পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত SOఏ পাইয়াছে—কিস্ত মুখে কথা যোগায় কৈ ?•••কত কথা লীলাকে বলিবে ভাবিয়াছিল—এখন লীলাকে কাছে পাইয়া সে-সব কথা মুখ দিয়া তো বাহির হয়ই না—বরং নিতান্ত হাস্যকর বলিয়া মনে হয় । C হঠাৎ লীলা বলিল—হ্যাঁ ভালো কথা, তুমি নাকি বই লিখেছ ? একদিন আমাকে দেখাবে না, কি লিখলে ? আমি জানি তুমি একদিন বড় লেখক হবে, তোমার সেই ছেলেবেলার গল্প লেখার কথা মনে আছে ? তখন থেকেই জানি । 蠱 পরে সে একটা প্রস্তাব করিল। বিমলেন্দর মুখে সে সব শুনিয়াছে, বইওয়ালারা বই লইতে চায় না—ছাপাইতে কত খরচ পড়ে ? এ বই ছাপাইয়া বাহির করিবার সমুদয় খরচ দিতে সে রাজী । অপ্রত্যাশিত আনন্দে অপর সারা শরীরে যেন একটা বিদ্যুতের ঢেউ খেলিয়া গেল । সব খরচ ! যত লাগে ! তবুও আজ সে মুখে কিছু বলিল না। অপর মনে লীলার জন্য একটা করণা ও অনুকল্প জাগিয়া উঠিল, ঠিক পরাতন দিনের মত। লীলারও কত আশা ছিল আটিপট হইবে, ছবি অকিবে, অনভিজ্ঞ তরুণ বয়সে তাহারই মত কত কি সবপ্নের জাল বনিত । এখন শধে নতুন নতুন মোটরগাড়ি কিনিতেছে, সাহেবী দোকানে লেস কিনিয়া বেড়াইতেছে—পরাতন দিনের যজ্ঞেবেদীতে আগন কই, নিভিয়া গিয়াছে। যজ্ঞ কিন্তু অসমাপত। কৃপার পাত্র লীলা ! অভাগিনী লীলা । ঠিক সেই পুরাতন দিনের মত মনটি আছে কিন্তু । তাহাকে সাহায্য করিতে মায়েরপেটের-মমতাময়ী-বোনের মতই হাত বাড়াইয়া দিয়াছে অমনি ৷ আশৈশব তাহার বন্ধ:-- তাহার সবন্ধে অন্ততঃ ওর মনের তারটি খাটি সরেই বাজিল চিরদিন। এখানেও হয়ত কর্ণা, মমতা, অন্যকপা—ওদেরই বাড়িতে না অহার মা ছিল রধিনী, কে জানে হয়তো কোন শুভ মহত্তে তাহার হীনতা, দৈন্য, অসহায় বাল্যজীবন, বড়লোকের মেয়ে লীলার কোমল বাল্য-মনে ঘা দিয়াছিল, সহানুভূতি, কর্ণা, মমতা জাগাইয়াছিল । সকল সত্যকার ভালবাসার মশলা এরাই—এরা যেখানে নাই, ভালবাসা সেখানে মাদকতা আনিতে পারে, মোহ আনিতে পারে, কিন্তু চিরস্থায়িত্বের স্নিগ্ধতা আনে না । সে ভাবিল, লীলার মনটা ভাল বলে সেই সযোগে সবাই ওর টাকা নিচ্ছে । ও বেচারী এখনও মনে সেই ছেলেমানষেটি আছে—আমি ওকে exploit করতে পারব না। দরকার নেই আমার বই-ছাপানোয় । এদিকে মুশকিল। হাতের টাকা ফুরাইল । চাকুরিও জোটে না। মিঃ রায়চৌধুরী অনবরত, ঘরাইতে ও হাঁটাইতে লাগিলেন । অপর যেখানে ছিল সেখানে আবার এরা ম্যাঙ্গানিজের কাজ আরম্ভ করিয়াছেন, আপদ ধরিয়া পড়িল তাহাকে আবার সেখানে পাঠানো হউক । অনেকদিন ঘোরানের পর মিঃ রায়চৌধুরী একদিন প্রস্তাব করিলেন, সে আরও কম টাকা বেতনে সেখানে যাইতে রাজী আছে কি না ? অপমানে অপর চোখে জল আসিল, মাখ রাঙা হইয়া উঠিল। একথা বলিতে উহারা আজ সাহস করিল শধ্যে এইজন্য যে, উহারা জানে যতই কমে হউক না কেন সে সেখানে ফিরিয়া যাইতে রাজী হইবে। অর্থের জন্য নয় -অর্থের জন্য এ অপমান সে সহ্য করবে না নিশ্চয়। কিন্তু--- শরতের প্রথম—নিচের অধিত্যকায় প্রথম আবলুস ফল পাকিতে শরে করিয়াছে বটে, কিন্তু মাথার উপরে পবিতসানার উচ্চস্থানে এখনও বর্ষা শেষ হয় নাই। টেপারী বনে এখনও ফল পাকিয়া হলদে হইয়া আছে, ভালক-দল এখনও সন্ধ্যার পরে টেপারী খাইতে