পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উৎকর্ণ . ზატ গত রবিবার ৬ই জুলাই নড়াইল সাহিত্য-সম্মেলনে আমি ছিলুম সভাপতি—বনগা থেকে যতীনদ, মন্মথদা, মিতে এদের নিয়ে গিয়েছিলুম। সিঙ্গে স্টেশনে নেমে একটা দোকানে খাবার তৈরী করতে বলে আমরা ভৈরবের ওপরে কাঠের পুলে গিয়ে বললুম। জ্যোৎস্না রাত্রি। বাস্থানিধি বলে জনৈক উড়িয়া ওপারে জঙ্গলবাধাল গ্রামে থাকে—সে তার মনিবের কত নিন্দে করলে। তারপর ময়রার দোকানে এসে লুচি সন্দেশ খেয়ে একখানা এক ঘোড়ার গাড়িতে এলুম আফ্রার ঘাটে । সেখান থেকে নৌকো করে কী বন্ধুতে বসে গল্প করতে করতে জ্যোৎস্নারাত্রি ভাল করেই উপভোগ করা গেল। মিতে ও আমি নৌকোর ছই-এর ওপর গিয়ে বসে যতীনদাকে বার বার ডেকে ও ছইয়ে ঘা মেরে তার ঘুমের ব্যাঘাত করছিলাম। ভোরে পিয়েরের খালের ধারে নৌকো লাগল। সেখান থেকে ডিস্ট্রিক বোর্ডের রাস্ত দিয়ে হেঁটে গেলুম রতনগঞ্জ। একটা দোকানে খেলুঘ খাবার। তারপর টাকুরে নৌকাতে উঠে, নড়াইল গিয়ে অজিতবাবুর বাসায় গিয়ে হাজির হই বেলা সাড়ে আটটার মধ্যে। বৈকালে সভা সেরে চা-পার্টিতে স্থানীয় S.D.0. মুন্সেফ প্রভৃতির সঙ্গে গল্প। একটা নাটকাভিনয় দেখতে গেলুম টাউন হলে—তারপর অনেক রাত্রে খেয়ে গোরুর গাড়িতে রওনা । বেশ জ্যোৎস্না-রাত্রি। খুব ঘন ঘন বন, বেত ঝোপ পথের ধারে। আবার পিয়েরের খালে নৌকোয় উঠলুম। যতীনদাকে সবাই মিলে উত্তাক্ত করে তোলা গেল, কেন অজিতবাবুর সামনে ভাড়া চেয়েছিল, এই কথা বলে। রাত্রে নৌকো থেকে পড়ে যাবার মত হয়েছিল যতীনদী। ভোরে আফ্রার ঘাট থেকে হেঁটে সিঙ্গে স্টেশন। ওয়েটিংক্রমে জিনিসপত্র রেখে স্নান করে নিয়ে চা ও সন্দেশ খাওয়া গেল । বরিশাল এক্সপ্রেসে বনগী এসে নামলাম। কল্যাণী খুব খুশি । আহ, আসবার সময় রসমুত্তি নিয়ে আমার হয়ে ঝগড়া করে বকুনি খেলো রেণু খুকুর কাছে। আমায় বল্লে—আমার মরা মুখ দেখবেন, আজ যদি যাবেন— কিন্তু রবীন্দ্রনাথের যেতে নাহি দিব’র মত চলেই তো আসতে হল । সামনের রবিবারে নীরদবাবু, মুবর্ণ দেবী, পশুপতিবাবু যাবে মোটরে বনগা picnic করতে —সম্ভবত চালকী বিভূতিদের বাড়ি হবে রান্নাবান্না। জীবন আবার কি ভাবে কোনদিক থেকে পরিবর্তন হয়ে গেল তাই ভাবি । ৪১, মির্জাপুর স্ত্রীটের মেসে সেই পুরোনো ঘর আমার জন্তে রেখে দিয়ে ওরা আমায় সেখানে নিয়ে যাবার জন্তে ডাকলে—কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে হল না। মেসের মায়া এবার কাটাতে হবে—কল্যাণী খুব ধরেচে এবার ওকে নিয়ে বাসা করতে হবেই। ভেবেচি কলকাতা ছেড়ে বারাকপুরে থাকব। গ্রামের জীবন, ইছামতীর ঘোলা জল, মটরলতার দুলুনি—কতকাল ভোগ করি নি। জীবনে কোনদিনই গৃহস্থ হয়ে বারাকপুরে থাকি নি। এবার গার্হস্থ্য জীবন যাপন করবার বড় আগ্রহ হয়েচে । জীবনে যা কখনো হয়নি—এবার তা করেই দেখি । কেন ! মুক্ত ও স্বাধীন জীবন ছুদিন দেখি কাটিয়ে । কাল রবিবারে নীরদবাবু ও মুবর্ণ দেবীরা এলেন বনগ। আমি, কল্যাণী, মারাদি, বেলু সবাই মোটরে চালকী বিভূতির বাড়ি গিয়ে বসা গেল। ডাব খেলাম। তারপর সুধাংশুদের বাড়ির রান্নাঘরে খিচুড়ি রান্না হল। ইতিমধ্যে যুথিকা দেবী ও পশুপতিবাবু গিয়ে হাজির। সবাই মিলে আনন্দ করে খাওয়া ও গল্প করা গেল। জাহ্নবীর ঘরে ওদের নিয়ে গেলাম—বেচারী জাহ্নবী যদি আজ থাকত । ওর অদৃষ্ট নিয়ে ও এসেছিল—চলে গেল নিজের অদৃষ্ট নিয়েই। গোপালনগরের হাটে সবার সঙ্গে দেখা। কল্যাণী, মায়াদি, সুবর্ণ দেবী সবাই হাট করচে। গজেন, ফণিকাক, নলে নাপিত, গুটুকে, খামাচরণদা—সবাই দেখলে। খামাচরণদ মুবর্ণ