পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૭૨ বিভূতি-রচনাবলী কাল হঠাৎ লীলাদিদির কাছে যোগমায়ার নাম করতেই তিনি বল্পেন—যোগমায়াও এখানে আছে, খোড়োর ধারে তার বাসা । আমি তো অবাক । সেই যোগমায়া :-বিশ বছর আগে শুনেছিলুম যে মরে গিয়েচে—আজ বিশ বছর ধরেই মনে মনে ঠিক করে রেখেচি যোগমায়া নেই। সে যদি হঠাৎ আজ বেঁচে আছে শোনা যায় তবে সেটা যেন পুনর্জন্মের মত রহস্যময় শোনায় । যোগমায়ার সঙ্গে দেথা করা কিন্তু ঘটে উঠল না । ট্রেনের সময় ছিল না। লীলাদি চা ও খাবার খাওয়ালেন। দেখা করে বিদায় নিলুম। এই তো গোয়াড়ী—একদিন দেখা করব যোগমায়ার সঙ্গে । সুপ্রভার পত্র শু্যামাচরণদাদা দিলে হাজারির দোকানে, আমি তখন স্টেশনে যাচ্ছি। ট্রেনে পত্ৰখানা পড়তে পড়তে গেলুম। বেশ আনন্দ পাওয়া গেল পত্ৰখানা পড়ে। আজ মনে বড় আনন্দ ছিল, কারণ অনেকদিন পরে মেঘ দূর হয়ে রৌদ্র উঠেছিল। খুকু কতকক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে ওদের শিউলিতলায় বন্দী করলে। বল্লে, ভবিষ্যতের কথা ভাবলে কষ্ট হয়, না ? আমি বল্লুম—সময়ের সার বর্তমান। ভবিষ্যতের ভাবনা মিথ্যে ! বৈকালে পরিষ্কার আকাশের তলা দিয়ে পচার সঙ্গে কলাতলার দোয় পার হয়ে সুন্দরপুরের কাছাকাছি গেলুম বেড়াতে—এক জায়গায় জলের ধারে দুজনে বসে ওর পঞ্চানন মামা কি করে ফাকি দিয়ে বিয়ে করেছিল সে গল্প শুনি । এক গরীব ভদ্রলোকের মেয়ে ছিল পরম সুন্দরী, তার বাপকে ওদের সে বখাটে মামা শোনালে যে পচাদের বিষয়ের আট আনার অংশীদার। বিয়ে হয়ে গেল—তারপর মেয়েটার কি দুর্দশা । গল্পটা শুনে মনে বড়ই কষ্ট হল। জলের ধারে ঝিঙের ফুল ফুটেচে। পরিষ্কার আকাশ, খেজুর গাছে গাছে স্বর্ণবর্ণ খেজুরের কাদি। একপাশে সবুজ উলুটি বাচড বড় বড় বট-অশ্বথ, শিমুলগাছ। ওর মুখে গল্প শুনি আর ওবেলার মনের সে আনন্দটা আবার মনে আনবার চেষ্টা করি। কত গাছ, লতা মোটা —একটাতে কেমন জুলবার সুবিধে আছে। বিবপুষ্পের বাস এখনও আছে দু-একটা গাছে। বাওড়ের ওপারে কি সুন্দর ইন্দ্ৰনীল রংয়ের আকাশ হয়েচে । আইনদি চাচার বাড়ি এসে বসি । আমার মনের আনন্দের সঙ্গে আইনদির বাড়ির একটা যোগ আছে। চাচা বসে খালুই বুনচে। ওর সেই নাতি বসে বসে গল্প করতে লাগল। বেশ ছেলেটি। আমি বসে বসে ওপারের বট-অশ্বখের সারির দিকে চেয়ে রইলুম। কি মুন্দর আকাশ, কি চমৎকার সবুজ বনশোভা, কত কথা মনে আসে, সুপ্রভার কথা, সে লিখেচে, এবার আর দেখা হবে কবে ? সে কথা । দেখা ওর সঙ্গে করব শ্রাবণ মাসে, ঠিক করেষ্ট রেখেচি। সে সময় চেরাপুঞ্জিতে আনারস খুব সন্তা হবে, সে সময় চেরাপুঞ্জির বাজারের সেই খাসিয়া মেয়েটার দোকান থেকে আর বছরের মত আর একটা গোটা আনারস কিনে খেতে পারব, সে সময় যাব শিলং । এবার গ্রীষ্মের ছুটিতে যেমন অপূৰ্ব্ব দিনগুলো কাটচে, এমন সত্যিই অনেক দিন কাটেনি। সেবারের বড়দিনকেও ছাড়িয়ে অনেক দূরে চলে গিয়েচে, রসের ও আনন্দের অভিনবত্বে ও | এদিন বিকেলে পচা রায়কে সঙ্গে নিয়ে যাইনি। ওর সঙ্গে বেরুলে কেবল বাজে বকে।