পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১২৭ হইল—প্রসন্ন বা সে আজ কেহই ছেলে নয়—আর তাহদের ছেলে বলা চলে না—একথা মনে ছিল না। প্রসন্নর ছেলে-বয়সের মত্ত্বিই মনে আছে কি না ! প্রসন্ন বাড়ি নাই, জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল সে আজকাল চার-পাঁচটি ছেলেমেয়ের বাপ । স্কুলটা কোথায় ছিল সে চিনিতে পারিল না। একজন লোককে বলিল—মশায়, এখানে শুভকরী পাঠশালা’ বলে একটা কুল কোথায় ছিল জানেন ? —শভঙ্করী পাঠশালা ? কৈ না, আমি তো এই গলিতে দশ বছর অাছি— —তাতে হবে না, সম্ভবত বাইশ-তেইশ বছর আগেকার কথা । —ও, বসাক মশায়, বসাক মশায়, আসনে একবারটি এদিকে । ওকে জিজ্ঞেস করন, ইনি চল্লিশ বছরের খবর বলতে পারবেন । বসাক মশায় প্রশ্ন শনিয়া বলিলেন - বিলক্ষণ ! তা আর জানি নে ! ঐ হরগোবিন্দ শেঠের বাড়িতে কুলটা ছিল । ঢুকেই নিচু-মত তো ! দুধারে উচু রোয়াক । অপ বলিল--হা হাঁ ঠিক । সামনে একটা চৌবাচ্চা— --ঠিক ঠিক —আমাদের আনন্দবাবরে স্কুল । আনন্দবাব মারাও গিয়েছেন আজ আঠার-উনিশ বছর । স্কুলও তাঁর সঙ্গে সঙ্গে গিয়েছে । আপনি এসব জানলেন কি করে ? —আমি পড়তুম ছেলেবেলায়। তারপর কাশী থেকে চলে যাই । একটা বাড়ি খুজিয়া বাহির করিল । তাদের বাড়ির মোড়েই । ইহারা তখন শোলার ফুল ও টোপর তেরী করিয়া বেচিত । অপ বাড়িটার মধ্যে ঢুকিয়া গেল। গহিণীকে চিনিল -বলিল, আমায় চিনতে পারেন ? ঐ গলির মধ্যে থাকতুম ছেলেবেলায়— আমার বাবা মারা গেলেন ?—গহিণী চিনিতে পারিলেন । বসিতে দিলেন, বলিলেন—তোমার মা কেমন আছেন ? অপর বলিল—তাহার মা বfচয়া নাই । —আহা ! বড় ভালমানুষ ছিল ! তোমার মার হাতে সোডার বোতল খলতে গিয়ে হাত কেটে গিয়েছিল মনে আছে ? অপম হাসিয়া বলিল—খব মনে আছে, বাবার অসখের সময় ! গহিণীর ডাকে একটি বত্রিশ-তেত্রিশ বছরের বিধবা মেয়ে আসিল । বলিলেন—একে মনে আছে ?-- —আপনার মেয়ে না ? উনি কি জন্যে রোজ বিকেলে জানলার ধারে খাটে শময়ে কদিতেন ! তা মনে আছে । —ঠিক বাবা, – তোমার সব মনে আছে দেখছি । আমার প্রথম ছেলে তখন বছরখানেক মারা গিয়েছে—তোমরা যখন এখানে এলে । তার জনোই কদিত । আহা, সে ছেলে আজ বচিলে চল্লিশ বছর বয়েস হ'ত । क्ल একবার মণিকণিকার ঘাটে গেল । পিতার নশ্বর দেহের রেণ-মেশানো পবিত্র মণিকণিকা । বৈকালে বহনক্ষণ দশাশ্বমেধ ঘাটে বসিয়া কাটাইল । ঐ সেই শীতলা মন্দির-ওরই সামনে বাবার কথকতা হইত সে-সব দিনে—সঙ্গে সঙ্গে সেই বন্ধ বাঙাল কথক ঠাকুরের কথা মনে হইয়া অপর মন উদাস হইয়া গেল। কোন জাদুবলে তাহার বালকহদয়ের দপ্ল’ভ স্নেহটুকু সেই বন্ধ চুরি করিয়াছিল - এখন এতকাল পরেও তাহার উপর অপর সে স্নেহ অক্ষণ আছে -আজ তাহা সে বঝিল । পরদিন সকালে দশাশ্বমেধ ঘাটে সে স্নান করিতে নামিতেছে, হঠাৎ তাহার চোখে পড়িল