পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভরসায় দাদা ওকে এখানে নিয়ে এল দ্যাথো তো ? - যা ভয় করেছি, তাই হ’ল । হীরুকে অসুখ গায়ে হাত ধ’রে বাড়িতে এনেছে দাদা, এ কথা বিছাবেগে বাড়ির মধ্যে প্রচার হয়ে যেতেই আমার খুড়তুতো জাঠতুতো ভাইবোনের সব মজা দেখতে বাইরের উঠোনে ছুটে এল, সেজকাক এসে বললেন—“না না—এখানে কে নিয়ে এল ওকে ? এখানে জায়গা কোথায় যে রাখা হবে ?” কিন্তু ততক্ষণে জ্যাঠামশায়দের চণ্ডীমণ্ডপের দাওয়ায় হীরু শুয়ে ধুকছে, দাদা চণ্ডীমণ্ডপের পুরোনো সপট তাকে পেতে দিয়েছে। তখনি একটা ও-অবস্থার রোগীকে কোথায় বা সরানো যায় ? বাধ্য হয়ে তখনকার মত জায়গা দিতেই হ’ল। কিন্তু এর জন্তে কি অপমানটাই সহ করতে হ’ল দাদাকে । এই জন্তেই বলচি দিনটা কখনো ভুলবো না। দাদাকে আমরা সবাই ভালবাসি, আমি সীতা দুজনেই। আমরা জানি সে বোকা, তার বুদ্ধি নেই, সে এখনও আমাদের চেয়েও ছেলেমানুষ, সংসারের ভালমন্দ সে কিছু বোঝে না, তাকে বাচিয়ে আড়াল করে বেরিয়ে আমরা চলি । দাদাকে কেউ একটু বকলে আমরা সূহ করতে পারিনে, আর সেই দাদাকে বাড়ির মধ্যে ডেকে নিয়ে গিয়ে প্রথমে সেজকাকা আথালিপাথালি চড়চাপড় মারলেন। বললেন, বুড়ো ধাড়ী কোথাকার, ওই স্থাপ-কাশের রুগী বাড়ি নিয়ে এলে তুমি কার ছকুমে ? তোমার বাবার বাড়ি এটা ? এতটুকু জ্ঞান হয় নি তোমার ? সাহসও তো বলিহারি, জিজ্ঞেস না বাদ না কাউকে, একটা কঠিন রুগী বাড়ি নিয়ে এসে তুললে কোন সাহসে ? নবাব হয়েছ না ধিঙ্গী হয়েছ ? না তোমার চা-বাগান পেয়েছ ? এর চেয়ে বেশী কষ্ট হ’ল যখন জ্যাঠাইমা অনেক গালিগালাজের পর রোয়াকে দাড়িয়ে হুকুম জারি করলেন, “যাও, রুগী ছয়ে ঘরে দোরে উঠতে পাবে না, পুকুর থেকে গায়ের ও-কোটযুদ্ধ ডুব দিয়ে এস গিয়ে ।” মাঘ মাসের শীতের সন্ধ্যা আর সেই কনকনে ঠাণ্ড পুকুরের জল—তার ওপর চা-বাগানের আমলের ওই ছেড়া গরম কোটট ছাড়া দাদার গায়ে দেবার আর কিছু নেই, দাদা গায়ে দেবে কি নেয়ে উঠে ? সীতা ছুটে গিয়ে শুকনে কাপড় নিয়ে এসে পুকুরের ধারে দাড়িয়ে রইল। মাও এসে দাড়িয়ে ছিলেন, তিনি ভালমানুষ, দাদাকে একটা কথাও বললেন না, কেবল ঠকৃঠক ক’রে র্কাপতে কাপতে জল থেকে সে যখন উঠে এল তখন নিজের হাতে গামছা দিয়ে তার মাথা মুছিয়ে দিলেন, সীতা শুকনে কাপড় এগিয়ে দিলে, আমি গায়ের কোটটা খুলে পরতে *. রাত্রে মা সাৰু ক’রে দিলেন আমাদের ঘরের উকুনে—দাদা গিয়ে হীরুঠাকুরকে १ोंश्cग्न ७}ठ । সকালবেলা সেজকাকা ও জ্যাঠামশাই দত্তদের কাটালবাগানের ধারে পোড়ো জমিতে বাড়ির কৃষাণকে দিয়ে খেজুরপাতার একটা কুঁড়ে বাধালেন এবং লোকজন ডাকিয়ে হীরুকে ধরাধরি করে সেখানে নিয়ে গেলেন। দাদা চুপিচুপি একবাটি সাধু মা'র কাছ থেকে ক’রে নিয়ে দিয়ে এল। দিন-দুই এই অবস্থায় কাটলো। মুখুজ্জে-বাড়ির বড়মেয়ে নলিনীদি রাত্রে একবাটি বার্লি দিয়ে আসতে আর সকালবেলা যাবার সময় বাটটা ফিরিয়ে নিয়ে যেত। একদিন রাতে দাদা বললে—“চল জিতু, আজ হীরুজ্যাঠার ওখানে রাতে থাকবি ? রামগতিকাকা দেখে বলেছে অবস্থা খারাপ। চল আগুন জালাবো এখন, বড্ড শীত নইলে " রাত দশটার পর আমি ও দাদা দুজনে গেলাম। আমরা যাওয়ার পর নলিনীদি সাৰু নিয়ে এল। বললে, “কি রকম আছে রে হীরুকাক ?” তারপর সে চলে গেল। নারকোলের