পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 8-9 মেঘের একটা পাহাড় দেখাচ্ছে ঠিক যেন বরফে মোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘা—একটা হাত ভাঙা যদিও কিন্তু কি সুন্দর যে মুখ মূৰ্ত্তিটার, কি অপূৰ্ব্ব গড়ন—আমার হঠাৎ মনে হ’ল ওই পাথরের মূৰ্ত্তির পবিত্র মুখের সঙ্গে ক্রুশবিদ্ধ যীশুখৃষ্টের মুখের মিল আছে—কেউ ছিল না তাই দেখেনি—আমার চোখে জল এল, আমি একদৃষ্টিতে মুক্তিটার মুখের দিকে চেয়েই আছি—ভাবলাম জ্যাঠামশায়রা পাথরের হুড়ি পূজো করে কেন, এমন সুন্দর মূৰ্ত্তির দেবতা কেন নিয়ে গিয়ে পূজো করে না ? তারপরে শুনেছি ঐ দীঘি খুড়বার সময়ে আজ প্রায় পচিশ বছর আগে মূৰ্ত্তিটা হাতভাঙা অবস্থাতেই মাটির তলায় পাওয়া যায়। সীতাকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছিলাম একবার—একবার সীতা জবা, আকন্দ, ঝুমকে ফুলের একছড়া মালা গেঁথে মূৰ্ত্তির গলায় পরিয়ে দিয়েছিল। অমন সুন্দর দেবতাকে আজ পচিশ বছর অনাদরে গ্রামের বাইরের পুকুরপাড়ে অমন করে কেন যে ফেলে দিয়েছে এরা ! একবার একখানা বই পড়লাম—বইখানার নাম চৈতন্যচরিতামৃত । এক জায়গায় একটি কথা পড়ে আমার ভারি আনন্দ হ’ল। চৈতন্তদেব ছেলেবেলায় একবার আঁস্তাকুড়ে, এটো হাড়িকুড়ি যেখানে ফেলে, সেখানে গিয়েছিলেন বলে তার মা শচীদেবী খুব বকেন। চৈতন্যদেব বললেন—ম পৃথিবীর সর্বত্রই ঈশ্বর আছেন, এই আঁস্তাকুড়েও আছেন । ঈশ্বর যেখানে আছেন, সে-জায়গা অপবিত্র হবে কি ক'রে ? - ভাবলাম জ্যাঠাইমার বিরুদ্ধে চমৎকার যুক্তি পেয়েছি ওঁদের ধর্মের বইয়ে, চৈতন্তদেব অবতার, তারই মুখে। জ্যাঠাইমাকে একদিন বললাম কথাটা । বললাম—জ্যাঠাইম, আপনি যে বাড়ির পিছনে বাশবনে গেলে কি শেওড়া গাছে কাপড় ঠেকলে হাত-পা না ধুয়ে, কাপড় না ছেড়ে ঘরে ঢুকতে দেন না, চৈতন্যচরিতামৃতে কি লিখেছে জানেন ? চৈতন্যদেবের সে কথাটা বলবার সময়ে আনন্দে মন আমার ভরে উঠল—এমন নতুন কথা, এত সুন্দর কথা আমি কখনও শুনিনি। - ভাবলাম জ্যাঠাইমা বই পড়েন না ব'লে এত সুন্দর কথা যে ওঁদের ধৰ্ম্মের বইয়ে আছে তা জানেন না—আমার মুখে শুনে জেনে নিশ্চয়ই নিজের ভুল বুঝে খুব অপ্রতিভ হয়ে যাবেন। জ্যাঠাইমা বললেন—তোমাকে আর আমায় শাস্তর শেখাতে হবে না । তিনকাল গিয়ে এককালে ঠেকেচে, উনি এসেচেন আমাকে শাস্তর শেখাতে ! হিন্দুর আচার-ব্যবহার তোরা জানবি কোথেকে রে ডেপো ছোড়া। তুই তো তুই, তোর মা বড় জানে, তোর বাবা বড় জানতো— আমি অবাক হয়ে গেলাম । জ্যাঠাইম এমন সুন্দর কথা শুনে চটলেন কেন ? তা ছাড়া আমি নিজে কিছু বলেছি কি ? আগ্রহের সুরে বললাম—আমার কথা নয় জ্যাঠাইমা, চৈতন্যদেব বলেছিলেন তার মা শচীদেবীকে—চৈতন্যচরিতামৃতে লেখা আছে—দেখাবো বইখানা ? খুব তকোবাজ হয়েচ ? থাক, আর বই দেখাতে হবে না। তোমার কাছে আমি গুরুমস্তর নিতে যাচ্ছিনে—এখন যাও আমার সামনে থেকে, আমার কাজ আছে—তোমার তঙ্কো গুনবার সময় নেই। বা রে, তর্কবাজির কি হ’ল এতে ? মনে কষ্ট হ'ল আমার । সেই থেকে জ্যাঠাইমাকে আর কোন কথা বলিনি । সীতা ইতিমধ্যে এক কাও ক'রে বসল। জ্যাঠামশাইদের বাড়ির পাশে ঘছু অধিকারীর