পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

v5(*2 বিভূতি-রচনাবলী শাড়ি পরে আসতে ওই পথটাতে বহুদিন পরে! গত শনিবার সাউথ গড়িয়া গ্রামে বেড়াতে গেলাম বোধহয় পনেরো বছর পরে। ভূতনাথ এখানে থাকতে আমি এখানে এসেছিলুম, সে কি আজকার কথা ? বড় রোদ পড়েচে, বারোটার ট্রেনে ওখান থেকে রাজপুর এলুম। দুলিদের বাড়ির পিছনে বাশবনের তলায় কেমন ছোট ছোট ঘেটুগাছ। বেশ লাগে ওই বাশবনের মধ্যের জায়গাট । আজ গিয়েছিলুম নীরদবাবুদের মোটরে গড়িয়া গ্রামের একটা ভাঙা শিবমন্দিরের ধারে। জ্যোৎস্না উঠেচে খুব, ভাঙা মন্দির আর একটি প্রাচীন বটগাছ—পটভূমিকা বেশ চমৎকার। বেশ লাগল আজ জ্যোৎস্নাট। কতক্ষণ বসে গল্প করলুম। গত সপ্তাহের শুক্রবার থেকে আরম্ভ করে কি ঘোরাই গেল ক’দিন! প্রথম তো শুক্রবার আসাম মেলে রংপুর রওনা হলুম সেখানে সরস্বত সম্মেলনের সভাপতিত্ব করতে। দুপুরের রোদ বেশ বাড়চে–পথে পথে ঘেটুফুলের শোভা—সারা পথেই ঘেটুফুল দেখতে দেখতে চলেছি। নৈহাটির কাছাকাছি এসে মনে হল আমাদের গ্রাম এখান থেকে বেশী দূর নয়—সোজা গেলে হয়তো বিশ মাইলের মধ্যে। এই দুপুর রোদে আমাদের পাড়ার সবাই যে যার ঘরে ঘুম দিচ্চে হয়তো। রাণাঘাট স্টেশনে ইসাহাক মাস্টার উঠল ট্রেনে, ঈশ্বরদি পর্য্যন্ত গল্প করতে করতে গেল। ক্রমে বেলা পড়তে লাগল। আমি দূরে এক গ্রামের একটি মেয়ের জীবনযাত্রার ছবি দেখি এই ছায়াস্নিগ্ধ অপরাহ্লে, হয়তো তাদের শিউলিতলা দিয়ে পাড়া বেড়াতে চলেছিল, হয়তো নিজেদের দাওয়ায় বসে গল্প করে, কি বই পড়ে। কোথায় সার্কাস হয়েছিল। সার্কাস উঠে গিয়েচে আজ ৩/৪ মাস—বলে, একবার ভেবেছিলুম খুব বেড়িয়ে আসা যাক্ সার্কসে—তা সার্কাস গেল উঠে। ওদের কথা দুঃখ হয় ভাবলে । শিলং মেলে সুধাংশু ডাক্তারের দাদা হিমাংশুর সঙ্গে দেখা, সে থাকে কুড়িগ্রামে। চমৎকার জ্যোৎস্না রাত—এবার আমার অদৃষ্টে লেখা ছিল এই পক্ষের জোৎস্নাটুকু নিংড়ে খালি করে উপভোগ করব । রংপুর স্টেশনে নেমে ঘোডার গাড়িতে প্রবেধিবাবুর বাড়ি গিয়ে উঠলুম। গিয়ে শুনি ওঁর আমায় স্টেশনে নিতে এসেছিলেন, কারো সঙ্গে আমার দেখা হয়নি নাকি । পরদিন সকালে সভার অধিবেশন হল টাউন হলে । প্রিন্সিপ্যাল ডি. এন. মল্লিকের সঙ্গে বহুকাল পরে দেখা। কলকাতা ছাড়বার পরে তার সঙ্গে আর কখনো দেখা হয় নি—সে আজ চোদ-পনেরো বছরের কথা। মাথার চুল সব সাদা হয়ে গিয়েচে—এখন এখানে কারমাইকেল কলেজের প্রিন্সিপাল । সভার পর দুপুরবেল প্রবোধবাবুর সঙ্গে মোটরে বার হয়ে কলেজ বেড়িয়ে এলাম। অত বড় কলেজের বাড়িটা বাংলাদেশের অন্ত কোন কলেজে নেই বলেই আমার ধারণা। ছাদে উঠে দুপুরবেলা চারিদিকে চেয়ে বেশ লাগল। কলেজ কমপাউণ্ড খুব ফাকা। তাজহাট রাজবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাদের বড় বৈঠকখানায় আমরা সবাই বসে রইলুম—অনেকগুলো ভারী সুন্দর হাতীর দাতের চেয়ার দেখলুম—যেমন অনেক বছর আগে আগরতলার রাজপ্রাসাদে দেখেছিলুম—আমার তখন চব্বিশ বছর বয়স– প্রায় আজ চৌদ্দ বছর আগেকার কথা। আবার বিকেলে টাউন হলে সভায় আসবার আগে মাহিগঞ্জে 9রবি মৈত্রের বাড়ি যাওয়া গেল । রবি থাকতে কতবার আসতে বলেছিল, কখনো যাওয়া হয় নি, আজ সে নেই ভেবে কষ্ট হল । রবির দুই দাদাকে দেখতে অনেকটা তারই মত যেন । মাছিগঞ্জ থেকে আসতে পথের দুধারে বড় বড় পাতাওয়ালা গাছ—এখানে চোতরা গাছ বলে—বিছুটি গাছ, পাতা গায়ে লাগলে সাংঘাতিক জলে। BA বৈকালে সভার সময়ে যখন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা হচ্ছিল, আমি, জনৈক অধ্যাপক অমূল্য