পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরাজিত ১৬১ সেটার পাশ দিয়াও গেল। বহুকাল এইদিকে আসে নাই । গলির মখে একটা গ্যাসপোস্টের কাছে সে চুপ করিয়া খানিকক্ষণ দাঁড়াইয়া রহিল— · একটি ছিপছিপে চেহারার উনিশ কুড়ি বছরের পাড়াগাঁয়ের যুবক সামনের ফুটপাতে হাঁ করিয়া দাঁড়াইয়া আছে—কিছু মুখচোরা,কিছু নিবোধ—বোধহয় নতুন কলিকাতায় আসিয়াছে —বোধ হয় পেট ভরিয়া খাইতে পায় নাই—ক্ষুধাশীণ মুখ–আপ ওকে চেনে—ওর নাম অপঘব* রায় –তেরো বছর আগে ও এই গলিটার মধ্যে একতলা বাড়িটাতে থাকিত । এক মঠো হোটেলের রান্না ভাত-ডালের জন্য হোটেলওয়ালার কত মখে-নাড়া সহ্য করিত—মায়ের সঙ্গে দেখা করিবার প্রত্যাশায় পাঁচিলের গায়ে দাগ কাটিয়া ছয়টির আর কতদিন বাকি হিসাব রাখিত। দাগগুলি জামরুল গাছটার পাশে লোনাধরা পচিলের গায়ে আজও হয় তো আছে। সন্ধ্যার অন্ধকারে গ্যাস জলিয়া উঠার সঙ্গে সঙ্গে যুবকের ছবি মিলাইয়া গেল।-- বাসায় নিজান ছাদে একা আসিয়া বসিল । মনে কি অদ্ভুত ভাব !—কি অদ্ভুত অনুভূতি --নবমীর জ্যোৎসনা উঠিয়াছে—কেমন সব কথা মনে উঠে—বিচিত্র সব কথা— বসিয়া মসিয়া ভাবে, এই রকম জ্যোৎসনা আজ উঠিয়াছে তাদের মনসাপোতার বাড়িতে, নাগপরের বনে তার সেই বাংলোর সামনের মাঠে, বালে সেই একটিবার গিয়াছিল লক্ষণ মহাজনের বাড়ি, তাদের উঠানে পাশে সেই পকুর-পড়টাতে, নিশ্চিন্দিপুরের পোড়োভিটাতে, অপণা ও সে বশ.রবাড়ির যে ঘরটাতেশ,ইত—তারই জানালার গায়ে—চাঁপদানীতে পটেশ্বরীদের বাড়ির উঠানে—দেওয়ানপরের পোডিংয়ের কম্পাউণ্ডে, জীবনের সহিত জড়ানো এই সব স্হানের কথা ভাবিতেই জীবনের বিচিত্রতা, প্রগাঢ় রহস্য তাহাকে অভিভূত করিয়া ফেলিল--- এবার কলিকাতা হইতে বাড়ি ফিরিবার সময় মাঝেরপাড়া স্টেশনে নামিয়া অপ; আর হাঁটিয়া বাড়ি যাইতে পারিল না—খোকাকে আজ দেড়মাস দেখে নাই—ছ’ক্লোশ রাস্তা পায়ে হাঁটিয়া বাড়ি পৌছতে সন্ধ্যা হইয়া যাইবে—খোকার জন্য মন এত অধীর হইয়া উঠিয়াছে যে, এত দেরি করা একেবারে অসম্ভব ।-বাবার কথা মনে হইল—বাবাও ঠিক তাকে দেখিবার জন্য, দিদিকে দেখিবার জন্য এমনি ব্যস্ত হইয়া উঠিতেন—প্রবাস হইতে ফিরিবার পথে, তাদের বাল্যে । আজকাল পিতৃহৃদয়ের এসব কাহিনী সে বুঝিয়াছে—কিস্ত তখন তো হাঁটিয়া যাওয়া ছাড়া পন্থা ছিল না, এখন আর সেদিন নাই, মোটরবাসে এক ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিশিদপুর । যা একটু দেরি সে কেবল বেলবতীর খেয়াঘাটে । গ্রামে পে'ছিতে অপর প্রায় বেলা তিনটা বাজিয়া গেল । সন্ধ্যার কিছর পর্বে মাদর পাতিয়া রাণ দিদের রোয়াকে ছেলেকে লইয়া বসিল । লীলা আসিল, রাণ আসিল, ও-বাড়ির রাজলক্ষী আসিয়া বসিল । রাণীদের বাড়ির চারিধারে হেমন্ত অপরায় ঘনাইয়াছে—নানা লতাপাতায় সগন্ধ উঠতেছে" কি অদ্ভুত ধরণের সোনালী রোদ এই হেমন্ত বৈকালের l আকাশ ঘন নীল—তার তলে রাণ দিদের বাড়ির পিছনের বাঁশঝাড়ে সোনালী সড়কের মত বাঁশের সচালো ডগায় রাঙ্গা রোদ মাখানো, কোনটার উপর ফিঙে পাখি বসিয়া আছে—বাদাড়ের দল বাসায় ফিরিতেছে । ...পচিলের পাশের বনে এক-একটা আমড়া গাছে থোলো থোলো কাঁচা আমড়া । সন্ধ্যার শাঁক বাজিল । জগতের কি অপদেব" রপ ।- "আবার অপর মনে হয়, এদের পেছনে কোথায় আর একটা অসাধারণ জগৎ আছে—ওই বাঁশবনের মাথার উপরকার সিদরে মেঘভরা আকাশ, বাঁশের সোনালী সড়কির আগায় বসা ফিঙে-পাখির দলনি—সেই অপব্ব", অচিন্ত্য জগৎটার সীমানায় মনকে লইয়া গিয়া ফেলে। সন্ধ্যার শীক কি তাদের পোড়ো दिः नि. ७-SS