পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/১৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬8 বিভূতি-রচনাবলী কখনও বা বৈষম্য—সবটা মিলিয়া অপর্বে রসসন্টি-ব্যহত্তর জীবনসটির আট’ ছ’হাজার বছর আগে হয়ত সে জমিয়াছিল প্রাচীন ঈজিপ্টে—সেখানে নলখাগড়া .প্যাপিরাসের বনে, নীলনদের রৌদ্রদীপ্ত তটে কোন দরিদুঘরের মা বোন বাপ ভাই বন্ধুবান্ধবদের দলে কবে সে এক মধর শৈশব কাটাইয়া গিয়াছে—আবার হয়ত জন্ম নিয়াছিল রাইন নদীর ধারে—কুক'-ওক বাচ ও বীচ বনের শ্যামল ছায়ায় বনেদী ঘরের প্রাচীন প্রাসাদে, মধ্যযুগের আড়ম্বরপণ আবহাওয়ায়, সুন্দরমুখ সখীদের দলে । হাজার বছর পর আবার হয়ত সে পৃথিবীতে ফিরিয়া আসিবে—তখন কি মনে পড়িবে এবারকারের এই জীবনটা ?—কিংবা কে জানে আর হয়তো এ পথিবীতে আসিবে না—ওই যে বটগাছের সারির মাথায় সন্ধ্যার ক্ষীণ প্রথম তারকাটি—ওদের জগতে অজানা জীবন-ধারার মধ্যে হয়ত এবার নবজন্ম । কতবার যেন সে আসিয়াছে’- জন্ম হইতে জন্মান্তরে, মৃত্যু হইতে মৃত্যুর মধ্য দিয়া---বহ, বহু দরে অতীতে ও ভবিষ্যতে বিস্তৃত সে পথটা যেন বেশ দেখিতে পাইল-“কত নিশ্চিন্দিপুর, কত অপর্ণা, কত দুগ দিদি—জীবনের ও জন্মমৃত্যুর বীথিপথ বাহিয়া ক্লান্ত ও আনন্দিত আত্মার যে কি অপরুপ অভিযান—শ,ধ আনন্দে, যৌবনে, জীবনে, পণ্যে ও দুঃখে, শোকে ও শান্তিতে “এই সবটা লইয়া যে আসল ব হত্তর জীবন—পথিবীর জীবনটুকু যার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র—তার স্বপ্ন যে শুধই কল্পনা-বিলাস এ যে হয় না তা কে জানে—বহত্তর জীবনচক্ল কোন দেবতার হাতে আবৰ্ত্তিত হয় কে জানে ?--"হয়ত এমন সব প্রাণী আছেন যাঁরা মানুষের মত ছবিতে, উপন্যাসে, কবিতায় নিজেদের শিল্পসটির আকাঙ্ক্ষা পণ করেন না–তাঁরা এক এক বিশ্ব সন্টি করেন—তার মানয়ের সখে-দুঃখে উখানে-পতনে আত্মপ্রকাশকরাই তাঁদের পদ্ধতি—কোন মহান বিবর্তনের জীব তাঁর চিন্তনীয় কলাকুশলতাকে গ্রহে গ্রহে নক্ষত্রে নক্ষত্রে এ-রকম রূপ দিয়াছেন—কে তাঁকে জানে ?” একটি অবর্ণনীয় আনন্দে, আশায়, অনভূতিতে, রহস্যে মন ভরিয়া উঠিল । প্রাণবন্ত তার আশা, সে অমর ও অনন্ত জীবনের বাণী বনলতার রৌদ্রদগধ শাখাপত্রের তিওঁ গন্ধ আনে —নীলশন্যে বালিহাঁসের সাঁই সাঁই রব শোনায় । সে জীবনের অধিকার হইতে তাহাকে কাহারও বঞ্চনা করিবার শক্তি নাই—তার মনে হইল সে দীন নয়, দুঃখী নয়, তুচ্ছ নয়— ওটুকু শেষ নয়, এখানে আরম্ভও নয় । সে জন্মজন্মান্তরের পথিক আত্মা, দরে হইতে কোন সদরের নিত্য নতন পথহীন পথে তার গতি, এই বিপল নীল আকাশ, অগণ্য জ্যোতিলোক, সপ্তষিমন্ডল, ছায়াপথ, বিশাল অ্যাড্রোমিডা নীহারিকার জগৎ, বহিষাদ পিতৃলোক—এই শত, সহস্ৰ শতাব্দী তার পায়ে-চলার পথ—তার ও সকলের মৃত্যুদ্বারা অস্পষ্ট যে বিরাট জীবনটা নিউটনের মহাসমুদ্রের মত সকলেরই পরোভাগে অক্ষণভাবে বৰ্ত্তমান-নিঃসীম সময় বাহিয়া সে গতি সারা মানবের র্যাগে যাগে বাধাহীন হউক।“ অপর তাহাদের ঘাটের ধারে আসিল । ওইখানটিতে এমন এক সন্ধ্যার অন্ধকারে বনদেবী বিশালাক্ষী স্বরুপ চকুবতীকে দেখা দিয়াছিলেন কতকাল আগে । আজ যদি আবার তাহাকে দেখা দেন । —তুমি কে ? —আমি অপম । —তুমি বড় ভাল ছেলে । তুমি কি বর চাও ? —অন্য কিছুই চাই নে, এ গায়ের বনঝোপ, নদী, মাঠ, বশিবাগানের ছায়ায়, অবোধ, উদগ্রীব, স্বপ্নময় আমার সেই সে দশ বৎসর বয়সের শৈশবটি—তাকে আর একটিবার ফিরিয়ে দেবে দেবী ? “You cnter it by the Ancient way Through Ivory Gate and Golden”...