পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ vరిసిసి —মনে হয় । তারপর দেখা যায় কিছুই ঘটল না—দিনগুলো চলে গেল, কিন্তু আনন্দ রেখে গেল, স্থতি রেখে গেল । ” যেমন প্রথম যাত্রার দল আমাদের গায়ে এসেছিল আমার বাল্যকালে, নলে নাপিতের বাড়ি সন্ধ্যাবেলায় আমার বলেছিল 'তুমি যাবে খোকা ? সেই সন্ধ্য, সেই সুশ্ৰী যাত্ৰাদলের নটের দল —সে কথা জীবনে আর কখনো ভুললাম না। ভুললাম না মানে ভুলেই তো থাকি, কিন্তু বিশেষ বিশেষ অবস্থায় একমনে বসে ভাবলেই আবার মনে হয়।-- স্বরেনের যখন পৈতে হয়, দুধুমামা থাকত, আমি দণ্ডী ঘরে গিয়ে সন্ধ্যাসেবী করাতুম— সেই একদিন যুগলকাকাদের বাড়িতে বাল্যে এমন ক'দিন কেটেচে বেশ মনে হয়—মুবাসিনীর সামনে, যখন আমি অকারণে ছুটােছুটি করে বেড়াতুম বালো, বকুলতলায় খেলা করতুম, নাগ পঞ্চমীর দিন ভরত ও আমি মনসাতলায় গিয়েছিলুম। তারপর বহুকাল কেটে গেল । আর তেমন কোন দিনের কথা আমার মনে হয় না। এল গৌরী, ওকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে প্রথম যখন বারাকপুরে আনলুম, আষাঢ় ও প্রথম শ্রাবণের সেই দিনগুলির কথা-রজনীকাকার সঙ্গে তাস খেলতে খেলতে সেই অধীর ভাবে সন্ধ্যার প্রতীক্ষা, টিপ টপ বৃষ্টি পড়চে বাশবনে, মাটির প্রদীপের আলোয় আমি ও গৌরী, তখন সে মাত্র চোঁদ বছরের বালিকা—এই ছবিটি, এই দিনের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলি, চিরদিন—চিরদিন মনে থাকবে । সে গেল চলে। দিনগুলি নিরানন্দময় হয়ে গেল, আশা নেই, আকাঙ্ক্ষা নেই। প্রহরগুলি মৃত । - আনন্দ পেলাম চাটগায় মণিদের বাড়ি গিয়ে। মণির সঙ্গে বসে গল্প করতুম, চন্দ্রনাথ পাহাড়ে বেড়াতে গেলুম, ওই দিনগুলি । ওখান থেকে গিয়ে এসে বিভূতিদের বাড়ি এলাম। ও দিনগুলোর মধ্যে আমার মনে আছে, আমার জর হল, কামাই করলাম দিনকতক, গেলাম না—বিভূতিকে ফোন করলাম, ঐ একদিন । ভাগলপুরে এমন অনেকদিন গিয়েচে ইসমাইলপুর দ্বিরায় । পুরোনো কথা ভাবতাম শ্রাবণ মাসে রাসের সময় বড় বাসায় বসে, রঘুনাথবাবুর ঠাকুরবাড়িতে হেমেন রায় এসে নিয়ে গেল, আমি Koith-এর প্রাচীন দিনের মানুষ সম্বন্ধে বইখানা পড়তুম—কিংবা আমি Astronomy পড়তুম ভাদ্র মাসে বাইরের ঘরে শুয়ে, বীরভূমের সেই পণ্ডিতটা এসে গল্প করত—সেই সব দিন ভারি চমৎকার কেটেচে। একখানা বই হয় এ সব দিনের আনন্দের কথা লিখলে—নতুন টেক্‌নিকে, নতুন ভাবে লিখতে হয়—একখানা ভালো উপন্যাস হয়। তারপর এল খুকু। তার সাহচর্য্যে যে দিন কেটেচে–তার মধ্যে যখন আমি আইভানহে? অনুবাদ করছিলুম, শিউলি গাছে ফুল ফুটত—সেই দিনগুলি আর বনগাঁয়ে ছাদে বেড়ানোর দিনটি, আর গত বছর গ্রীষ্মের ছুটিতে বারাকপুরে গ্রামোফোন নিয়ে কাটানোর দিনগুলির কথা ভুললে চলবে না। চিরকাল মনে থাকবে এগুলিও। স্বপ্রভার সঙ্গেও এমন অনেকদিন আনন্দে কেটেচে। বিশেষ করে এবার দেওঘরে ও ইস্টারের ছুটিতে শিলংএ বেড়াতে যাওয়ার দিনগুলি। অনেক দিনের কথা হয়তো ভুলে বাব— কিন্তু শিলংএ যাপিত গত ইস্টারের ছুটির দিনগুলোর কথা চিরদিন মনে থাকবে। .