পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ \LLA একটা ছোট ঘরের মধ্যে অনেকক্ষণ বসে রইলুম। পেছনে উচু পাহাড়ের দেওয়াল, ঘন জঙ্গলাবৃত —ঝর ঝর ঝরণার জলের তোড়ের শব্দ পাচ্চি৷ একটা কি পাখী ডাকচে,ঠিক যেন ঘণ্টা বাজচে । সামনে সমুদ্রের দৃপ্ত। সমুদ্রের দিক থেকে মাঝে মাঝে বেশ হাওয়া বইচে—এই ভীষণ গরমে ও রোদে সে বিরঝিরে হাওয়াতে যেন সৰ্ব্বাঙ্গ জুড়িয়ে গেল। ডাইনে একটা উচু চূড়ায় একটি মাত্র নির্জন বনস্পতি অত উচুতে মুনীল আকাশের নীচে একটা অসাধারণ ছবির স্বষ্টি করেচে। সুন্দর, কিন্তু যেন অবাস্তব। অত উচুতে কি গাছ থাকে ? ফিরবার পথে সেই ঝরণার ধারে বসলুম। যেমন বড় বড় গাছ জায়গাটাতে, তেমনি বড় বড় শিলাখণ্ড । সিড়ি বেয়ে অনেকটা ওপরে উঠলুম—ওপরে fR*fai agers-regular mountain forest—বেশীদূর উঠতে সাহস হল না এই মচকানো পা নিয়ে—পথটাও জনহীন, শুনেচি চন্দ্রনাথে বাঘ আছে। নেমে আসবার পথে প্রথমে বসলুম সিড়িটার ওপরে—মাথার ওপরে চুড়ার পাশে বনের গাছপালা—তার মাথায় চিল উড়চে, দূরে সমুদ্র বেঁকে গিয়েচে । ওই সমুদ্রের দূর গায়ে বাংলাদেশের এক ক্ষুদ্র গ্রামের কত প্রতিমা, কত উৎসব ! সমুদ্রকে সামনে করে একটা আমলকী গাছে ঠেস দিয়ে পড়ন্ত বেলায় অনেকক্ষণ বসে রইলুম। চন্দ্রনাথ পাহাড়কে কতভাবে যে দেখলুম আজ ! এক এক জায়গায় এর এক এক স্বরূপ, নামবার পথে সেই ঝরণাটার ধারে ঘন ছায়ায় আর একবার খানিকট বসলুম, বিকেলের ঘন ছায়ায় এই বনের দৃশু উপভোগ করবার জন্তে। সেই যে নীচের পুলটাতে ষোল বছর আগে রোজ সন্ধ্যায় বসতুম এখানে থাকতে—সেইটাতে ঠিক সন্ধ্যার সময়েই আজ বদলুম। আবার এই ষোল বছরের অতীত ঘটনাবলী মনের মধ্যে একে একে উদিত হল। পরিবর্তন • পরিবর্তন••• একেবারে আমি নতুন মানুষ এখন। সে আমিই নেই। শম্ভুনাথের মন্দিরের ডাইনের ঘন বনের রাস্তাটি দিয়ে নামলুম। বনের মাথার সাদা সাদা যেন অনেকটা কাপাস তুলোর ফুলের মত ফুল ফুটে আলো করে রেখেচে । আরও অনেক ফুল দেখলুম। ফেরবার পথে অখিল চক্ৰবৰ্ত্তীর এক ভাই-এর সঙ্গে দেখা । অখিল সেবার আমার পাণ্ড ছিল—ষোল বছর আগে যখন চাটগ এসেছিলুম। তাদের সে বাড়িটাও দেখলুম। একটা ছোট্ট মেটে বাড়িতে প্রতিম দর্শন করলুম। তখন ছায়া ঘন হয়ে এসেচে। মাটির উঠান ঝকঝকে তকৃতকে, পেছনে বাশের ছেচার বেড়া ও বেতবন, ছোট্ট প্রতিমাটি, কতকগুলি গ্রাম্য নরনারী প্রতিমা দেখতে এসেচে, ট্যাং ট্যাং করে ঢোল বাজচে । ওখান থেকে বার হয়ে স্টেশনের কাছে এক বড় পূজার বাড়িতে মহাষ্টমীর আরতি দেখলুম। সুপ্রভাদের বাড়ি পূজো আছে, সে-ও এমন সময় হয়তো আরতি দেখচে দাড়িয়ে—খুকুও। - ট্রেন এল। অখিল চক্ৰবৰ্ত্তীর ভাই আমার টিকিট কিনে ট্রেনে তুলে দিয়ে গেল। কত কথা ভাবতে ভাবতে চাটগায়ে এলুম। এসে ওপরে বসেচি, রেণু তখনি এক গ্লাস শরবৎ নিয়ে এসে হাতে দিলে। তারপর চন্দ্রনাথ ভ্রমণের গল্প করি বসে। সবাই একসঙ্গে খেতে বসলুম রান্নাঘরে নেমে—রেণু, আমি, বুদ্ধ, ও বুদ্ধর মামা। বুদ্ধর মামা চন্দ্রনাথের এক পাণ্ডার কীৰ্ত্তিকলাপ বলতে লাগল। ডায়ের লিখবার সময় বসে বসে ভাবলুম দশমীর দিন দেশে কাটাব। এবার পাচ দিন পূজো—তাই আজও মহাষ্টমী। আজ সন্ধিপূজা। কাল রাত্রে সঙ্কল্প করেচি যে যখন এবার পাচ দিন পূজে-তখন দেশে বিজয় দশমী কাটাতে হবে। সকালে উঠে বাইরের ঘরে বসেচি–রেণু এসে বল্পে, বাতাবি নেবু খাবেন ? একটা ফিরিওরালার কাছে