পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 8& ! সেইখানে দাড়িয়ে—তাকে একটা মিষ্টি কথাও বললেন না। আমার রাগ হ’ল, তিনি কি ভেবেচেন দাদা বাড়ির চাকর ? তাও ভাবা অসম্ভব এই জন্তে যে, ওখানে যতগুলো ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে ভিড় ক’রে আছে, তাদের মধ্যে দাদার রূপ সকলের আগে চোখকে আকৃষ্ট করে—এ গারে দাদার মত রূপবান বালক নেই, শুধু এ বাড়ি তো দূরের কথা। আশা করে দাড়িয়ে আছে, একটা ভাল কথাও তো বলতে হয় তার সঙ্গে ? গুরুদেবের জন্তে বিকেলে বাড়িতে কত কি খাবার তৈরি হ’ল—মেজখুড়ীম, সন্ধুর মা, জ্যাঠাইমা—সবাই মিলে ক্ষীরের, নারিকেলের, ছানার কি সব গড়লেন। মাকে এসব কাজে ডাক পড়ে না, কিন্তু দেখে একটু অবাক হ’লাম সদ্বর মাকে ওঁরা এতে ডেকেচেন ! মা আর সম্বর মার ওপর যত উঃ কাজের ভার এ বাড়ির। সন্ধুর মা'র অদৃষ্ট ভাল হয়েচে দেখচি। গুরুদেব সন্ধ্যা-আহ্নিক সেরে বাইরে এলে তাকে যখন খাবার দেওয়া হ’ল,তখন সেখানে বাড়ির ছেলেমেয়ে সবাই ছিল—আমরাও ছিলাম। কিন্তু হিরণদিদি ও সেজকাকীমা সকলকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিলেন। গুরুদেব বললেন—কেন ওদের যেতে বলচ বেীমা, থাকু না, ছেলেপিলেরা গোলমাল করেই থাকে— গুরুদেব তিন-চারদিন রইলেন। তার জন্তে সকালে বিকালে নিত্যনূতন কি খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাই যে হ'ল! পিঠে, পায়েস, সন্দেশ, ছানার পায়েস, ক্ষীরের ছাচ, চন্দ্রপুলি, লুচি—তিনি তো খেতে পারতেন না—আমরা বাদে বাড়ির অন্ত ছেলেমেয়েরা তার পাতের প্রসাদ পেত। তিনি জলখাবার খেয়ে উঠলে তার রেকাবিতে বা থালায় যা পড়ে থাকত, কাকীমার ডেকে ছেলেমেয়েদের দিতেন—আমরা সেখানে থাকতাম না—কারণ প্রথম দিকে ছেলেমেয়ের সেখানে থাকলে কাকীমা বকতেন—তার পর গুরুদেবের খাওয়া হয়ে গেলে যখন তাদের ডাক পড়ত, তখন বাড়ির ছেলেরা কাছে কাছেই থাকতো ব’লে তারাই যেত—আমি কারুর পাতের জিনিস খেতে পারিনে, এই জন্তে আমি যেতাম না। ওঁরা ডেকেও কোনো খাবার জিনিস আমাদের কোনো দিন দিলেন না—কিন্তু মনে মনে আমি হতাশ হলাম— আমি একেবারে যে আশা করিনি তা নয়, ভেবেছিলাম গুরুদেব এলে আমরা সবাই ভাল খাওয়ার ভাগ পাব কিছু কিছু। সন্ধ্যাবেলা। বেশ শীত পড়েচে । গুরুদেব আমলকীতলায় কাঠের জলচৌকিতে কম্বল পেতে বসে আছেন , পায়ে সবুজ পাড়-বসানো বালাপোশ-ছেলেমেয়ের সব ঘিরে আছে, যেমন সৰ্ব্বদাই থাকে ; একটু পরে জ্যাঠাইম, মেজকাকীম, সদ্বর মা, হিরণদিদি এলেন। গুরুদেবের খুব কাছে আমি কোনো দিন যাইনি—আমি গোয়ালঘরের কাছে দাড়িয়ে আছি, ছেলেমেয়েরা গল্প শুনচে গুরুদেবের কাছে, আমার কিন্তু গল্পের দিকে মন নেই, আমার জানবার জন্তে ভয়ানক কৌতুহল যে গুরুদেব কি ধরনের লোক, তার অত খাতির, যত্ন, আদর এরা কেন করে, তার পারে জ্যাঠাইমা ও জ্যাঠামশায় পুপাঞ্জলি দেনই বা কেন, তার ফটো বাধিয়েই বা ঘরে রাখা আছে কেন ? এসবের দরুন গুরুদেব সম্বন্ধে আমার মনে এমন একটা অদ্ভুত আগ্রহ ও কৌতুহল জন্মে গিয়েছে যে, তিনি যেখানেই থাকুন, আমি কাছে কাছে আছি সৰ্ব্বদাই—অথচ খুব নিকটে যাইনে! - গুরুদেব মুখে মুখে ধর্মের কথা বলতে লাগলেন । আমি আর একটু এগিয়ে গেলাম ভাল ক’রে শোনবার জন্ত । এ-সব কথা শুনতে আমার বড় ভাল লাগে । একবার কি একটা যোগ উপস্থিত—গঙ্গাস্নানে মহাপুণ্য, সকল পাপ ক্ষয় হয়ে যাবে, স্নান করলেই মুক্তি। পাৰ্ব্বতী শিবকে বললেন–আচ্ছা প্ৰভু, আজ এই যে লক্ষ লক্ষ লোক কাশীতে