পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

షెఫీb বিভূতি-রচনাবলী সাতকড়ি চারিদিকে চেয়ে বললেন, থাক, থাক, ওকথা থাক খড়ো । সে-সব কথায় দরকার কি তোমার আমার ? যার ছাগল তার লেজের দিকে সে কাটুক না—বাদ দাও। ওরা হল আজকাল বড়লোক, এদিগরে সাত-আটখানা গাঁয়ের মহাজন হ’ল ওরা। ওদেরই খাতির । টাকার দরকার হলে হারাণ বিশ্বেসের কাছে—কলকাতায় গিয়ে হ্যান্ডনেট” লিখে কােজ না করলে যখন উপায় নেই, তখন তার ছেলে কি করে না করে সে-সব কথার আলোচনা রাস্তায় দাঁড়িয়ে না করাই ভালো । বেলা বেড়েছে। কেদার বাড়ির দিকে রওনা হলেন । পথে প্রভাসের গাড়ির সঙ্গে আবার দেখা—বেজায় ধলো উড়িয়ে আসছে, কেদার এক পাশে দাঁড়ালেন । ধন্লোর পাহাড় সটি করে হন বাজিয়ে মোটরখানা সবেগে পাশ কাটিয়ে চলে গেল, পেট্রল ও গ্যাসের গন্ধ ছড়িয়ে । কেদার ধলোর মধ্যে চোখ মিট মিট করতে করতে প্রশংসমান দস্টিতে সেদিকে চেয়ে রইলেন। সকালে উঠেই সেদিন কেদার খাজনা আদায় করতে যাবার জন্যে তৈরী হচ্ছেন, এমন সময় জগন্নাথ চাটুজে এসে ডাকলে, ওহে কেদার রাজা, বাড়ি আছ নাকি ভায়া ? কেদার বললেন, এসো জগন্নাথ দাদা, বসো । কি মনে করে ? --ওরা সব আসছে, ইট কোথা থেকে নেবে দেখিয়ে দেবে চলো । কেদার বললে, ও আর দেখিয়ে দেওয়া কি, তুমি তো জানো—যেখান থেকে হোক— জগন্নাথ জিভ কেটে বললে, তা কি হয় ভায়া ? তোমার জিনিস না বলে দিলে কি আমরা নিতে পারি ? চলো তুমি । প্রভাস নিজে আসবে এখনি—আরও সব আসছে । —ততক্ষণ বসবে এসো দাদা। ওরে শরৎ, তোর জ্যাঠামশায়ের জন্যে বসবার কিছল দে । শরৎ একখানা পিড়ি পেতে দিয়ে বললে, জ্যাঠামশায় তো এদিকে আসা ছেড়েই দিয়েছেন আজকাল । বসন ভাল হয়ে । চা খাবেন ? জগন্নাথ চাটুজে এক গাল হেসে বললে, তা মা, দে না হয় করে। নিজের বাড়িতে জগন্নাথের চা খাওয়ার পাট নেই কোন কালে, তবে পরের বাড়িতে হলে কোন কিছু খাওয়াতেই আপত্তি নেই জগন্নাথের । কেদার বললেন, তারপর, তোমাদের ইস্কুলের বাড়ি আরম্ভ হবে কবে ? —ঞ্জি নিসপত্র যোগাড় হলেই হবে । প্রভাস টাকা দিলেই আমরা কাজ আরম্ভ করে দিই। একটু তামাক সাজো ভালো করে ভায়া । চা-টা তোমার এখানেই খাওয়া যাক। কিছুক্ষণ পরে শরৎ এসে দ-পেয়ালা চা সামনে রাখল। সে সকালেই স্নান সেরে নিয়েছে, পরনে সরপাড় ফস"া ধতি, একরাশ ভিজে এলো চুল পিঠে ফেলা—গায়ের রং ফুটেছে স্নান করে—লবা পাতলা দেহ, সন্দর ভুর, বড় বড় চোখ—প্রতিমার মত সন্ত্রী। চা নামিয়ে বললে, জ্যাঠামশায়, বসন, একটা জিনিস খাওয়াবো। খাবেন তো ? -कि भा ? —সে এখন বলছি নে ৷ আনি আগে, তখন দেখবেন ? শরৎ একটা পাথরের খোড়া ভতি বাসি পায়েস এনে জগন্নাথের সামনে রাখলে। হাসিমখে বললে, খান। বাবা বড় ভালবাসেন বলে কাল রাত্রে করেছিলাম—তা আজ সকালে অনেকখানি রয়েছে দেখলাম। বাবা চেয়েছিলেন খেতে কিস্ত ও’কে এখন আর দেবো না, দাপরে ভাতের সঙ্গে দেবো বলে রাখলাম খানিকটা । এমন সময় গ্রামের আরও অনেকের সঙ্গে প্রভাসকে দরে আসতে দেখে কেদার বললেন, ও শরৎ, আরও সবাই আসছে । চা আর হবে নাকি ?