পাতা:বিভূতি রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড).djvu/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২১o বিভূতি-রচনাবলী তিনি আবার ডাক দিলেন—ও শরৎ—মা আমার ওঠো—এই যে আমি বাড়ি এইচি— ও মা—ওঠো, লক্ষী-মা আমার—বুঝলি ? উঠে চোখে জল দে দিকি ? ঘুম কেটে যাবে qəqə |-- শরৎ এবার সত্যিই উঠল । কেদার বললেন, যা চোখে জল দিয়ে আয়—তোর যা ঘমে । রাত আর এমন কি হয়েছে ? এই তো সবে রাত দশটার গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল, যখন গড়ের খাল পার হই । শরৎ বাবাকে খাবার ঠাঁই করে দিয়ে ভাত বাড়তে বসল। খানিকটা পরে খাওয়াদাওয়া সেরে কেদার তামাক খেতে খেতে বললেন—ভাল কথা, প্রভাস কখন গেল রে ? বেশ ছেলেটি । ওকে এবার একদিন নেমস্তন্ন করে খাওয়াতে হবে । তোরও একটা কিছদ দেওয়া উচিত । —কি দেব বাবা ? আমিও তা ভেবেছি । —একটা কিছল বনে-টুনে দে না । আসন-টাসন গোছের । শধে হাতে কারো কাছে কিছ নিতে নেই তো ? দিস একটা কিছু করে । আংটিটা কই দেখি ? শরৎ মদ হাসিমুখে বললে, সে নেই বাবা । কেদার অবাক হয়ে মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে বললেন, নেই ! কি হ’ল ? শরৎ মুখ নিচু করে হাসি-হাসি মুখেই বললে, সে বাবা আমি দীঘির জলে ফেলে দিয়ে এসেছি । রাগ করো নি বাবা ! —সে কি রে ? কখন ? —উত্তর দেউলে পিদিম দিতে যাওয়ার সময় । কি হবে বাবা বিধবা মানুষের হীরের আংটি পরে ? কেদার মেয়ের সঙ্গে তক করলেন না । মেয়েকে চিনতে তাঁর বাকী নেই । সুতরাং তিনি চুপ করে রইলেন। কেবল তাঁর মনে দুঃখ হচ্ছিল অমন দামী আংটিটা যদি রাখবিই নে বাপ, তবে সে বেচারীর কাছ থেকে নেওয়া কেন ? এমন খামখেয়ালি মেয়ে ! দপরে রাজলক্ষী এল শরতের কাছে । কেদার খেয়ে হাট করতে বেরিয়ে গিয়েছেন— আজ গেয়োহাটির হাটবার । রাজলক্ষসী দেখতে বেশ মেয়েটি । নিতান্ত পাড়াগে"য়ে, কখনো শহরের মুখ দেখে নি, তবে শহরের কথা অনেক জানে। তার দুই মামাতো ভগ্নীপতি এখানে মাঝে মাঝে আসে । কলকাতায় কাজ করে তারা—শহরের অনেক গলপ সে শুনেছে ওদের মুখে । রাজলক্ষী বললে, হাঁ শরৎদি, প্রভাসবাব বুঝি কাল বিকেলে তোমাদের বাড়ি এসেছিল ? কি বললে ? —বলবে আর কি, ধৈকেলে এসেছিল, সন্দের আগে চলে গেল। গল্পগুজব করলে বসে —চা করে দিলাম। বেশ লোক প্রভাসদা । আমাদের বলেছে এক দিন কলকাতায় নিয়ে যাবে—বাবাকে আর আমাকে । —কবে শরৎ দিদি 2 —তার কিছু ঠিক আছে ? তবে প্রভাসদা বলেছে যেদিন আমি মনে করবো সেদিনই নিয়ে যাবে । —রেলে ? —না, মটোর গাড়িতে । এখান থেকে সমস্ত পথ মটোরে যাবে—কেমন মজা হবে, কি বলিস ? তুই চড়েছিস কখনো মটোর গাড়িতে ? to