পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত SOరి বিজ্ঞাপনটা চোখে পড়ল, তাই তো এলাম। তারপর কি খবর বল ? দোকানের আসবাবপত্র দেখে মনে হচ্ছে, অবস্থা ফিরিয়ে ফেলেছ ! o বন্ধ খানিকটা চুপ করিয়া রহিল। খানিকটা এ-গল্প ও-গল্প করিল। পরে বলিল—. এসো, বাসায় এসো । ছোট সাদা রঙের দোতলা বাড়ি, নীচের উঠানে একটা টিনের শেডের তলায় আট-দশটি লোক কি সব জিনিস প্যাক করিতেছে, লেবেল আটিতেছে, অন্যদিকে একটা কল ও চৌবাচ্চা, আর একটা টিনের শেডে গদাম । উপরে উঠিয়াই একটা মাঝারি হলঘর, দু’পাশে দুটো ছোট-ছোট ঘর, বেশ সাজানো । একটা সেঠ টমাসের বড় ক্লক ঘড়ি দালালে টকটক করিতেছে । বন্ধ ডাকিয়া বলিল—ওরে বিন্দ, শোন, তোর মাকে বল, এক্ষুনি দাপেয়ালা চা দিতে । অপ উৎসকভাবে বলিল—তার আগে একবার-বেীঠাকুণের সঙ্গে দেখাটা করি— বিন্দকে বল তাঁকে এদিকে একবার আসতে বলতে ? না কি, এখন অবস্থা ফিরেছে বলে তিনি আর আমার সঙ্গে দেখা করবেন না ? কবিরাজ বন্ধ, মানমখে চুপ করিয়া রহিল –পরে নিম্নসারে অনেকটা যেন আপন মনেই বলিল-—সে আর তোমার সঙ্গে দেখু করবে না ভাই । তাকে আর কোথায় পাবে ? রমলা আর সে দুজনেই ফাঁকি দিয়েছে ! © অপর অবাক মুখে তাহার দিকে চাহিয়া রহিল ! o –এ মাঘে রমলা গেল, পরের শ্রাবণে সে গেল । ওঃ, সে কি সোজা কটগিয়েছে ভাই ? তখন ওদিকে কাবলীর দেনা, এদিকে মহাজনুের দেনা-বাড়িতে যমে-মানষে টানাটানি চলেছে । তোমার কথা কত বলত। এই শ্রাবণে পাঁচ বচ্ছর হয়ে গিয়েছে । তারপর বিয়ে করব, না, করব না,—আজ বছর তিনেক হ'ল বদ্যিবাটীতে— তারপর বন্ধর কথায় নতুন-বেী চা ও খাবার লইয়া অপর সামনেই আসিল । শ্যামবণ", স্বাস্থাবতী, কিশোরী মেয়েটি, চোখ মুখ দেখিয়া মনে হয় খুব চটপটে, চতুর। খাবার খাইতে গিয়া খাবারের দলা যেন অপর গলায় আটকাইয়া যায়। বন্ধটি নিজের কোন কালির বড়ি ও পাতা চায়ের প্যাকেটের খুব বিক্রি ও ব্যবসায়ের দিক হইতে এ-দটি দ্রব্যের সাফল্যের গল্প করিতেছিল । উঠিবার সময় বাহিরে আসিয়া অপর জিজ্ঞাসা করিল—নতুন বৌটি দেখতে তো বেশ, এদিকেও বেশ গণিবতী, না ? —মন্দ না । কিন্তু বড় মুখরা ভাই । আগের তাকে তো জানতে ? সে ছিল ভাল মানুষ । এর পান থেকে চুন খসলেই –কি করি ভাই, আমার ইচ্ছে ছিল না ষে আবার— ফুটপাথে একা পড়িয়াই অপর-মনে পড়িল, পটুয়াটোলার সেই খোলার বাড়ির দরজার প্রদীপ হাতে হাস্যমুখী, নিরাভরণা, দরিদ্র গহলক্ষীকে-আজ ছ'বছর কাটিয়া গেলেও মনে হয় যেন কালকার কথা । so একবিংশ-পরিচ্ছেদ কাজল বড় হইয়া উঠিয়াছে, আজকাল গ্রামের সীতানাথ পণ্ডিত সকালে একবেলা করিয়া পড়াইয়া যান, কিন্তু একটু ঘমেকাতুরে বলিয়া সম্পধ্যার পরে দাদামশাইয়ের অনেক বকুনি সত্বেও সে পড়িতে পারে না, চোখের পাতা যেন জড়াইয়া আসে, অনেক সময় যেখানেসেখানে ঘমোইয়া পড়ে--রাত্রে কেহ যদি ডাকিয়া খাওয়ায়, তবেই খাওয়া হয় । তা ছাড়া, বেশী রাত্রে থাইতে হইলে দাদামশায়ের সঙ্গে বসিয়া খাইতে হয়—সে এক বিপদ ।