিকে চেয়ে মনে যে কি আনন্দ পেলাম—তার যেন তুলনা নেই। ওখান থেকে বার হয়ে কাচিকাটা পুলের ওপর এসে দাড়ালুম–বর্ষাক্ষান্ত বৈকালে দিগন্তে মেঘের যে শোভা হয় ইছামতীর ওপরে, মাধবপুরের চরের মাথায়, বাওডের শেষ সীমানার দিকে—এদের দেখে তুষারমণ্ডিত হিমালয়গৃঙ্গের কথা মনে পড়ে। ঘোষেদের দোকানে এসে বসেচি। একটা লোক মাথায় একটা পুটুলি নিয়ে ঢুকে বল্লে— মুমুরি নেবা ? ওরা বল্লে—নেবো । –এর বদলে কিন্তু চাল দিতি হবে । ওরা তাতেই রাজী হল । তারপর সে বসে বসে গল্প করতে লাগল। চৈত্র মাসে আউশ ধানের বীজ ছড়িয়েছিল বলে তার ক্ষেতে ধান এখন খুব বড় বড় হয়েচে । বাড়ি তার খাব রাপোতায় । খাবার ধান এখন আর ঘরে নেই, সব মহাজনের ঘরে তুলে দিয়ে এখন সে নিঃস্ব, অথচ এগারো জন লোক তার পরিবারে, দু'বেল বাইশ জন খেতে। সামান্ত কিছু মুমুর ছিল তাই ভরসা। তাই বদলে চাল নিতে এসেচে । ফিরবার পথে অস্ত-দিগন্তের মেঘস্তপে অপূৰ্ব্ব রাঙা রঙ ফুটল, দেখে দেখে চোখ ফেরাতে ইচ্ছে করে না । গ্রীষ্মের ছুটির পরে স্কুল খুলেচে প্রায় মাসখানেক হল । কলকাতায় এসে পুরোনো হয়ে গেল। এর মধ্যে একদিন বরাসাত গিয়েছিলুম পশুপতিবাবুদের সঙ্গে, একদিন রাজপুর গিয়েছিলুম। একদিন ডাঃ মহেন্দ্র সরকারের বাড়ি নিমন্ত্রণ ছিল, অনেক রাত পৰ্য্যস্ত নানা গভীর বিষয়ে আলোচনা শুনলুম তার মুখে। আমার মন উদ্বিগ্ন হয়েছে আর একবার ইছামতীতে স্নান করবার জন্ত । এরই মধ্যে যেন মনে হচ্চে কতকাল এসেচি । গত শুক্রবার বারাকপুর গিয়েছিলুম। পরিপূর্ণ বর্ষার শোভা অনেক দেখা হয়নি— এবার এই বারাকপুরে থাকব বলেই গিয়েছিলুম। ইছামতীর জল ঘোলা হয়ে এসেচে। দুদিনই বাওড়ের তীরে বটতলার পথে সকালবেলা বেড়াতে গেলুম—দুদিনই ঘোলা গাঙে খুকুদের সঙ্গে স্নান করলুম। রৌদ্রে নতুন ওঠা কচি ঘাসের ওপর খানিকটা করে শুয়ে ঘাসের সাদা সাদা দুটো ফুল লক্ষ্য করলুম। বটগাছের তলায় গাছের গুড়ি ঠেস দিয়ে আজই সকালে কতক্ষণ বসে রইলুম। বিশেষ করে শনিবার বিকেলে ন'দিদির কাছে নতুন বইখানার প্রথম দিকের গোটাকতক অধ্যায় শুনিয়ে যখন ইন্দু মাছ ধরতে বসেছিল তাই দেখতে গেলুম—তখন যেন একটা নতুন দৃপ্ত দেখলুম। নকুলের নৌকোতে বেলেডাঙার মাঠে নতুন জায়গায় নেমে নীল আকাশের কোলে রঙীন মেঘন্তপ দেখে মনে হল এমন দৃপ্ত ফেলে কেন কলকাতায় পড়ে থাকি ! রাণাঘাট হয়ে কলকাতা ফিরলুম বিকেলে । বেশ লেগেচে শ্রাবণ মাসে দেশে গিয়ে। অনেকদিন যাইনি এ সময় । কাল দুপুরের পরে নদিদিদের দালানে বসে যখন পুষ্পের কথা পড়ে শোনালুম নতুন বই থেকে, খুকু খুবই খুশি। ওদের উঠোনে দাড়িয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল, বল্লে—সব বইতে কেবল তুমি আর আমি, ওই নিয়েই গল্প—এটা নতুন ধরণের হয়েচে । নকুলের নৌকোয় যখন যাচ্চি, নদীর ধারে এক জায়গায় প্রকাও একটা বাবলাগাছ থেকে