পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ "లీSఫి মজলিশ বসত। স্বরেশবাবু একজন ভালো শিকারীও ছিলেন। শিকারের গল্প করে জমিয়ে রেখে দিতেন। একবার বাবারিঘাটে আমি স্টীমার থেকে নামচি—আজিমগঞ্জ থেকে আসচি অনেককাল পরে ভাগলপুরে—সেই স্টিমারে সুরেশবাবুও আসচেন—উনি তখন বনেলি রাজ স্টেটের এ্যাসিস্টান্ট ম্যানেজার—আমার দেখে বল্পেন—এই যে ম্যানেজারবাবু, কোথা থেকে আসচেন ? আর কি সে হাসি, কি সে মনখোলা বন্ধুত্বের স্পর্শ ! পরশু বাড়ি ফিরে উষার চিঠিতে জানলুম মুরেশবাবু আর ইহলোকে নেই। উষারা যেদিন এখান থেকে গেল মজঃফরপুরে, তার পরদিনই স্বরেশবাবু মারা গিয়েচেন বলে উষা লিখেচে । অত্যন্ত দুঃখ হয়েচে চিঠিখানা পড়ে। ভগবান তার আত্মার সদগতি বিধান করুন। কাল সায়েন্স কলেজের পাশ দিয়ে যাবার সময়ে আচাৰ্য্য পি. সি. রায়ের সঙ্গে দেখা করতে গেলুম অনেককাল পরে। বয়স হয়েচে, কোন দিন মারা যাবেন—আর অনেকদিন যাওয়া হয়নি—এইসব ভেবেই দেখা করতে গেলাম। ভারী আনন্দ পেলাম বসে কথা কয়ে ওঁর সঙ্গে । বললুম—মাঠে যান এখনও ? বল্লেন—ও বাবা, না গেলে কি বাচি ?.বল্লুম—ফিলজফার আসেন ? বল্পেন—রোজ আসেন, তোমার কথা যে সেদিন বলছিলেন, তুমি আর যাও না কেন ? তারপর আলামোহন দাস বলে একজন বড় ব্যবসায়ীর গল্প করতে লাগলেন—তিনি নাকি প্রথম জীবনে মুড়ি-মুড়কি বিক্রি করতেন। এখন ক্রোড়পতি লোক। চার-পাচটা মিল আছে। বললেন–গ্রিন্‌ বোট করেচি, শ্ৰীপুরের ঘাটে বাধা রয়েচে । একবার তোদের বারাকপুরে যাব গ্রিন্‌ বোটে করে ইছামতী দিয়ে। বললুম-বেশ, আমুন না ! অনেকদিন পরে বুড়োর সঙ্গে গল্প করে বড় আনন্দ পেলুম। বুড়ো কবে মরে যাবে, একটা অনুতাপ থেকে যাবে মনে । গত শুক্রবার অর্থাৎ ২৯শে জুলাই গ্রীষ্মের ছুটির পরে প্রথম বাড়ি গিয়েছিলুম। ভারী ভালো লেগেচে এবার। খুকুদের দাওয়ায় বসে ক’দিনই সন্ধ্যার সময় কত গল্পগুজব করি । ওরা একদিন খাওয়ালো। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খুকু রান্নাঘর থেকে জিনিসপত্র নিয়ে এল। আমি গেলেই শতরঞ্জিখানা ঘরের মধ্যে থেকে এনে বড় করে পেতে দেবে—আর ওর মা বলবে, ছোট করে পাত। ছোট করে পাত। কালিঘাট বেড়াতে গেলুম পচা রায়ের সঙ্গে। রবিবার হাটে গেলুম। বকুলতলা দিয়ে হাট করে ফিরি। খুকু দাড়িয়ে আছে, আমি বলছি, খুড়ীম, কাউকে তো দেখতে পাচ্চি নে ? ও বলচে, কেন হাতীর মত দাড়িয়ে আছি, দেখতে পাচ্চেন না? তাড়াতে পারলে তো সব বাচেন । আমি তারপর নদীর জলের একেবারে ধারে গিয়ে বসলুম। লম্বা শীষ ও ফুল ফুটেচে, এপারে ঘন সবুজ গাছপাল, নদীর জল আবৰ্ত্ত করে ঘুরচে–বেশ লাগচে । দিলীপের সঙ্গে সেদিনকার সেই তর্ক মনে পডল। থিয়েটার রোডে ওর বাড়ি বসে তর্ক করেছিলুম ওর বই নিয়ে। একজন চাষা আজ হাট থেকে ফিরবার পথে গল্প করছিল—নতা যদি বেশি হয়েচে, তবে আর ঝিঙে তাতে ফলবে না। তার সেই গল্পট মনে করচি। এই গ্রামের সত্যিকার জীবন—মাটির সঙ্গে সব সময়েই এদের যোগ । মাটির সঙ্গে যোগ হারালে, গাছপালার সঙ্গে যোগ হারালে এরা বাঁচবে না । o বড় বড় বাশঝাড়, কত কি বৃক্ষলত, ষাট বছর পরে যখন আমি থাকব না, তখনও ওরা दि. ब्र. 8-२8