পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ © ☾ মাঝে মাঝে ভয়ানক ইচ্ছে হয় আবার একবার চা-বাগানের দিকে যাই, আর একবার হিমালয় দেখি । কতকাল রডোডেনড্ৰন ফুল দেখিনি, পাইন-বন দেখিনি, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখিনি—সে রকম শীত আর পাইনি কোনোদিন,—এদের সবাইকে দেখাতে ইচ্ছে হয় সে দেশ। স্কুলে যখন প্রবন্ধ লিখতে দিত, আমি হিমালয় নিয়ে লিখতাম—আমার লেখা সকলের চেয়ে ভাল হ’ত—কারণ বল্যের স্বপ্ন-মাখানো সে ওক পাইন বন, ঝর্ণ, তুষারমণ্ডিত কাঞ্চনজঙ্ঘা, কুয়াশী, মেঘ আমার কাছে পুরনো হবে না কোনো দিন, তাদের কথা লিখতে গেলে নতুনতর ভাব ও ভাষা কোথা থেকে এসে জোটে, মনে হয় আরও লিখি, এখনও সব বলা হয়নি। লেখা অপরে ভাল বললেও আমার মন তৃপ্ত হ’ত না, মনে হ’ত যা দেখেচি তার অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ও আঁকতে পারলাম না—অপরে ভাল বললে কি হবে, তারা তো আর দেখেনি ? ওপারে ব্যারাকপুরে সাদা বাড়িগুলো যেন সবুজের সমুদ্রে ডুবে আছে। ঠিক যেন চ-ঝোপের আড়ালে ম্যানেজার সাহেবের কুঠী—লল টালির ছাদ থাকলেই একেবারে চা-বাগান। ওই দিকে চেয়েই তো রোজ বিকেলে আমার মনে হয় বাল্যের চা-বাগানের সেই দিনগুলো । বাড়ি ফিরে গেলাম সন্ধ্যার পরে । চাকরকে ডেকে বললাম, লুলুঙ্গালে দিয়ে যা। এমন সময়ে ভবেশ এল । ভবেশ সেকেও ইয়ারে পড়ে, খুব বুদ্ধিমান ছেলে, স্কলারশিপ, নিয়ে পাস করেচে—প্রথম দিনেই কলেজে এর সঙ্গে আলাপ হয় । ভবেশের দৈনন্দিন কাজ—রোজ এসে আমার কাছে খৃষ্টান ধৰ্ম্মের নিন্দ করা। আমাকে ও খৃষ্টান ধৰ্ম্মের কবল থেকে উদ্ধার ক’রে নাকি হিন্দু করবেই । আজও সে আরম্ভ করলে, বাইবেলটা নিতান্ত বাজে, আজগুবী গল্প ৷ খৃষ্টান ইউরোপ এষ্ট সেদিনও রক্তে সার। জুনিয়া ভাসিয়ে দিলে গ্রেট ওয়ারে । কিসে তুমি ভুলেচ ? রোজ যাও পিকারিং সাহেবের কাছে ধৰ্ম্মের উপদেশ নিতে । ওরা তো তোমাকে খৃষ্টন করতে পারলে বঁাচে । তা ছাড। আজ হিন্দুদের বলবৃদ্ধি করা আমাদের সবার কৰ্ত্তব্য—এটা কি তোমার মনে হয় না ? আমি বললাম—তুমি ভুল বুঝেছ ভবেশ, তোমাকে এক দিনও বোঝাতে পারলাম না যে আমি খৃষ্টান নই ; খৃষ্টান ধৰ্ম্ম কি জিনিস আমি জানিনে—জানবার কৌতুহল হয় তাই পিকারিং সাহেবের কাছে জানতে চাই । আমি যীশুখৃষ্ট্রের ভক্ত, তাকে আমি মহাপুরুষ বলে মনে করি। তার কথা আমার শুনতে ভাল লাগে । তার জীবন আমাকে মুগ্ধ করে। এতে দোষ কিসের আমি তো বুঝি নে । —ও বটে। বুদ্ধ, চৈতন্ত, কৃষ্ণ, রামকৃষ্ণ, এরা সব ভেসে গেলেন—মীশুখৃষ্ট হ'ল তোমার দেবতা ! এরা কিসে ছোট তোমার যীশুর কাছে জিজ্ঞেস করি ? —কে বলেছে তারা ছোট ? ছোট কি বড় সে কথা তো উঠছে না এখানে ? আমি র্তাদের কথা বেশী জানি নে। যতটুকু জানি তাতে র্তাদের শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এও ত হয় কেউ একজনকে বেশি ভালবাসে আর একজনকে কম ভালবাসে ? —তুমি যতই বোঝাও জিতেন, আমার ও ভাল লাগে না। দেশের মাটির সঙ্গে যোগ নেই ওর। তোমার মত চমৎকার ছেলে যে কেন বিপথে পা দিলে ভেবে ঠিক করতে পারিনে। তোমার লজ্জা করে না একথা বলতে যে, রামকৃষ্ণ, বুদ্ধ, চৈতন্তের কথা কিছু জান না, তাদের কথা জানতে আগ্রহও দেখাও না, অথচ রোজ যাও যীশুখৃষ্ট্রের বিষয় শুনতে ? একশোবার বলবো তুমি বিপথে পা দিয়ে দাড়িয়েচ। কই, একদিন গীত পড়ে? অথচ গসপেল পড়তে যাও পিকারিঙের কাছে—তোমাকে বন্ধু বলি তাই কষ্ট হয়, নইলে তুমি উচ্ছন্ন যাও না, আমি