পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ 8ჯ সময় তিনি মুখ তুলে আমার দিকে চেয়ে বললেন–জিতু, নিৰ্ম্মলাকে বোলে পানীকে আমি নিয়ে যাব, আমি ওকে ফেলে থাকতে পারবো না-ও আমার কাছে ভাল থাকবে, নিৰ্ম্মলা যেন ' দুঃখ না করে । আমি আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলাম—কে নিৰ্ম্মল! আমি চিনি নে, যিনি বলচেন তিনিই বা কে, কোথা থেকে এসেচেন, কই এ বাড়িতে তো কোনদিন দেখিনি তাকে, পানীকে তিনি এই অস্বত্ব শরীরে কোথায় নিয়ে যাবেন, এসব কথা ভাববার আগেই ছোটকাকীমা ঘরে ঢুকলেন —কিন্তু আরও আশ্চর্যের বিষয় এই যে বিছানার পাশে যিনি বসে আছেন, ছোটকাকীমা যে র্তাকে দেখতে পাচ্চেন, এমন কোনো ভাব দেখলুম না । বিছানায় যিনি বসে ছিলেন তিনি আমায় বললেন–জিতু, নিৰ্ম্মলাকে বল এইবার—আমি চলে যাচ্ছি। আমি কিছু না ভেবে কলের পুতুলের মত চেয়ে বললাম—নিৰ্ম্মলা কে ? ছোট কাকীমা আমার দিকে কটমট ক'রে চেয়ে বললে—কেন, সে খেজে কি দরকার ? তিনি ভাবলেন আমি বুঝি তাকেই জিজ্ঞেস করচি। অন্ত মহিলাটি বিছানা থেকে নেমে ওদিকের দরজা দিয়ে বার হয়ে চলে গেলেন, যাবার সময় আমাকে বললেন—এই তো নিৰ্ম্মল ঘরে এসেচে । আমি বললাম—আপনি কেন বলুন না নিজে ? ততক্ষণ তিনি বার হয়ে চলে গিয়েছেন । ছোটকাকীমা আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছেন । বললেন—কি বকচিস পাগলের মত ? ওদিকে চেয়ে কার সঙ্গে কথা বলচিস ? নিৰ্ম্মলা কে সে খোজে তোমার কি দরকার শুনি ? জ্যাঠাইমা ঘরে ঢুকলেন সেই সময়ই । তিনি বললেন, কি হয়েচে, কি বলচে ও ? ছোটকাকীমা বললেন—আপন মনে কি বকচে দ্যাথো না দিদি—ও এ ঘর থেকে চলে যাক । আমার ভয় করে, ও ছেলের মাথার ঠিক নেই—আমার নাম ক’রে কি বলচে । জ্যাঠাইম বললেন--কি বলছিলি কাকীমার নাম করে ? আমার বিস্ময় তখনো কাটেনি—আমি তখন কেমন হয়ে গিয়েচি । ছোটকাকীমার নাম যে নিৰ্ম্মলা আমি তা কখনও শুনিনি—ঐ মেয়েটি যে চলে গেল, আমার সঙ্গে কথা বলে গেল— ছোটকাকীমা তাকে দেখতে পেলেন না, তার কথাও শুনতে পেলেন না এই বা কেমন ! জ্যাঠাইমার কথার কোনো জবাব আমার মুখ দিয়ে বেরুলো না, আমার মাথা ঘুরে উঠল। তারপর কি যে ঘটল আমি তা জানি না । জ্ঞান হলে দেখি মা আমার মাথা কোলে নিয়ে বসে কাদচেন। আমি দালানেই শুয়ে আছি । চারিপাশে বাড়ির অনেক মেয়ে জড় হয়েচে, সবাই বললে আমার মৃগীরোগ আছে । ভাবলাম হয়ত হবে, একেই বোধ হয় মৃগীরোগ বলে । আমার বড় ভয় হ’ল, বাবা মারা গিয়েচেন পাগল হয়ে, এ-বাড়ির অনেকের মুখে শুনেছি আমরাও পাগল হতে পারি। তার মধ্যে আমার নাকি পাগলের লক্ষণ আছে অনেক । সে-সন্ধ্যার কথা কখনও ভুলব না। জীবনে এত ভয় আমার কোনদিন হয়নি—এই ভেবে ভয় হ’ল যে আমার সত্যিই কোন কঠিন রোগ হয়েচে । কিন্তু কাউকে বলবার উপায় নেই রোগটা কি। মৃগীরোগই হয়ত হয়েচে, নয়তো বাবার মত পাগলই হয়ে যাব হয়ত-ন, কি হবে | যে রাত্রে বাবা পাগল হয়ে গিয়ে বালিশের তুলো ছিড়ে ঘরময় ছড়িয়ে দিলেন, কেরোসিনের বি. র. ৪—৪