পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8e Ե- বিভূতি-রচনাবলী ছেলেটি এসে আমার খবর দিলে। গাড়ি ঠিক হয়ে গেল। পরদিন সকালে আমরা তিনখানা গাড়ি করে সবাই মিলে (বৌমা ও মুটু তখন ওখানে নয়) রওনা হই। ধারাগিরির পথের শোভা, বিশেষতঃ পাশটার শোভা দেখে আমার দাৰ্জিলিং অকল্যাণ্ড রোডের কথা মনে পড়ল । তবে অকল্যাও রোড শহরের মধ্যে—আর এর চারিধারে শ্বাপদ অধুষিত বিজন আরণ্যভূমি— এই যা পার্থক্য । সেখানে ঝর্ণার ধারে বসে কল্যাণী যখন রান্না করচে—তখন আমি পথের দাবী' পড়চি। ভাবতে আশ্চৰ্য্য লাগল যে গত ১৯২৬ সালে ভাগলপুরে থাকতে সুরেন গাঙ্গুলীর পল্লী-ভবনে বসে অামি প্রথম পথের দাবী’ পড়ি । সেও বিহারে, এবারও পড়লাম বিহারে । তখন এও জানতুম না আমায় আবার বিয়ে করতে হবে । জীবনের জটিল রহস্যের সন্ধান কে কবে দিতে পেরেচে ? খাওয়া-দাওয়ার পরে কল্যাণী, উমা, আমি ও সৌরীনবাবুর ভাইপো পাহাড়ে উঠে ধারাগিরি ঝর্ণার ওপরের অংশে গিয়ে কতক্ষণ বসলুম। ফিরবার পথে শালবনে কি মুন্দর জ্যোৎস্না উঠল! গত সোমবারে ওখান থেকে দুপুরের ট্রেনে রওনা হয়ে মেসে এলুম সন্ধ্যার সময়। নাকি জগদ্ধাত্রী পূজার দু'দিন বন্ধ। সময় নষ্ট করি কেন ? তখুনি ট্রেনের খোজে শেয়ালদ গিয়ে দেখি সিরাজগঞ্জ প্যাসেঞ্জার ছাড়ছে। তাতে উঠে চলে গেলুম রাণাঘাট—খিমুদের বাড়ি গিয়ে উঠি । তার চা খাওয়ালে। খিচু অনেকক্ষণ গল্প করলে । পরদিন ভোরের ট্রেনে গোপালনগরে এসে নামলুম—নিজের দেশের মাটিতে পা দিতেই যেন শরীর শিউরে উঠল। সেই আবাল্য পরিচিত প্রথম কাৰ্ত্তিকের বনঝোপের সুগন্ধ, বনমরচে লতায় থোকা থোকা ফুল ফোট, সেই স্নিগ্ধ হেমস্তের ছায়া। গোপালনগর বাজারে রায় সাহেব হাজারি প্রথমে ডাক দিলে, তারপর পাচু পরামাণিকের দোকানে সেই কুণ্ডুমশায়—যুগল ময়রার দোকানে বসে টাটক৷ তেলেভাজা কচুরী কিনে খেলুম—বিষ্ণু জল দিলে খেতে । বাড়ি আসতে আটটা বেজে গেল। বুড়ী পিসীমার বাড়ি ন’দি বসে গল্প করচে–ওদের দাওয়ায় গিয়ে বসি—ঘাটশিলা ও কল্যাণীর পাহাড়ে ওঠার গল্প হয়। নদীতে স্নান করতে গিয়ে স্নিগ্ধ নদীজলের স্নেহস্পর্শে যেন সারা শরীর জুড়িয়ে গেল । নদীর তীরে বন-ঝোপের কি মায়া, বনসিমলতার ঝোপের কি ঘন ছায়া, থোকা থোকা বেগুনি রংয়ের বনসিমলতার ফুল ফুটেছে—বনমরচে ফুলের সুবাস সৰ্ব্বত্র । মন ভরে গেল আননে, এমন আনন্দ আর কোথাও পাই নি মুক্ত কণ্ঠে তা স্বীকার করি । বাল্যের কত স্মৃতি মিশিয়ে আছে এই সুবাসের সঙ্গে—তা কত গভীর, কত করুণ ! জিতেন কামারের বাড়িতে স্বরপতি মিস্ত্রী রোয়াক গাথচে—সেখানে ইন্দু রায় নিয়ে গিয়ে বসালে পরদিন সকালে। মুচুকুন্দ চাপার তলায় পতিত, গজন, মনে রায়, ফণি কাকা মিটিং বসিয়েচে । সেখানে এলো হাজারি ঘোষের জামাই লালমোহন । তার সঙ্গে ওরা স্কুলের মাস্টার বরখাস্ত করা নিয়ে বাধালে ঝগড়া। আমি সরে পড়লুম বেগতিক দেখে। বৈকালে নৌকোয় গুটুকে ও আমি বনগী এলুম—যেন জাহ্নবীর বাসা এখনো আছে–ছুটির পরে সেখানে যাচ্চি। লিচুতলায় এসে মনোজ, জয়কৃষ্ণ, যতীনদার সঙ্গে বসে ভ্রমণ-কাহিনী বর্ণনা করি। বিকেলে শুধু ছিলুম সরোজ ও আমি, মন্মথদাও। সন্ধ্যবেলায় গোপালদা, যতীনদ, জয়কৃষ্ণ, মনোজ, মন্মথদা ও বিনয়দা । খুব জ্যোৎস্না। কাল গেল vজগদ্ধাত্রী পূজা। আজ সকালে বরিশাল এক্সপ্রেসে কলকাতা এসেচি। আজ বৃহস্পতিবার, এই মাত্র বারবেলা থেকে এলুম—আর কেউ ছিল না, রাম, বুদ্ধদেববাবু ও আমি । এইমাত্র ঘাটশিলা থেকে একু করে। গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে বারাকপুর গিয়েছিলুম আবার । ফুটে স্টেশনে এসেছিল--ছটা ডিম নিয়ে রাধতে দিলুম মান্বকে বাড়ি পৌঁছে। খুব