পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०२ বিভূতি-রচনাবলী ঘন বর্ষার সন্ধ্যার সময় এক কতক্ষণ পাহাড়ের ওপর বসে বসে ভাবলুম এ ফুলডুরি কতদিনের। পলাশীর যুদ্ধের দিনেও এমনি ছিল, আকবর যেদিন সিংহাসনে আরোহণ করেন তখনও এমনি ছিল, বুদ্ধদেব যে রাত্রে গৃহত্যাগ করেন তখনও এমনি ছিল, যখন মহেঞ্জোদাড়ো ও হরপ্পার সভ্যতা বর্তমান, যেদিন সম্রাট টুটেনখামেনের মৃতদেহ সাড়ম্বরে সমাধিস্থ করা হয়েছিল—সেদিনও এই ফুলডুংরি এমনই ছিল, আজ যার ওপর ধলভূম রাজার পার্ক তৈরী হচ্চে। বনগাঁয়ে এবার খুকু ছিল অনেকদিন । সেই ১৯৩৯ সালের খুকু আর নেই। প্রায়ই সন্ধ্যায় কল্যাণীকে নিয়ে বেড়াতে যেতম। ও গেল ৪ঠা আষাঢ়, সেদিন কল্যাণীকে সঙ্গে করে ওদের ছাদে বসে গল্পগুজব করা গেল । সন্তুও ছিল, রামদাসের মেয়ে । খয়রামারি শ্মশানের পাশে মন্মথদা, যতীনদ, বিভূতিকে নিয়ে বিকেলে বেড়াতে যেভূম। ওটা নতুন আবিষ্কার। ইছামতীর জলে স্নান করে কি তৃপ্তিই পেতুম। এবারে কি ভীষণ গরম গেল। নেয়ে তৃপ্তি নেই ঘাটশিলায় । ইছামতীতে সন্ধ্যার সময়েও নাইতুম। শরীর যেন জুড়িয়ে যেত ঘাটশিলার পরে দেশে এসে । ঘাটশিলাতে নাইবার কি কষ্টই গেল ক'দিন। একে গরম, তাতে ভাল করে স্নান করবার মত পুকুর নেই। দ্বিজুবাবুর পুকুরের ঘোলা জলে একদিন নেয়েছিলুম। qŝawszą sz-Rarz R foi a qzsz i Jean’s s Eddington-ưR Astronomy G এ ছুটিতে খুব পড়া গিয়েচে ও আলোচনা করাও গিয়েচে । রোজ তিনটের সময় কল্যাণীকে লুকিয়ে ও তার বকুনি সহ করেও ওদের আড্ডায় চলে যে তুম। যতীনদ দেখতুম বসে আছে। দুজনে আরম্ভ করতুম গ্রহ-নক্ষত্রের গল্প। কল্যাণী সন্ধ্যার সময় পারতপক্ষে বেরুতে দিত না। অন্ধকারে পালালে ছুটে গিয়ে ধরে আনত। ছাদে শুতাম প্রায়ই গরমে। মাঝরাত্রিতে দুজনে নেমে আসতাম। সকালে খুকুর বাড়ি যেতামই । ভালো কথা রেণুর সঙ্গেও দেখা হয়েছিল এই ছুটিতে। যেদিন ঘাটশিলা যাই, তার আগের রাত্রে। বিভূতি মুখুয্যে, মনোজ এবং আমি বনগী এলুম। গোপাল নিয়োগীর বাসায় যেতে ফুলির ছেলের সঙ্গে দেখা, সে নিয়ে গেল ওদের বাসায় । সেখানে ফুলির মার কাছে রেণুর ঠিকানা নিয়ে চলে গেলাম ক্যাম্বেলের সামনে দেখা করতে। রেণুই এসে দোর খুলে দিলে। খুব খুশি আমায় দেখে । সিড়ির নীচে পৰ্য্যন্ত নামিয়ে দিয়ে গেল। একখানা চিঠিও দিয়েছিল পুরী থেকে—মুটু নিয়ে গিয়েছিল ঘাটশিলাতে—বেীমা ছিলেন। চমৎকার গ্রীষ্মের ছুটি শেষ হল। দেবীপ্রসাদ রায় চৌধুরীর বাড়ি আড্ডা দিতে গেলুম সজনী, মোহিতদা, বিভূতি মুখুয্যে ও আমি। কলকাতার রাস্তা-ঘাট অন্ধকার। অনেক রাত পৰ্যন্ত খাওয়া-দাওয়া করে ফিরলুম। ২৪ পরগণার ম্যাজিস্ট্রেট হিউজেস সাহেবও সেদিন সেখানে ছিল । আজ একটা স্মরণীয় দিন । বহুকাল পরে আজ আমার বহুকালের পরিচিত আবাস ৪১, মীর্জাপুর ট্রটের মেস ছেড়েচি। সেই হরিনাভি স্কুলের থেকে আজ পর্য্যস্ত, অর্থাৎ ১৯২৩ সাল থেকে ওই মেলটাতে ছিলাম। এতকাল পরে আজ ছেড়ে অন্যত্র আসতে হল, কারণ মেসটা গেল উঠে। বিভূতি, দেবব্রত, খুকু, সুপ্রভ, রেণু—কত লোকের সঙ্গে ও মেসের স্মৃতি সুখেদু:খে ছিল জড়ানো" 懸