পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○S বিভূতি-রচনাবলী —বেজায় ধুলো চাটগায়ের রাস্তায় । নবগ্রহ বাড়িতে সপ্তমী পূজোর ঢাক বাজচে । একটা বাড়িতে প্রতিম দর্শন করলুম। এবার আর হবে কি না কে জানে ? সন্ধ্যার সময় রেণু এসে বসে কত গল্প করলে । ওবেলা দুপুরে খাওয়ার পরে একটু ঘুমুৰ বলে শুয়েছি—রেণু এসে গল্প করতে লাগল, ঘুম চটে গেল । ও চলে গেলে ঘুমুবার চেষ্টা করতেই ঘুম এল । ও কখন চা এনে দাড়িয়ে আছে কিন্তু আমার ডাকে নি। সেই সময় আমায় একটু নড়তে দেখে বল্লে—উঠবেন না ? চা এনেচি, কিন্তু আপনি ঘুমিয়ে আছেন দেখে আমি আর ডাকিনি। চা খাবেন আমুন উঠে। নীরদবাবুদের বাসা খুঁজে পেলুম না বটে, কিন্তু সেজন্য আমার কোন কষ্ট নেই। এদের আতিথ্যে যত্নে, সব দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েচে । সকালে রেণুদের বাড়িতে যখন আজ ঘুম ভাঙল তখন জানলার ধারে শুয়ে দেখি রাঙা রোদের আভাস পূব আকাশে। পরিষ্কার দিনের অগ্রদূত এই অরুণ বর্ণ উদয় দিগন্তের। ভাবচি আমি কি বনগার বাসায় ? চাটগায়ে এদের বাড়িতে ষোল বছর পরে এসেচি, এ যেন স্বপ্ন । সেবার যে সেই এদের বাডি থেকে অন্নদাবাবুর সঙ্গে ফেণী চলে গিয়েছিলুম—তারপর পৃথিবীতে যুগ পরিবর্তন হয়ে গিয়েচে । হাওড়ার পুলের নীচে দিয়ে অনেক জল চলে গিয়েচে । তথনকার দিনের জীবন আর এখনকার জীবন! সেই আমি আর এই আমি ? তারপর ঘটেচে ঢাকা, বৰ্দ্ধমান, বিভূতি, হরকু, চরি, ইসমাইলপুর, গোটা ভাগলপুরের জীবনটাই। তারপর আমার সাহিত্যিক জীবনের আরম্ভ—স্কুল, কত নতুন বন্ধু লাভ, সুপ্রভা, খুকু ওরা সব । জীবনের চলমান স্রোতে কোথা থেকে কোথায় ভাসিয়ে এনে ফেলেছে দ্যাথো ! •• রেণু চ নিয়ে এল। বুদ্ধ বল্লে—আজ চন্দ্রনাথে চলুন। বেশ যাব। কখন গাড়ি আছে ছাখে । সাড়ে দশটায় গাড়ি । সওয়া দশটা বেজে গেল বুদ্ধর দেখা নেই। কোথায় বাইরে গেছে। আমি একলা স্টেশনে এলুম। ফেরিওয়ালা বিক্ৰী করচে–চাই বন্ধটি, কেক—বলবাশিংমু ! আমি ভাবি 'বলবাশিংমু’টা কি জিনিস ? চাটগায়ে কোন খাবারের নাম নাকি ? চাই বলবাশিংমু-বলবাশিংমু . কান পেতে শুনে বুঝলুম লোকটা আসলে বলচে–ভাল পাশিং শো। চাটগারে 'ও'-কারান্ত শব্দের উচ্চারণ করে "উ-কারান্ত শব্দের মত। জ্যোৎস্নাকে বলে জুৎস্না। 'শো হয়ে গিয়েচে ‘e’ যাক। চন্দ্রনাথে এসে নামলুম বেলা বারোটা তখন। বম্বম্ করছে দুপুরের রোদ। নীল ইস্পাতের মত আকাশ। একা হেঁটে ভাঙা পা নিয়ে পাহাড়ে উঠচি। পায়ের ব্যথা এখনও সারেনি—এখনও বেশ থচ খচ করে হাটতে গেলে । বিরুপাক্ষ মন্দির থেকে যাত্রীদের দল নামচে। দুপুরে ঘেমে নেয়ে উঠচি। বিরুপাক্ষ মন্দিরে উঠতে বা ধারে বনের মধ্যে দিয়ে একটা সরু পথ আছে—সেইটে ধরে চললুম। বড় নির্জন রাস্তাটা। হঠাৎ বা দিকে চেয়ে দেখি সমুদ্র দেখা যাচ্চে। পাহাড়ের ধার দিয়ে দিয়ে সরু পথটা বনস্পতি সমাকুল ঘন বনের মধ্যে দিয়ে একে বেঁকে উঠে নেমে উনকোটি শিবের গুহা বলে একটা ছোট্ট গুহার কাছে গিয়ে শেষ হয়েচে । ঘামের উপদ্রবে দুবার এর মধ্যে গাছের ছায়ায় শিলাখণ্ডে বসেচি। একটা বনকলার পাতা হাতে নিয়েচি—যেখানে সেখানে সেটা পেতে বসচি। উনকোটির শিবের গুহা দেখে ফিরবার সময়