পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૭૨ বিভূতি-রচনাবলী —দুষ্ট ভুরুর মাঝখানে একটা আগুনের শিখার মত দীপ্তি দেখতে পাই । আমি হতাশ হ’লাম। আমি নিজে তো কত কি দেখি ! এর তো সে-সব কিছু দেখে বলে মনে হয় না। এরা আর কতটুকু দেখেচে তা হ’লে ? পাহাড়ের ওপর বসে আছি এই দেখলেই বা কি হ’ল ? ভুরুর মধ্যে আগুনের শিখা দেখলেই বা কি ? শুনলাম বেল ছাঁটার পরে স্বামীজীর দেখা পাওয়া যাবে। পাশের একটা ঘরে বসে রইলাম থানিকক্ষণ। আরও একজন বৃদ্ধ সেখানে ছিলেন । কথায় কথায় তিনি বললেন—দেখ তো বাবা—এই তোমরাও তো ছেলে । আর আমীর হতচ্ছাড়া ছেলেট পালিয়ে এসে বাড়ি থেকে এই সন্নিসির দলে যোগ দিয়েচে । এখানে তো এই খাওয়া এই থাকা । যাত্রার দলের মত এক ঘরে একশো লোক শোয় । ছেলেটার হাড়ির হাল হয়েচে–আগে একবার ফিরিয়ে নিতে এসেছিলাম--ত যায়নি। এবার আমি আসচি শুনে কোথায় পালিয়েচে হতভাগ। আহা কোথায় থাচ্চে, কি হচ্চে—এদিকে বাড়িতে ওর মা অন্নজল ছেড়েছে। এই সন্নিসির দলই তাকে সরিয়ে রেখেচে কোথায় । আজ তিন দিন এখানে বসে আছি, তা ছোড়া এল না। এরা তলায় তলায় তাকে খবর দিচে । আবার আমার ওপর এদের রাগ কি ? বলচে ছেলে তোমার মুক্তির পথে গিয়েচে, বিষয়ের কীট হয়ে আছে তুমি, আবার ছেলেটাকে কেন তার মধ্যে ঢোকাবে ? শোন কথ। । ওদের এখানে বিনি পয়সার চাকর হাতছাড়া হয়ে যায় তা হ'লে যে ! আমায় এই মারে তো এই মারে । দু-বেলা অপমান করছে। —কোথা থেকে আপনার ছেলে এদের দলে এল ? –এই সন্নিসির দল গেছল আমাদের মাদারিপুরে। খুব কীৰ্ত্তন করে ভিক্ষে ক'রে শিস্যসেবক তৈরি করে বেড়াল ক'দিন । সেখান থেকে ছেলেটাকে ফুসলে নিয়ে এসেচে। পয়সা হাতে থাকত আমার তো ব্যাটার খ্যাতির করত। এখানে খেতে দেয় না ; ওই বাজারের হোটেল থেকে খেয়ে আসি। একটু এই দালানটাতে রাত্রে শুয়ে থাকি ; তাও দু-বেলা বলচে —বেরো এখান থেকে । ছোড়াটা ফিরে আসবে, সেই আশায় আছি । স্বামীজীর সঙ্গে দেখা হ’ল ন । দেখার ইচ্ছেও আর ছিল না। সন্ধার পরে স্টীমারে পার হয়ে বেলুড়ে এলাম ; মনে কত আশা নিয়ে গিয়েছিলাম ওবেলা । মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহার যেখানে ভাল নয়, সেই জ্যাঠাইমাদের বাড়ির গোপীনাথ জিউএর পূজোর সময় যা দেখেচি, হীরষ্ঠাকুরের প্রতি তাদের ব্যবহার যা দেখেচি—সেই সব একই যেন । দিন দুই পরে ছোটবৌঠাকুরুনের বাপের বাড়ি থেকে বড় ভাই তাকে নিতে এল। আমার সঙ্গে দশ-পনের দিন দেখা হয়নি, ভাবলুম যাবার সময় একবার দেখা করবই। দুপুরের পরে ঘোড়ার গাড়িতে জিনিসপত্র ওঠানো হচ্চে, আমি নিজের ঘরের জানলা দিয়ে দেখচি আর ভাবচি ওঠবার সময় গাড়ির কাছে গিয়ে দাড়াব, ন| ওপরে গিয়ে দেখা করে আসব ? পায়ের শব্দে পেছনে চেয়ে দেখি ছোটবৌঠাকুরুন দোরের কাছে দাড়িয়ে, রোগশীর্ণ মুখে, হাতায় লালপাড় বসানো ব্লাউজ গায়ে, পরনে লালপাড় শাড়ী। আমি থতমত খেয়ে বললাম —আপনি ! আমুন, এই টুলটাতে— তিনি মৃদু, সহজ মুরে বললেন—খুব তো এলেন দেখা করতে ! —আমি এখুনি যাচ্ছিলাম, আপনি এলেন তাই, নইলে— ছোটবৌঠাকুরুন স্নান হেসে বললেন—ন, নিজেই এলাম। আর আপনার সঙ্গে কি দেখা হবে ? আপনি তো পরীক্ষা দিয়ে চলে যাবেন । বি. এ পড়বেন না ?