পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిసి8 বিভূতি-রচনাবলী পাত, এবেলার বনসিম ঝোপের ছায়ায় ঘাসের মাঠে বসা, সুপ্রভার চিঠি পড়, কল্যাণী ও খুকুর চিন্তা। আর কলকাতার রাত্রির সেই ফুটফুটে জ্যোৎস্না। কাল কত রাত পৰ্য্যন্ত চড়কতলার মাঠে ছিলাম ; ফণি কাক, গজন, কালে পাচু, ফকিরর্চাদ সবাই গল্প করলুম। কাল রাত্রে জেলেপাড়ায় কৃষ্ণ-যাত্র হবার কথা ছিল, সকলে জিগ্যেস করচে—কখন বসবে যাত্র ? ক্ষুদ্র জগতের ক্ষুদ্র আমোদ-প্রমোদ । খুব রাত্রে নাকি যাত্রা হয়েছিল—দেখতে পেলে না বলে আজ সকালে পিসীমা ও ন'দিদির কি দুঃখ ! খুকুর স্মৃতি সারা বারাকপুরকে, তার মাঠ, ঘাট, নদীর তীর সব আচ্ছন্ন করে রেখেছে— এবার গিয়ে বুঝলুম। নদীর ধারে সুপ্রভার, কারণ চিরকাল নদীর ধারে বসে সুপ্রভার পত্র পড়া আমার অভ্যাস । অনেকদিন পরে ভাদ্রমাসে বাড়ি গিয়েছিলুম। ভারি আনন্দ নিয়ে ফিরলুম। কালী এসেচে, তাই আরও আনন্দ স্বপ্রভার অমন মুন্দর পত্ৰখানা সে আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিলে। যে পৃথিবীতে সুপ্রভা আছে, সেখানে আমার ভাবনা কি ? তারপর কল্যাণী যেখানে আছে, সেখানেই বা ভাবনা কি ? আমি যেটাকে মটরলতা বলতুম, কাল বেলডাঙা যেতে বটতলার পথে কালী ওটাকে বলে— বড় গোয়ালে লতা। কিন্তু বড় গোয়ালে লতার ফল হয় সাদা, আর এক রকমের লতা আছে খাঁজকাটা আঙুরের পাতার মত দেখতে, আঙুরের মতই থোলো বাধে। আমাদের বাড়ির পেছনে বঁাশবাগানটার পথে কাল বিকেলে ঘুম ভেঙে উঠে যাচ্ছি, তখন মনে কি এক অদ্ভুত অনুভূতি হল। যেন কি সব শেষ হয়ে গেছে, কি যাচ্চে, এই ধরণের একটা উদাস মনোভাব। প্রতিবারই এই স্থানটি আমাদের মনে অদ্ভুত ভাব জাগায়। বঙ্গবাসীর কথা, বাবার কথা, চীন ভ্রমণের কথা কত কি মনে আসে। দরিদ্র সংসারে তালের বড়া খাওয়ার দিন সে কি উৎসব-সেও এই ভাদ্রমালে। পিসীমা কাল তালের বড় খাইয়েছিলেন কিন্তু । ১৯৩৭ সালেও ভাদ্রমাসে জন্মাষ্টমীতে বাড়ি গিয়েছিলুম, তখনও খুকু গ্রামে ছিল না। আমাদের গ্রামের ক্ষুদ্র জগৎটাতে ওরা বেশ আছে, কৃষ্ণ-যাত্রা শুনচে, দলাদলি করচে, গোপালনগরে হাট করচে, নদীতে ছিপ নিয়ে মাছ ধরচে, চড়কতলায় বসে রাত্রে আডড দিচ্চে— বেশ আছে। জন্মাষ্টমীর ছুটিতে ঘাটশিলার বাড়িতে এসেচি। বাড়ি এসেই সুপ্রভার চিঠি পেলাম। কি ভাল মেয়ে ও, তাই ভাবি। Always a loyal friend–ভারি আনন্দ হয়েচে ওর চিঠি পেয়ে। পরদিন সকালে উঠে কমলদের বাড়ি গেলুম—কমল মাছের সিঙাড়া ও চা খাওয়ালে। বৈকালে বাধের পেছনে শালবনে দিব্যি সবুজ ঘাসের ওপর গিয়ে বসলুম। ঘাসের ফুল ফুটেচে সাদা সাদা —রোদ রাঙা হয়ে আসচে, মিষ্টি শরতের রোদ—মনে পড়ল স্বপ্রভার কথা”কতদূরে অাছে শিলংএ, কি করছে এখন তাই ভাবি ! সুবর্ণরেখার ওপরকার পাহাড়-শ্রেণী বড় চমৎকার দেখাচ্চে। আর মনে হল খুকুর কথা, কল্যাণীর কথা। যাদের যাদের ভালবাসি, এ অপূৰ্ব্ব অপরাহ্লে সকলের কথাই মনে পড়ে। রাত্রে ভট্চাজ সাহেবের বাড়ি সভা হল—বেীমা, উমা ওরাও গেল। অনেক রাত্রে আবার মোটরেই ফিরে এলুম। _५ |L গত রবিবার ঠিক এই বৈকাল বেলা বারাকপুরে—নদীর ধারে বনসিমতলার ঝোপের ছায়ার বসে সুপ্রভার চিঠি পড়চি, কালীও এসেচে অনেকদিন পরে—ওর সঙ্গে গল্প করচি—সে কথা