পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৩৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী ه التركيا আজ একুশ বছর পরে বারাকপুরে কালীর সঙ্গে বেলডাঙা বেড়াতে গিয়ে মরগাঙের ধারে সেই উচু জায়গাটাতে বসলুম। . ১৯১৮ সালের মে মাসে প্রথম শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে ওকে সঙ্গে নিয়ে ওখানে বসে গল্প করেছিলুম। আজ আবার এত বৎসর পরে ওর সঙ্গে মরগাঙের ধারে বসেচি সেই মে মাসেই। জীবনের কত ঘটনা তারপর ঘটে গেল—গৌরী এখানে এল, তাকে নিরে পানিতরে গেলুম—সে মারা গেল—তারপর জব্বলপুর, হরিনাভি, চট্টগ্রাম, ঢাকা, আবার কলকাতা, ভাগলপুর—আবার কলকাতা, (১৯৩৩—৩৯)—কত কি, কত কি। আবার এতকাল পরে ও এসেচে, ওর সঙ্গে বিকেলে বেড়াতে এসেচি বেলডাঙায় । ওর সঙ্গে অনেক গল্প করে আইনদির বাড়ি গিয়ে দুজনে বসি। ওবেলা আমগাছে পরগাছা হয়েছিল তাই তুলে এনেছিলুম। খুকু তাই পরে এসে দেখালে কেমন দেখাচ্চে । গ্রীষ্মের ছুটি আরম্ভ হয়ে গিয়েচে—এতদিন পরে বেশ লাগচে । আবার শুরু হয়েচে শিউলিতলার উঠোনে আসা-যাওয়া—নারকোল গাছের পাতায় লণ্ঠনের আলো পড়—সেই সব প্রতি বছরের মত । বিকেলে একটা সোদালি গাছে ঠেস্ দিয়ে কুঠার মাঠে অনেকক্ষণ বসেছিলুম। তারপর বনসিমতলার ঘাটে এসে দেখি খুকু ঘাট থেকে পথে উঠেচে। খুড়ীমা তখনও জলে । ওরা উঠে চলে গেল, আদাড়ি এসে নামল জলে। আজ কি চমৎকার কালবৈশাখীর কালে মেঘ করে এল কাচিকাটার দিকে। জলে দাড়িয়ে চেয়ে চেয়ে দেখলুম। তারপরে শিমুলতলায় এসে দেখি উত্তর মাঠে কালবৈশাখী আরও নিবিড় হয়ে আসচে। কত কথা মনে করিয়ে দেয় এই বারাকপুরের কালবৈশাখী—এমন আর কোথাও যেন দেখিনি। জ্যৈষ্ঠ মাসে এখানে আসা সার্থক এই কালবৈশাখীর অপূৰ্ব্ব সৌন্দৰ্য্য দেখতে পাওয়া যায় বলে । বারাকপুরে আজকাল জীবনট নানা সুখেদু:খে হৰ্ষবেদনায় স্পন্দমান, পুরোনো দিনের স্মৃতির পুনরাবৃত্তি মাত্র নয়—তাই হয়েছিল কিন্তু দিনকতক, ১৯২৩–১৯৩৩ সাল পর্য্যন্ত। অদ্ভুত ধরনের জীবন্ত দিন আজকাল—তবে বোধহয় এইবার যেন আরও বেশী। পরশু সুপ্রভার পত্র পেয়েচি–রত্বাদেবীর চিঠিতে তিনি লিখচেন তাদের ওখানে যেতে। দেখি কতদূর কি হয়। আজ সকালে যখন কুঠার মাঠে গিয়েচি, তখনই দূরে কোথাও আকাশের কোলে মেঘ ডাকচে । কি সোদালি ফুলে-ভরা মাঠের শোভা ! ওপাড়ার ঘাটে যখন নেমেচি জলে, তখন মেঘের কি শোভা ! ঘন কালো মেঘপুঞ্জ ঘুরে ঘুরে ওলট-পালট খেতে খেতে মাধবপুরের মাঠের দিকে উড়ে চলেছে—তারপরেই এল ঝম্ ঝম্ বৃষ্টি । খানিক পরে উঠল রোদ। খুকু ওই অত বেলায় উঠে যাচ্চে ন'দিদির বাড়ি থেকে—আমি বলতেই হেসে চলে গেল। তারপর সারাদিনের মধ্যে কতবার এল গেল—নানা ছুতোয় । আমতলায় চেয়ার পেতে বসে আছি—দুবার এসে খানিকক্ষণ করে রইল। বলে—এক পা এগিয়ে যাই তো দু পা পিছুই। কেন তা কি জানি। সে কথাটা ওদের দাওয়া থেকে নেমে ছুটে এসে আমতলায় বলে চলে গেল। বিকেলে গোপালনগর থেকে এসেচি—ও অমনি এল শিউলিতলায় । খানিকটা পরে নাপিত-বোঁ আসাতে আমি চলে গেলু গা ধুত্তে। ভূষণ মাঝির জমির ওপারে সোদালি ফুল ফুটেচে—সে দিকে চেয়ে আমার কি আনন—এমন অপূৰ্ব্ব আনন্দের অনুভূতি কোথাও হয় না কেন তাই ভাবি । জলে গা ধুতে নেমেও যেন আর উঠতে ইচ্ছে করে না। বনসিমতলার ঘাট, একফালি চাদ আকাশে,