পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেদার রাজা $0 তলায় এদিক ওদিক ছড়ানো ভাঙা ঘরবাড়ি ও প্রাচীন দেউলগুলির ধ্বংসস্তাপ সকলকেই বিস্ময়াবিষ্ট করে তুললো। বেতের দাভেদ্য ঝোপের আড়ালে কতদর পয্যন্ত ছড়ানো বড় বড় ইটের স্তপে, পাথরের কড়ি, পাথরের চৌকাঠ, নক্সা করা প্রাচীন ইট, ভাঙা থামের মাথা, সকলেরই মনে বত্তমানের বহন্দরে পিছনকার এক লগু বিস্মত অতীতের রহস্যময় বাত্তা ক্ষণকালের জন্যে বহন করে নিয়ে এল—যাতে জগন্নাথ চাটুজের মত কল্পনাশন্য নিরেট ব্যক্তিকেও বলতে শোনা গেল—বাস্তবিক ! এসব দেখলে মন কেমন করে—কি বলো সত্যুে বাবাজি ? সাতকড়ি ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে বললেন, তা আর করে না ? কিন্তু সকলের চেয়ে বিস্ময়াবিত হয়েছে প্রভাস—তা তার মুখ দেখেই বেশ বোঝা গেল । প্রভাস এ-সব কোনোদিন দেখে নি—বা তাদের গ্রামে যে এরকম আছে তা শনলেও সেটা যে এই ধরণের ব্যাপার তা জানত না । সে বিস্ময়ের সরে বললে, ওঃ এ তো অনেক কাল আগেকার । এ-সব কীৰ্ত্তি ছিল কাদের ? সাতকড়ি বললেন, এই আমার কেদার দাদার পর্বপরলষের—আবার কার ? এরাই গড়শিবপুরের রাজবংশ। কেন তুমি জানতে না বাবাজুি ? যাক দেখে নাও দিকি ক’গাড়ি ইট হবে বা কোন দিক থেকে খড়বে। প্রভাস চুপ করে রইল । জগন্নাথ চাটুতেজ বললে, যেখান থেকে হয় হাজার দশেক ইট আপাততঃ নাও না । কেদার ভায়ার কোনো আপত্তি নেই তো ? কেদার নিবিীকার মানষে—কোনো প্রকার ভাব বা অনুভূতির বালাই নেই তাঁর। তিনি বললেন, না আমার আপত্তি কি ? ইট তো পড়েই রয়েছে । সাতকড়ি বললেন, কিন্তু এ ইটের দাম কিছু দিতে পারবো না কেদার দাদা, তা আগে থেকেই বলে রাখছি । কেদার ক্ষুদ্র মনের পরিচয় কোনোদিন দেন নি—তিনি দিলদরিয়া মেজাজের মানুষ সবাই জানে। বললেন, কিছু বলবার দরকার নেই সে-সব । নিয়ে যাও না ভায়া—আমি কি তোমায় বলেছি দামদস্তুরের কথা ? ইতিপবেও কেদারের অবৈষয়িকতা ও ঔদায্যের সুযোগ নিয়ে পাশ্ববতী" গ্রামের বহর লোক গড়ের ধংসস্তুপ থেকে বিনামল্যে গাড়ি গাড়ি ইট নিয়ে গিয়েছে ঘরবাড়ি তৈরী বা মেরামতের জন্যে—অথকট যথেষ্ট থাকা সত্বেও কেদার কারো কাছে মুল্য চাইতে পারেন নি বা কাউকে বিমুখও করেন নি কোনোদিন, অথচ যেখানে পরোনো ইটের হাজার-করা দর পাঁচ টাকা করে ধরলেও কেদার ইট বিক্রি করেই অন্ততঃ দেড় হাজার টাকা নিট দাম আদায় করতে পারতেন । 釁 কিন্তু তা কখনো করবেন না কেদার। রাজবংশের ছেলে হয়ে পবিপরীষের ভিটের ইট বিক্ৰী করে টাকা রোজগার ? ছিঃ ?”এমনি দেবেন। লোকের উপকার হয়, হোক না । সাতকড়ি বললেন, তা হলে প্রভাস বাবাজি, কাল থেকে লোক লাগিয়ে দিই—কি বল eৈ প্রভাস বললে, বেশ, নিয়ে যান—আমি তো বলেছি কাজ আরম্ভ করন। ক্ষণকালের সে ভাবাস্তর কেটে গিয়েছে সকলের মন থেকেই । এরা অন্য ধাতের মানুষ, প্রত্যক্ষ দন্ট বাস্তব ছাড়া অন্য কোনো জগতের সঙ্গে এদের বিশেষ পরিচয় নেই। কেদার দেখিয়ে দিলেন কোন পথে ইটের গাড়ি আসতে পারে, কারণ তিনি ভিন্ন গড়ের জঙ্গলের অধি-সন্ধি বড় কেউ একটা জানে না। কাজ মিটে গেল । সাতকড়ি বললেন, চলো সবাই জঙ্গলের মধ্যে থেকে বেরিয়ে যাই— মশার কামড়ে মলাম ।