পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ \లు) সেজ খুড়ীমা এসে বললেন—মুড়ি খাবি জিতু ? আমি ও সীতা মুড়ি খেয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম । r তিন বছর আগেকার কথা এসব । তার পর থেকে এ বাড়িতেই আছি। জ্যাঠামশাইরা প্রথমে রাজি হন নি, দাদা ষষ্ঠতলায় বটগাছের নীচে মুদিখানার দোকান করেছিল—সামান্ত পুজি, আড়াই সের চিনি, পাচ সের ভাল, পাচ সের আট, পাচ পোয় ঝাল-মশলা—এই নিয়ে দোকান কতদিন চলে 1 দাদা ছেলেমানুষ, তা ছাড়া ঘোরপেচ কিছু বোঝে না, একদিক থেকে সব ধারে বিক্রী করচে, যে ধারে নিয়েচে সে আর ফিরে দোকানের পথ মাড়ায় নি । দোকান উঠে যাওয়ার পরে দাদা চাকরির চেষ্টায় বেরুলো, সে তার ছোট মাথায় আমাদের সংসারের সমস্ত ভাবনা-ভার তুলে নিয়ে বাবার প্রতিনিধি রূপে আমাদের খাওয়া-পরানোর দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমুতো না, সারা দিন চাকরি খুঁজে বেড়াত। নস্তির কারখানায় একটা সাত টাকা মাইনের চাকরিও পেল—কিন্তু বেশীদিন রইল না, মাস-দুই পরে তারা বললে—ব্যবসার অবস্থা খারাপ, এখন লোক দরকার নেই। সুতরাং জ্যাঠামশায়দের সংসারে মাথা গুজে থাকা ছাড়া আমাদের উপায় বা কি ? নিতাপ্ত লোকে কি বলবে এই ভেবে এর রাজী হয়েছেন । কিন্তু এখানে আমাদের খাপ খণর নীএখানে মাত্র যে শুধু এ বাড়িতে তা নয়, এ দেশটার সঙ্গেই খাপ খায় না । বাংলা দেশ আমাদের কারও ভাল লাগে না—আমার না, দাদার না, সীতার না, মায়েরও না । না দেশটা দেখতে ভাল, না এখানকার লোকের ভাল । আমাদের চোখে এ দেশ বড় নিচু, অঁাটার্সাটা, ছোট ব’লে মনে হয়—যে-দিকেই চাই চোখ বেধে যায়, হয় ঘরবাড়িতে, না হয় বাশবনে আমবনে । কোথাও উচুনীচু নেই, একঘেয়ে সমতলভূমি, গাছপালারও বৈচিত্র্য নেই। আমাদের এ গায়ের যত গাছপালা আছে, তার বেশীর ভাগ এক ধরনের ছোট ছোট গাছ, এর নাম বলে আশশেওড়, তাদের পাতায় এত ধুলো যে সবুজ রঙ দিনরাত চাপা পড়ে থাকে। এখানে সব যেন দীনহীন, সব যেন ছোট মাপকাঠির মাপে গড় । আমাদের দিক থেকে তো গেল এই ব্যাপার। ওঁদের দিক থেকে ওঁরা আমাদের পর ক’রে রেখেছেন এই তিন-চার বছর ধরেই । ওঁদের আপনার দলের লোক ব’লে ওঁরা আমাদের ভাবেন না। আমরা খিরিস্টান, আচার জানিনে, হিন্দুয়ানী জানিনে—জংলী জানোয়ারের সামিল, গারো পাহাড়ী অসভ্য মাচুষদের সামিল। পাহাড়ী জাতিদের সম্বন্ধে ওঁরা যে খুব বেশী জানেন তা নয়—এবং জানেন না বলেই তাদের সম্বন্ধে ওঁদের ধারণা অভূত ও আজগুবী ধরনের । এদেশে শীতকাল নেই—মাস দুই-তিন একটু ঠাণ্ড পড়ে। তা ছাড়া সারা বছর ধরে গরম লেগেই আছে—আর সে কি সাংঘাতিক গরম ! সে গরমের ধারণা ছিল না কোন কালে আমাদের। রাতের পর রাত ঘুম হয় না, দিনমানেও ঘামে বিছানা ভিজে যায় ব’লে ঘুম হয় না । গা জলে, মাথার মধ্যে কেমন করে, রাত্রে যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এক-একদিন । তার ওপরে মশা । কি মুখেই লোকে এ-সব দেশে বাস করে ! বি. : - 8-را مسدس