পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ہ/o কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে | দৃষ্টি-প্রদীপে জিতু কতকটা যেন epileptic, মাঝে মাঝে তার মনের খেই হারিয়ে যায়, সে অন্সের অদৃশু নানা দৃশ্ব দেখে, মৃত ব্যক্তির সঙ্গে তার কথাবার্ত হয়। এক কথায় তার অধ্যাত্মদৃষ্টির টর্চ যেন মাঝে মাঝে হঠাৎ জলে ওঠে। এই রকম বলেই তাই বইটির নাম হয়েছে 'দৃষ্টি-প্রদীপ । অপরাজিতয় অপুর এ দৃষ্টিশক্তি যেন বিলুপ্ত। তবে পথের পাচালীতে অবগুই এ দৃষ্টির ইঙ্গিত আছে। “হঠাৎ এক এক দিন ওপারের সবুজ খড়ের জমির শেষে নীল আকাশটা যেখানে আসিয়া দূর গ্রামের সবুজ বনরেখার উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে, সে দিকে চাহিয়া দেখিতেই তাহার মনটা যেন কেমন হইয়া যাইত—সে সব কথা প্রকাশ করিয়া বুঝাইয়৷ বলিতে জনিত, না। শুধু তাহার দিদি ঘাট হইতে উঠিলে সে বলিত—দিদি-দিদি ছাথ, দ্যাথ, ঐদিকে—পরে সে মাঠের শেষের দিকে আঙুল দিয়া দেখাইয়া বলিত—ঐ যে ? ঐ গাছটার পেছনে ? কেমন অনেক দূর, না ? দুর্গ হাসিয়া বলিত—অনেক দূর—তাই দেখাচ্ছিলি ? দুর, তুই একট: পাগল!” _ পথের পাচালী আত্মকথার ভঙ্গিতে যেন পরহস্তের রচনা, অপরাজিত যেন পুরোপুরি পর হস্তের রচনা, দৃষ্টি-প্রদীপ কিন্তু সম্পূর্ণ আত্মকথার ভঙ্গিতে রচিত। এ ভঙ্গি উপন্যাসের বিষয়ের পক্ষে ঠিকই হয়েছে । মোট কথা তিনটি উপন্যাসই লেখকের আত্মকথামূলক এবং আত্মভাবনাসদীপিত। তবে লেখকের অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে দৃষ্টি-প্রদীপ বোধ করি বই তিনটির মধ্যে সব চেয়ে সত্য ঘোষ৷ রচনা। জীবনের পারিপার্শ্বিকের প্রতি ঝোক এবং টান আছে কিন্তু উচ্ছ্বাস নেই, বর্ণনার ঘনঘটাও নেই। দৃষ্টি-প্রদীপের জিতু পথের-পাঁচালীর অপুর মতো আত্মভোলা এবং অপরাজিতর অপুর মতো আত্মবিলাসী নয়। দৃষ্টি-প্রদীপে জিতুর দৃষ্টি অপুর দৃষ্টির তুলনায় অনেকটা স্বচ্ছ। . পরলোক আর ধর্ম আমাদের কাছে প্রায় একই বিষয় । জিতুর দৃষ্টির প্রদীপে যেমন পরলোকের ছবি মাঝে মাঝে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে, তেমনি তার চিন্তার পাকে পাকে ঠাকুরদেবতার ভাবনাও মাথা তুলেছে। একটি মাত্র, এবং সেটি গুরুতর, ছাড়া জিতুর অধ্যাত্ম এষণা দৃষ্টি-প্রদীপ উপন্যাসের কাহিনীর পক্ষে নেহাৎ পাদপুরকের মতো। ব্যতিক্রমটি হল মালতীর বাবার প্রতিষ্ঠিত বৈষ্ণব-আখড়ায় প্রায় বর্ষাকাল যাপন। এই মালতী হল দৃষ্টি-প্রদীপ উপন্যাসের নায়িকাস্থানীয় যদিচ সে গল্পের শেষের দিকে দেখা দিয়ে সমাপ্তির বেশ কিছুকাল আগেই পরলোকের নেপথ্যে চলে গেছে। অপরাজিতর লীলাও অনেকটা তাই, তবে কাহিনীর আদ্যন্ত সে বোপে আছে। লীলাকে পরিপূর্ণভাবে ভালবেসেও অপুর হঠাৎ পাওয়া কিশোরী বধূ অপর্ণাকে ভালোবেসে তাকে নিয়ে ঘর করতে কিছু বাধে নি। দৃষ্টি-প্রদীপের মালতীকে সে ছেড়ে এসেছিল কিন্তু তাকে মুহূর্তের জন্তও ভুলতে পারে নি। তথাচ হিরন্ময়ীকে বিয়ে করতে জিতু খুব ইতস্তত: করে নি। আসল কথা অপু জিতুর মনে প্রবল টান ছিল তেরো-চোদ্দ বছরের কিশোরী মেয়ের দিকে। উদ্ভিয়-যৌবন তরুণীদের সে অবশুই খুব ভালোবাসত, তবে সে ভালোবাসা সৌন্দর্ষের আসক্তি, যেন ভক্তের আরতি ও প্রদক্ষিণ । বেদীর দিকে হাত বাড়াবার মতো ভরসা হত না । ১ । উদাহরণ নিম্প্রয়োজন তবে কোন কোন ব্যাপার প্রথমকার বই দুটিতে বেশি সভাবে বা । যেমন অপু জিতুর কলেজে পড়া। অপু পড়েছিল কলকাতার রিপন কলেজে, জিতু পড়েছিল ঐরামপুরে পারিদের কলেজে। বিভূতিবাবু রিপন কলেজে পড়েছিলেন।