পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৈদার রাজা సీ0& মেয়ে। এতদিন চুল কেটে ফেলতো, শধু আমার ভয়ে পারে না। প্রভাস কিছু কথা খুজে না পেয়ে চুপ করে রইল। কেদারের মনে কেমন একটু সহানুভুতি জাগলো প্রভাসের প্রতি—বেচারী যেন বড়ই লজ্জিত ও অপ্রতিভ হয়ে পড়েছে আংটির বাক্স ফেরত দেওয়ায় । নাঃ, এদের সব ছেলেমানষি কাণ্ড । মেয়ের দিকে চাইতে গিয়ে কেদার দেখলেন শরৎ কখন সেখান থেকে সরে গিয়েছে। ডাকলেন—ও শরৎ, শোনো মা— শরৎ ঘরের ভেতর থেকে জবাব দিলে—কি বাবা ? —হ’্যারে, প্রভাস একটা আংটি দিতে চাচ্ছে তোকে—কি করব ? রাখবি ? শরৎ আড়াল থেকেই বললে—আমি কি জানি ? তুমি যা ভাল বোঝো •••আংটি আমি তো পরি নে—তবে উনি যখন হাতে করে এনেছেন থাক জিনিসটা । কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে শরৎ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে বললে—দেখি ? প্রভাস জিনিসটা কেদারের হাতে দিলে—তিনি মেয়ের হাতে তুলে দিলেন সেটা। প্রভাস শরতের দিকে কৃতজ্ঞ তার দটিতে চেয়ে দেখল—কিন্ত শরৎ তখন বাক্সটি খুলে আংটি নেড়েচেড়ে দেখছে—তার চোখ অন্যদিকে ছিল না। - কেদার হাসিমুখে বললেন—পছন্দ হয়েছে তোর ? তঃ পছন্দ হবার জিনিস বটে। আমি শধ্যে বলছি প্রভাসকে যে এত খরচ করবার কি দরকার ছিল ? এখান থেকে সাত ক্লোশ তফাৎ রাণাঘাটের বাজার। মটোর গাড়ি আছে তাই যেতে পেরেছিলে বাবাজি । প্রভাসের মুখ উজ্জল দেখাচ্ছিল, সে বললে, দিদিকে একটা সামান্য জিনিস দিলাম— এতে খরচপত্রের কি আর—কিছুই না । অতি সামান্য জিনিস– শরৎ বললে, বসন আপনি । আমি খাবার করছি, খেয়ে যাবেন। ততক্ষণ বাবা একটু গলপ করো না প্রভাসবাবর সঙ্গে । কেদার আসলে খুব সন্তুষ্ট নন, তিনি একটু বিরক্তই হয়েছেন প্রভাস আসাতে । বেলা পড়ে আসছে, এখন তাঁর বেরুবার সময়—গে"য়োহাটির আখড়াইয়ের আসরে বেহালা না বাজালে আখড়াই জমবে না, ক্ষেত্র কাপালি বলে গিয়েছে ওবেলা । আর ঠিক এই সময়ে এসে কিনা জটলো প্রভাস ! একে তো মেয়ে বাড়ি থেকে বেরতে দেয় না, তার ওপর যদি প্রতিবেশীরা পয্যন্ত বাদ সাধে, তবে তিনি বাঁচেন কি করে । শরৎ ঘরের মধ্যে চলে গিয়েছে খাবার করতে—কেদার আর কিছুক্ষণ বসে প্রভাসের সঙ্গে অন্যমনসকভাবে একথা ওকথা বললেন । স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছিল তাঁর মন নেই কথাবাত্তার দিকে—গেয়োহাটিতে একটা ছিটের বেড়ার দেওয়াল দেওয়া চালাঘরে এতক্ষণ কত লোক জটেছে—সবাই তাঁর আগমন-পথের দিকে উদ্বিগ্ন দটিতে চেয়ে আছে—তিনি না গেলে আখড়াইয়ের আসর একেবারে মাটি । বেলা বেশ পড়ে এসেছে। এখান থেকে দেড় ক্লোশ রাস্তা গেয়োহাটি—অনেক দরে । হঠাৎ তিনি উঠে পড়ে বললেন, মা, প্রভাস বাবাজি রইলেন বসে। তুমি খাবার করে খাইয়ে দিও। আমার বিশেষ দরকার আছে—গেয়োহাটিতে খাজনার তাগাদা আছে । প্রভাসের দিকে চেয়ে বললেন—বোস তুমি বাবাজি, কিছ মনে কোরো না— মেয়েকে কোনো রকম প্রতিবাদের সংযোগ না দিয়েই তিনি দাওয়া থেকে নেমে উঠোন পার হয়ে ভাঙা দেউড়ির দিকে হন হন করেই হটিতে শরে করলেন। অনেক সময় এ-রকম ক্ষেত্রে মেয়ে ছটে এসে পথ আটকায়—প বের অভিজ্ঞতা থেকে কেদার এ জানেন কি না । শরৎ রান্নাঘর থেকে চে'চিয়ে বললে, যেও না বাবা-শোনো বাবা—খেয়ে যাও খাবার