পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ w ૭૧ আমার দেখে অবাক হয়ে গিয়েচে । বলে—আপনি কখন এলেন ? বললুম, এই তো খানিক আগে আসচি। দুজনে গল্প করচি, তখন খুচীমা এলেন। আমি একটু পরে বরোজপোতার বাশবনে ঘেটুফুলের বন দেখে স্নান করতে গেলুম আমাদের ঘাটে। তিক্তিরাজ ফলের বীচির গন্ধ, মাটির গন্ধ, শুকনে পাতা ও ডালের গন্ধ, ঘেটুফুলের গন্ধ, কঞ্চির গন্ধ—নানা প্রকার জটিল ও বহুদিনের সুপরিচিত, বহুদিনের কত পুরোনেী-কথা-মনে-আনিয়ে দেওয়া গন্ধের সমাবেশ । তাই আমাদের ঘাটে স্নান কবে উঠে বকুলতলাটা দিয়ে যখন আসি, মন যেন এক মুহূর্তে নবীন হয়ে বাল্যদিনে চলে গেল বাল্যদিনের পরিচিত গন্ধে। গালুডি ও সিংহুমের বনের সঙ্গে কোন স্মৃতি নেই কাজেই তা রুক্ষ ও বন্য—বাংলাদেশের এই প্রকৃতি মায়ের মত নিতান্ত আপন, নিতান্ত ঘরোয়া এর প্রতি ভঙ্গিটি আমার পরিচিত ও প্রিয় । চলে আসবার সময়—সন্ধ্যার গাড়িতে চলে এলুম—খুকু ওদের দাওয়ার পৈঠেতে দাড়িয়ে চেয়ে রইল। চুমরি বাগানে কি অজস্র ঘেটুবন, আর কি তার মিষ্টি গন্ধ ! আমার মনে ভারী আনন্দ, আর তার সঙ্গে ঘেটুফুলের গন্ধটা মিশে আনন্দ ঘনীভূত করে তুললে। বেলা পড়ে এসেচে, হাট থেকে লোক ফিরচে। নানা রকম গাছ, লতাপাতার সুগন্ধ বেরুচ্চে—শুক্নো জিনিসের গন্ধই বেশী, শুকনো ফল, শুক্নো মাটি, শুকনো রড়া-ফলের বীজ, শুকনো ডাল পাতা— এই সব গন্ধ। রাত সাড়ে দশটায় এসে কলকাতায় পৌছাই, গত শুক্রবার রংপুর যাওয়া থেকে আরম্ভ করে নানা রকম বেড়ানোর অভিজ্ঞতা এ সপ্তাহে যা হল, সচরাচর ঘটে না। রংপুর থেকে এসেই গালুডি ও বাসাডেরার জঙ্গল—অমনি সেখান থেকে ফিরেই পুরোনো বাল্যদিনের হালিশহর, শুীমাসুন্দরীর ঘাট, বলদেকাটা বাগ ও কাচড়াপাড়ার মধ্যে দিয়ে ঘোষপাড়ার দোল ও মুরারিপুরের বাড়ির ছাদে জ্যোৎস্নারাত্রে বসে চা খাওয়া—অমনি সেখান থেকে পরদিন রাজনগরের বটতলা ও বরোজপোতার বাশবন ও ঘেটুবন, এ সত্যিই অতি দুৰ্ল্লভ আনন্দ ! প্রায় একমাস লিখিনি। অনেক রকম ব্যাপার গেল মধ্যে। একদিন রাজপুর রিপন লাইব্রেরীর উৎসবে কৃষ্ণধন দে, অপূৰ্ব্ব বাগচি, রমাপ্রসন্ন ও গৌরকে নিয়ে এখান থেকে গিয়েছিলুম। ভাঙ রাসমঞ্চে বসে ভস্থলের সঙ্গে সেদিন খুব আনন্দ করা গিয়েছিল। মাচাতলায় বসে ফুলির সঙ্গে অনেক গল্প করি। ফুলিদের বাড়ি আবার ওরা চা খেলে। জ্যোৎস্বারাত্রে ওদের বাড়ির সামনে মাঠে বসে বেশ লাগছিল । তারপর ইস্টারের ছুটির আগে একটা শনিবারে বনগ্রামে গেলুম এবং ছোটমামার ছেলের পৈতের জন্তে বৈকালের ট্রেনে রানাঘাট হয়ে এলুম। সেদিনটাতে নিজের মনের চিন্তা নিয়ে ভারী আনন্দ পেয়েছিলুম। মামার বাড়িতেও সন্ধ্যার সময় অনেকের সঙ্গে আলাপ হল । ইস্টারের ছুটিটাও এবার বেশ কেটেচে। খুকুর ওখানে আছে। আমি বসে কাগজ দেখতুম, খুকু এসে ডাকত ওদের উঠোন থেকে—বলত, এদিকে আমুন না ? গিয়ে গল্প করতুম। ওদের রান্নাঘরে বসে কত গল্প করেচি। বনগায়ের সরকারী ডাক্তার ও তার স্ত্রী একদিন গ্রামোফোন নিয়ে গিয়ে আমাদের বাড়ি হাজির ৷ খুব গান হল । খুকুর ছাদ থেকে শুনলে । আমি ও ইন্দু জ্যোৎস্নারাত্রে রোজ নদীর ধারে বেড়াতে যেভূম—একদিন তেঁতুলের নৌকোতে পার হয়ে ওপারের উলুটি বাচড়ায় বসে কত রাত পৰ্য্যস্ত গল্প করি। খুকু একদিন বলে—চ খাওয়াব, সন্েেবলা আসবেন। গেলুম সদেবেল, কিন্তু সেদিন কি