পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8e W3 বিভূতি-রচনাবলী অভাব, আনন্দের দৈন্ত—এসব অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলে এসে তবে প্রকৃত আনন্দ রসের সন্ধান মেলে । আমি জীবনে অনেকবার এ ধরণের আনন্য ভর দিনের আস্বাদ করেচি—যেমন একদিন জাঙ্গিপাড়ায়—যখন বিজয় জ্যোৎস্নারাত্রে একটা হেনাফুলের ডাল হাতে নিয়ে দেখা করলে —তারপর ইসমাইলপুরে সেই অপূৰ্ব্ব আনন্দের দিন—অনেককাল পরে যখন কলকাতায় আসব সদরের হুকুম পেলুম—সেই বাকে সিং, সেই দিগন্ত বিস্তীর্ণ কাশবনের প্রাস্তে আমাদের খড়ের কাছারী ঘর ! এখনও চোখের সামনে দেখচি । অবকাশ পেলে ইসমাইলপুর অঞ্চলে একবার যেতে হবে—এ বছরই যাব ভেবেচি। vপূজার ছুটি হল আজ—আজই বনগী থেকে এসেচি–কল্যাণীর মনে দুঃখ হয়েচে হয় তো। কাল সে বলেছিল, যাবেন না খয়রামারি বেড়াতে বিকেলে, কিছুতেই যাবেন না। যেতে নাহি দিব’–কিন্তু ও বলে ছোট মেয়ের মত জোর করে, আমি ওর কোন কথাই রাথি নে, ওর কথা ঠেলে জোর করে চলে যাই। ও আবার বলে তবুও, বোঝে না যে ওর কথা রাখচি নে—অন্য মেয়ে হলে অভিমান করে আর বলে না। কিন্তু রোজই বলে, রোজই কথা অবহেলা করি—অথচ ও বলতে ছাড়ে না একদিনও—সেই পুরোনো স্বরে যেতে নাহি দিব”—ও বড় সরলা ! অমন সরলা মেয়ে আমি কোথাও দেখি নি । আজ ছুটি হলে শুনলুম স্কুলে শারদীয় উৎসব হবে। কিন্তু সে উৎসবে আমি থাকতে পারি নি—বড় দেরি হয়ে গেল বলে যোগ দিতে পারলুম না। এলুম এম. সি. সরকার, মিত্র ও ঘোষ, 'দেশ' আপিস,ফুলুর মায়ের বাড়ি, ক্ষিতীশ ভট্চাজের ‘মাসপয়ল' আপিস ও তারপর বাসা । কল্যাণীর কথা কিন্তু বড় মনে হচ্চে আজ সারাদিন । তার চোখে জল দেখে এসেচি ভোরবেলা । - বারাকপুরে গ্রাম্যজীবন কিছুদিনের জন্তে যাপন করবার বড় ইচ্ছে—কত দিন যে এ ধরণের জীবন কাটাই নি—মাটির সঙ্গে যোগ থেকে.গ্ৰাম্য গৃহস্থ সেজে। আবার সেই শৈশবের জগৎটা আবিষ্কার করব—এই মনে আকাঙ্ক্ষা । আমাদের বাড়ির পেছনে বঁাশবনে, এই শরৎকালের দুপুরে গাছপালায়, ঘুঘুর ডাকে কি যেন মায়া মেশানো ছিল—বনভূমি যেন স্বপ্নমাথ, ১৯৩৪ সালের দোলের সময়েও আমি তেমনি স্বপ্নমাখা দেখেছি বনভূমিকে—মাত্র সাত বছর আগে । কিন্তু শহরের কলকোলাহলময় ব্যস্তসমস্ত জীবনযাত্রার মধ্যে যে স্মৃতি আমার মনে ক্ষীণ হয়ে আসচে, যে জীবনকে ভুলে যাচ্চি, আবার সে জীবনকে আস্বাদ করবার জন্তে ব্যগ্র হয়ে পড়েচি—অন্ততঃ কিছুদিনের জন্যও আমার তা করতে হবে। অন্ত লোকে সে কথা কি বুঝবে ? কল্যাণী কাল বলছিল আর বছরের মত—আমার গা ছুয়ে বলে যান, আধ ঘণ্টার মধ্যে আসবেন ! তা এলুম না। ওর মনে দুঃখ হল। পা ছুয়ে বল্লে, তাই যদি না করা যায়, তবে মানুষ মরে যায় জানেন ? এও আপনি করলেন ! লোকের জীবন-মরণটাও দেখলেন না ? এই সন্ধ্যায় সেকথা ভেবে মনে কষ্ট হচ্চে-ওর কথাটা শুনলেই হোত ছাই । মিথ্যে ওর মনে কেন কষ্ট দেওয়া ? ওর তরুণ মনের স্নেহ ও আগ্রহকে বার বার করে ঠেলে গেলাম অবহেলায়—তবুও ও বোঝে ন, মনে কিছু ভাবে না—আবার সেই রকমই বলে । o কাছের মসজিদে আজান দিচ্চে। ক'দিন খুব ভোরে বিছানার শুয়ে আজানের শব্দ শুনে