পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ 4) والإقا বসে গল্প করচি, একবার বৃষ্টি এল। আমার চেয়ার পাতা রয়েচে রোয়াকে, উঠতে যাচ্চি, ও উঠতে দেবে না। বল্লে—বমুন, বমুন, বৃষ্টি ঐ থেমে গেল। বল্লে, কল অত সকালে উঠে গেলেন কেন ? বল্লুম–পাচু কাকার ছেলের আশীৰ্ব্বাদ হচ্ছিল, তাই। একটা ছোট গল্প বলতে বল্পে। কিন্তু সাধক-দাদার বাড়িতে একজন গায়ক এসেছিল, তার গান শুনতে বড় ইচ্ছে হল বলে চলে এলুম। বনগায়ে যেতে হল নৌকোতে পচা রায় ও তাদের দুই ভাইপোকে সঙ্গে নিয়ে । বারলাইব্রেরীতে প্রফুল্লের কাছে বিশেষ দরকার ছিল, সেখান থেকে বীরেশ্বরবাবুর সঙ্গে দেখা করে মন্মথবাবুর লিচুতলা ক্লাবে বসে পিরোজপুর ভ্রমণের গল্প করি। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। সন্ধ্যার পর নৌকো ছাড়া হল। মেঘলা আকাশে চাদ উঠেচে, ঝিরঝিরে বাতাস, পচা বেশ নানারকম গল্প করতে করতে এল। মুখপুকুরের ঘাট থেকে সয়ারামকে উঠিয়ে নেওয়া হল । খুকু আজ এসে অনেকক্ষণ গল্প করলে ওদের শিউলিতলায় দাড়িয়ে । আমি তখন স্নান করে এসে সবে বসেচি, ঝমৃঝম্ রোদে ও খাড়া দাড়িয়ে রইল উঠোনে, আমিও রোয়াকে চেয়ার পেতে বসে রইলুম। একবার দুপুরের পরে খুড়োদের বাড়ির দিক থেকে এল। কতক্ষণ দাড়িয়ে গল্প করলে। তারপর আমি Cleopetra পড়ে, তাতেই মশগুল হয়ে বেড়াতে গেলুম বেলেডাঙায় বড় বটতলা ছাড়িয়ে মুন্দরপুরের পথে । রাত্রে খুকুদের দাওয়ায় বসে Cleopetra-র ইতিহাস বলি। ওর ভারী ভাল লেগেচে । বললে,—আজ এত দেরি করে এলেন যে ? বলুম—খুড়ে এসে বসে গল্প করছিল, তা কি করি । পরদিনও Cleopetra-র গল্প শুনে খুকু ভারী খুশি, হেসে বলচে—আহ, বলবার কি ভঙ্গি ! কচুকাটা করচে। ওর হাসি আর থামে না যখন বলেচি হারম্যাকিম কি করে মার্ক এণ্টনির সেনাপতিদের Caesar-এর দলে যোগ দেওয়ালে। সন্ধ্যার জলে নেমে বড়সিমতলার ঘাটের দিকে চেয়ে, পয়লা আষাঢ়ের নবনীলনীরদমালার দিকে চেয়ে ওপারের শুামমাধবপুরের চরের দিকে চেয়ে আনন্দে মন ভরে উঠল। এই বনসিমতলার ঘাট কত ভাবে সার্থক হল ! এবারকার গ্রীষ্মের ছুটির মত আনন্দ কোনবার হয়নি। বনসিমতলার ঘাট থেকে যখন স্নান করে আসচি, শুয়োথলী আমগাছটার তলায় মাথা মুছবার জন্তে দাড়িয়েচি, ঘন মেঘান্ধকার সন্ধ্যা—অস্তমেঘের রাঙা আভা ভূষণ জেলের জমির একটা ময়নাকাটা গাছের গুড়িতে পড়ে কি অপূৰ্ব্ব শোভাই হয়েচে । বাদল বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মশা বেড়ে গেচে। বিলবিলে জলে টইটুমুর, বকুলগাছ ও আমগাছগুলোর ভিজে ভিজে কালে গুড়ি, কাটাল গাছে কাটাল ঝুলচে। এই আদ্র, মশকসস্কুল, অতি নিরানন্দ স্থান কিন্তু অপূৰ্ব্ব কবিতাময় । অন্ততঃ আমার কাছে এ সমস্তটা মিলে এক অফুরন্ত, •চিরনূতন কবিতা । - বসে পড়চি রোয়াকে, চেয়ারটা বুড়োদের বাড়ির দিকে ফেরানে, হঠাৎ যেন মনে হল বিলবিলের জলে ঝপ করে একটা আম পড়ল। তাকিয়ে দেখচি, আর একটা ঝুপ করে শব্দ হল। তারপর আবার একটা । আশ্চৰ্য্য হয়ে ভাবচি এত আম পড়চে কোথা থেকে, তখন দেখি কে যেন বিলবিলের ও ঘাট থেকে কি একটা ডাল ছুড়ে জলে মারচে। g আমি চেয়ে দেখতেই খুকু হাসতে হাসতে উঠে এল—বলে, কবির তন্ময়ত ভেঙে দিয়ে কি