পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ ৩২৯ খোর। শেষোক্ত শ্রেণীর লোক কিন্তুতকিমাকার ধরনের জীব। রোগের কথা, পথ্যের কথা, শরীরের উন্নতি কার কতটুকু হয়েছে, এ ছাড়া অন্ত বিষয়ে তারা interested নয়। আর এরা প্রায়ই ত্রিকালোত্তীর্ণ প্রৌঢ় বা বৃদ্ধ। এদেরই বড় ইচ্ছা বাঁচবার। যেন তারা বেঁচে দেশে ফিরে গেলে সোনার দেউল ওঠাবে। পরীতলা জায়গাটা পাইন বনের মধ্যে একটা ভ্যালি । ছোট ভ্যালিট যদিও, চারিদিকে ঘন সন্নিবিষ্ট পাইন শ্রেণী, মাঠের মাঝখান দিয়ে একটা পাহাড়ী নদী বয়ে চলেছে, বেশ সুন্দর জায়গাটা। এদিন সকালে লাবানে যাবার পথে একটা উচু পাহাড় টপকে পাইন বনের ছায়ায় ছায়ায় সোজা রাস্তাটা দিয়ে যাবার সময় দূরে লাবান হিলের মাথায় ওধারকার পাইন বনগুলো কতক্ষণ দাড়িয়ে দাডিয়ে দেখলুম। মর্নিং গ্লোরি ফুল থোকা থোকা ফুটেছে লোকের বাড়ির বেড়ার গায়ে, মাকড়সায় বিচিত্র জাল বুনেচে । স্বপ্রভাদের বাড়ি গিয়ে রেবাকে একটা প্রশ্ন জিগ্যেস করে ঠকিয়েছিলাম । যীশুখৃষ্ট কতদিন মারা গিয়েচেন, এ প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারলে না। ওকে দেশলায়ের বাক্সের ম্যাজিকটা দেখিয়ে বাক্সট দিয়ে দিলুম। বেলা সাড়ে ন’ট। সুপ্রভার সঙ্গে পরীতলা বেড়াতে গেলুম। একটা নদীর ধারে মাঠের মধ্যে পাইন বনে ঘেরা নির্জন স্থানটিতে বসে গান শোনা গেল। তারপরে ওখান থেকে চলে এসে সেই পাহাড়টার উপর দিয়ে আসছি, রেবার দাদা আসচে, বল্লে— কাউন্সিলে গিয়েছিল অর্থাৎ শিলং লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্ব্লিতে। একটা টিকিট দিলে আমায়। আমি গিয়ে কাউন্সিল হাউসে ঢুকলাম। একজন পুলিস দেখিয়ে দিলে ওপরের সিড়িটা। ওপরের গ্যালারিতে লোকে লোকারণ্য। আইন সভার অধিবেশন হচ্ছে নীচের হলটাতে । বসন্তকুমার দাস নিচেকার উচু চেয়ারে ডবল কলার পরে গম্ভীর মুখে বসে। তার সামনে, ওপরে, দোতলায়, পেছনে উচু চেয়ারে আসামের গভর্নর রিড, বসে। একজন কংগ্রেস-সদস্য মন্ত্রীদের বেতন সম্পর্কে বক্তৃতা করছিলেন। রাজস্ব-সদস্য স্যার আবদুল্লা তার জবাব দিতে উঠলেন। একপক্ষ যখন বক্তৃতা করতে ওঠে, অপর দল দেখলুম হাসি, টিটকিরি সব রকম চালায়—এ বিষয়ে আইন সভা সাধারণ স্কুলের ডিবেটিং ক্লাবের চেয়েও অধম । কাউন্সিল হাউস থেকে এসে জিনিসপত্র গুছিরে মোটর স্টেশনে এলুম। দুটোর সময় মোটর ছাড়ল—অপরাহ্লের ছায়ায় মোটর-রাস্তার দুধারে অরণ্য-দৃশু অতি মুনার—পাহাড়ী নদীটাই কি অদ্ভুত ! ফিরে আসতে আসতে উচু উচু পাহাড়ের মাথার দিকে চেয়ে দেখলে মায়ের সেই কড়াখানার কথা মনে হয়। সন্ধ্যায় গৌহাটিতে নামবার পথে মণি ডাক্তারের কথা ভেবে দেখলুম। গায়ের হাটতলায় সে এতক্ষণ সেই মুদীর দোকানটাতে বসে গান করচে। হয়তো বেচারা এবারও বাড়ি যেতে পারে নি। সামনে সুর্য্যাস্তকে লক্ষ্য কয়েই যেন মোটর ছুটেচে, সামনে কামাখ্যা দেবীর মন্দির পড়ল একটা উচু পাহাড়ের মাথায় । খুফু এতক্ষণ হয়তে গাঙ, থেকে গা ধুয়ে ফিরে এল। জঙ্গলে ভরা পোড়ো-ভিটেটাতে ছায় পড়ে এসেছে। স্টীমারে এসে ওপারের ডেক থেকে পাহাড়ে ঘেরা আধ-অন্ধকার বৃক্ষপত্রের দিকে চেয়ে রইলাম কতক্ষণ, কত চিন্তা যে মনে আসে এই সন্ধ্যায়! ট্রেনে উঠে তাড়াতাড়ি শোবার ব্যবস্থা করিনি— রপেটা স্টেশন পর্য্যন্ত বসে আসামের সুবিস্তীর্ণ জলাভূমি ও ছোট ছোট গ্রাম দেখতে দেখতে এলুম। কেবুলই মনে হয় ওবেলা পরীতলা ভ্যালিতে বসে সেই যে গানটা স্বপ্রভা গেয়েছিল রবীন্দ্রনাথের—