পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8} e বিভূতি-রচনাবলী বাসে চলে এলুম। মিতে কাল বিকেলে এসেছিল, আজ ঘাটশিলা এতক্ষণ গিয়ে পৌছেচে । আজ কোন কাজ ছিল না, ওবেলা বলে বসে পরীক্ষার কাগজগুলো দেখলুম স্কুলের (Class) ছেলেদের—তারপর রমাপ্রসয়ের বাড়ি বসে খুব আড দেওয়া গেল গোঁর পালের সঙ্গে। স্কুল ও কলকাতা দুইই ছাড়ব শিগগির। যেখানে যা আগে আগে করতাম—তা আর একবার বালিয়ে নিচ্চি। যেমন, আজ এবেলা গেলুম সাত রাগাছি ননীর বাড়ি, জতু নেই, তার মার সঙ্গে বার । হয়ে গিয়েচে । ননীর কাছে বসে বসে ঘাটশিলা ও কল্যাণীর গল্প করলুম, ধারাগিরির বর্ণনা করলুম—মাস্টার মশাইও ছিলেন। তিনি আবার কোথায় যাত্রা হচ্চে বলে উঠে চলে গেলেন— আমরা বসে অনেক রাত পৰ্য্যন্ত গল্প করি, কল্যাণীর চিঠি ওকে পড়িয়ে শোনাতে হল । ননী বড় প্রকৃতিরসিক, বল্লে—আমি ঘাটশিলা যাব বেড়াতে । আমি ওকে যেতে বলেচি । একটা নতুন জীবনের শুরু। এখনও চাকরিতে আছি, কিন্তু ১লা জানুয়ারী ১৯৪২ থেকে চাকরি ছেড়ে দেব। সেটা কাগজে কলমে অবিশ্বি, আসলে ছেড়েই দিয়েচি। বেশ স্বাধীন জীবনের আস্বাদ এখন থেকেই পাচ্চি। ঘাটশিলাতে এসেচি—কলকাতা থেকে আসবার সময় জাপানী বোমার ভরে উৰ্দ্ধশ্বাসে পলায়নরত জনতার ভিড়ের মধ্যে অতি কষ্টে ইণ্টার ক্লাসে একটু জায়গা করে নিলাম। প্রথমটা মনে হয়েছিল জায়গা পাব ন!—সেকেণ্ড ক্লাসের টিকিট কাটব । অনেক পরে মেস্ ছেড়ে দিলুম এবার। রাত্রে আমার এক ছাত্র এসে মেসেই শুয়ে রইল— শেষ রাত্রে উঠে ব্ল্যাক-আউটের অন্ধকারের মধ্যেই দুখানা রিকৃশ করে ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে পৌছানো গেল। ১৯২৩ সালে কলকাতায় মীর্জাপুর স্ত্রীটের মেসে ঢুকেছিলাম— সেই থেকে ওই একই মেসে, একই অঞ্চলে কাটিয়েচি । কতকাল পরে মেসের জীবন ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম। বহুদিনের পুরোনো কাগজপত্র বিক্রি করে ফেললাম। বোঝা বাড়িয়ে লাভ কি! পুরোনো কাগজপত্রের ওপর মায়াবশতই তাদের এতদিন ছাড়তে পারি নি—আজ জাপানী বোমার হিড়িকে যে সেগুলো ছেড়ে এলুম তা নয়—আনবার জায়গা নেই—এনে ঘাটশিলায় এই ছোট বাড়িতে রাথি কোথায় ? রোজ সকালে শালবনে এসে বসে লেখাপড়া করি । মিতেরা এখানে ছিল, ভয় পেয়ে চলে গিয়েচে । দিব্যি জ্যোৎস্না উঠেচে, দিগন্তনীল শৈলশ্রেণী ও প্রাস্তরে অপূৰ্ব্ব শোভা। এই সব পরিপূর্ণ আকাশের মধ্যে দিয়ে চমৎকার ভাবে উপভোগ করি—অবশু অবকাশের সময় এখনও ঠিক আসে নি—কারণ এ সময় তো বড়দিনের ছুটি আছেই—চাকরি যে ছেড়ে দিয়েচি-সে জ্ঞানটা এখনও এসে পৌছয় নি মনে। তার ওপর জাপানী বোমার ভয় । মৌভাণ্ডার কারখানা আছে—সবাই বলচে, এখানে কি বোমা না পড়ে যায় ! অনেকদিন পরে আমার রিপন কলেজের সহপাঠী বন্ধু কল্যাণীর সঙ্গে সেদিন দেখা হল নদীর ধারে স্বামীজীর আশ্রমে। তাকে বাড়ি নিয়ে এসে চা খাইয়ে দিলাম। বিকেলে তার পরদিন ওকে নিয়ে বেড়িয়ে এলাম ‘বিজয় কুটির পর্য্যন্ত ও মুটুর ডাক্তারখানা। দেশে এসে বহুদিন পরে বারাকপুরে বাড়ি সারিয়ে বাস করচি। বৈশাখ মাসের প্রথমে এখানে এলুম-এর আগে চালকীতে ছিলাম। বেশ লাগচে-গোপালনগরে স্কুল-মাস্টারি করি। রোজ মর্নিং স্কুল থেকে ফিরে নদীতে স্নান করে আসি। বেশ লাগে ।