পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○○ বিভূতি-রচনাবলী বাতাবি লেবু কিনে বাড়ির মধ্যে থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এল একটা প্লেটে করে। বল্লে—লেকে বেড়াতে যাবেন তো ? আমি যাবো আপনাদের সঙ্গে । দুপুরে খুব ঘুমিয়ে উঠলুম আজ রাত্রে ট্রেনে জাগতে হবে বলে। মোটর এল, রেণুর দাদা, আমি, রেণু বেরিয়ে পড়লুম। শহর ছাড়িয়ে ছোট ছোট পাহাড়, বন্ত কাটাল গাছ—কেলে কোড়া লতা এত দূরেও দেখে অবাক হয়ে গেলুম। হ্রদটি জঙ্গলে ভর, পাহাড় বেষ্টিত, বৃষ্টি পড়তে লাগল—রেণুকে ছাতি দিলুম, সে কিছুতেই খুলবে না। জোর করে খোলালুম। একটা পাহাড়ের ওপর উঠলুম সমুদ্র দেখব বলে, কিন্তু সামনে আর একটা পাহাড় দৃষ্টি আটকেচে । বাড়ি ফিরে আমি বিছানাপত্র বেঁধে নিলুম। আমি, বুদ্ধ, রেণু একসঙ্গে খেতে বসলুম ওদের রান্নাঘরে পিড়ি পেতে। গাড়ি এল। রওনা হলুম স্টেশনে। সঙ্গে একজন লোক এল, বুদ্ধ, তাকে পাঠিয়ে দিলে। তাকে কিছু বখশিশ দিলুম। ফেরিওয়াল হাকচে–চাই বলবাশিংমু. ঘুম হয়নি ট্রেনে, যদিও শুয়েই এসেছিলুম। লাকসাম জংশন ছাড়িয়ে একটুখানি শুয়েচি– অমনি উঠে দেখি চাদপুর ঘাট। স্টীমারে এসে বেশ জায়গা পেলুম। যেমন ঝড়, তেমনি বৃষ্টি । রাজাবাডি, তারপাশ, মৈনট, কত কি স্টেশন। ওই ঝড়-বৃষ্টিতে যখন নৌক করে থাবার বিক্রী করতে আসচে, জলের ঝাপটায় ওদের ধারে যাবার জো নেই। বড় বড় নৌকা করে যাত্রীরা বাক্স-বিছানা,মোট-পুটুিলি নিয়ে ছাতি মাথায় ভিজতে ভিজতে তীরে যাচ্চে স্টীমার থেকে। বড় বড় চর, কাশবন । চরের মধ্যে লোক বাস করচে। স্টীমার খুব বেগে যাচ্চে । কিন্তু সারাদিনের মধ্যে বৃষ্টি থামল না। একঘেয়ে বসে বসে ভাল লাগচে না । বেলা চারটার সময় গোয়ালন্দ ঘাটে স্টীমার এসে লাগল। ভাবলুম নিজের দেশেই যেন এলুম। এই তো গোয়ালন্দ পোড়াদহ এলুম—তো নিজের দেশ আর কতটুকু ? কলকাতা নেমে দেখি টরু আমার ঘরে বসে আছে। সে কলকাতা বেড়াতে এসেচে। আমি ট্রামে বিভূতিদের বাড়ি গেলুম। মন্মথ এসে বল্লে, না খেয়ে যেতে পারবেন না কিন্তু। খেতে রাত বারোটা হয়ে গেল। তখন পথেঘাটে মেয়েছেলের হাত ধরে লোকে ঠাকুর দেখে বেড়াচ্চে । সকালে উঠে বাগবাজারে গেলুম পশুপতিবাবুদের বাড়ি নীরদবাবুদের কি হল সে সন্ধানে । বাড়ি তো গেলুম, গিয়ে শুনি নীরদবাবুর গিয়েচেন গালুডি । সেখানে চ খেয়ে বৌঠাকরুণের সঙ্গে গল্প করি। বৌঠাকরুণ wবিজয়ার প্রণাম সারলেন বিসর্জনের আগেই পায়ে হাত দিয়ে পায়ের ধুলো নিয়ে। আমিও তাই করি । বগলা এল, তার সঙ্গে সাৰ্ব্বজনীন দুর্গোৎসব দেখতে গেলুম বাগবাজারে। প্রতিমা বড় মুন্দর হয়েচে । দুজন ছেলের সঙ্গে বগলা আলাপ করে দিলে এবং তাদের দেখিয়ে আমার কাধে হাত দিয়ে বলল, তাকে কমল যেতে লিখচে ঘাটশিলায় । তার সঙ্গে সুবর্ণরেখার ধারে বসে কাব্যালোচনা করবে বলে মহা উৎসাহে চলেছিল, কিন্তু ট্রেন ফেল করলে । আমি ওখান থেকে বাসায় এসেই ট্রেনে বনগী রওনা হলুম। দুপুরের পরে এসে বনগায়ে পৌছুই। প্রফুল্লদের বাড়ি ঠাকুর বরণ হচ্ছে। আমি, বীরেশ্বরবাবু, যতীনদ, মনোজ সবাই সেখানে গিয়ে বসি। একটু পরে বেলা পড়লে আমি ঘোড়ার গাড়ি করে বারাকপুর গেলু বাওড়ের ধারে বিজয়ার আড়ং দেখব বলে। কতকাল দেখিনি গ্রামের মেলাটা। এবার যখন আছি দেশে, তখন একবার দেখার খুব ইচ্ছে হল। পথে খুব ভিড়, চালকীপোত চাপাবেড়ে থেকে বিজয়ার মেলা দেখতে আসচে লোকে বনগ। "চাষার মেয়েছেলেরা রঙিন কাপড় পরে আসচে। এই জোড়া বটতলা, এই রায়দের বড় বাগান—গ্রামে