পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 e বিভূতি-রচনাবলী সাহস হ’ল না । মাকে মেমে পড়াত সে-কথা ওঁদের কানে যাওয়া থেকে মানুষের ধারা থেকে আমরা নেমে গিয়েছি ওঁদের চোখে—আমরা খৃষ্টান, আমরা নাস্তিক, পাহাড়ী জানোয়ার— ঘরদোরে ঢুকবার যোগ্য নই। বৈশাখ মাসের প্রতিদিন কত কি খাবার তৈরি হতে লাগল ঠাকুরের ভোগের জন্তে—ওঁরা পাড়ার ব্রাহ্মণদের নিমন্ত্রণ ক’রে প্রায়ই খাওয়াতেন, রাত্রে শীতলের লুচি ও ফল-মিষ্টান্ন পাড়ার ছেলেমেয়েদের ডেকে দিতে দেখেছি তবুও সীতার হাতে একখানা চন্দ্রপুলি ভেঙে আধখানিও কোন দিন দেন নি। জ্যাঠাইম। এ সংসারের কত্রী, কারণ জ্যাঠামশাই রোজগার করেন বেশি। ফসর্ণ মোটসোট এক-গা গহনা, অলঙ্কারে পরিপূর্ণ–এই হলেন জ্যাঠাইমা । এ-বাড়িতে নববধূরূপে তিনি আসবার পর থেকেই সংসারের অবস্থা ফিরে যায়, তার আগে এদের অবস্থা খুব ভাল ছিল না— তাই তিনি নিজেকে ভাবেন ভাগ্যবতী । এ-বাড়িতে র্তার উপর কথা বলবার ক্ষমতা নেই কারও। তার বিন হুকুমে কোন কাজ হয় না। এই জ্যৈষ্ঠ মাসে এত আম বাড়িতে, বোঁদের নিয়ে খাবার ক্ষমতা নেই, যখন বলবেন খাও গে, তখন খেতে পাবে। জ্যাঠামশায়ের বড় ও মেজ ছেলে, শীতলদা ও সলিলদার বিয়ে হয়েছে, যদিও তাদের বয়েস খুব বেশী নয় এবং তাদের বৌয়েদের বয়েস আরও কম—দুই ছেলের এই দুই বেী ও বাড়িতে গলগ্রহ হয়ে আছে এক ভাগ্নেবে তার ছেলেমেয়ে নিয়ে, আর আমার মা আমাদের নিয়ে—এ ছাড়া ভুবনের মা আছে, কাকীমারা আছেন—এর মধ্যে এক ছোট কাকীমা বাদে আর সব জ্যাঠাইমার সেবাদাসী । ছোট কাকীমা বাদে এইজন্যে যে তিনি বড়মানুষের মেয়ে—তার উপর জ্যাঠাইমার প্রভুত্ব বেশি থাটে না । প্রতিদিন খাওয়ার সময় কি নিলাজ কাগুটাই হয়! রোজ রোজ দেখে সয়ে গিয়েছে যদিও, তবুও এখনও চোখে কেমন ঠেকে। রান্নাঘরে একসঙ্গে ভাগ্নে, জামাই, ছেলেরা খেতে বসে। ছেলেদের পাতে, জামাইয়ের পাতে বড় বড় জামবাটিতে ঘন দুধ, ভাগ্নেদের পাতে হাত ক’রে দুধ । মেয়েদের খাবার সময় সীত, ভাগ্নেবেী এরা সবাই কলায়ের ডাল মেথে ভাত খেয়ে উঠে গেল—নিজেদের দল, দুই বেী, মেয়ে নলিনীদি, নিজের জন্তে বাটিতে বাটিতে দুধ আম বাতাসা। নলিনীদি আবার মধু দিয়ে আম দুধ খেতে ভালবাসে—মধুর অভাব নেই, জ্যাঠামশাই প্রতি বৎসর আবাদ থেকে ছোট জালার একজালা মধু নিয়ে আসেন—নলিনীদি দুধ দিয়ে ভাত মেখেই বলবে, মা আমায় একটু মধু দিতে বল না সন্ধুর মাকে। কালেভদ্রে হয়ত জ্যাঠাইমার দয়া হ’ল—তিনি সীতার পাতে দুটাে আম দিতে বললেন কি এক হাতা দুধ দিতে বললেন—নয়তে ওরা ওই কলায়ের ভাল মেখে ভাত খেয়েই উঠে গেল। সীতা সে-রকম মেয়ে নয় যে মুখ ফুটে কোন দিন কিছু বলবে, কিন্তু সেও তো ছেলেমানুষ, তারও তো খাবার ইচ্ছে হয় ? আমি এই কথা বলি, যদি খাবার জিনিসের বেলায় কাউকে দেবে, কাউকে বঞ্চিত করবে, তবে একসঙ্গে সকলকে খেতে না বসালেই তো সব চেয়ে ভাল ? একদিন কেবল সীতা বলেছিল আমার কাছে—দাদা, জ্যাঠাইমারা কি রকম লোক বল দিকি ? মা তাল তাল বাটনা বাটবে, বাসন মাজবে, রাজ্যির বাসি কাপড় কাচবে, কিন্তু এত ভাবের ছড়াছড়ি এ বাড়িতে, গাছেরই তো ডাব, একাদশীর পরদিন মাকে কোনো দিন বলেও না যে একটা ভাব নিয়ে খাও । আমি মুখে মুখে বানিয়ে কথা বলতে ভালবাসি। আপন মনে কখনও বাড়ির কৰ্ত্তার মত কথা বলি, কখনও চাকরের মত কথা বলি। সীতাকে কত শুনিয়েছি, একদিন মাকেও শুনিয়েছিলাম। একদিন ও-পাড়ার মুখুজ্জেবাড়িতে বীরুর মা, কাকীম, দিদি এরা সব ধরে